শিরোনাম
সাও পাওলো, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ (বাসস/এএফপি) : মাত্র ১৭ বছর বয়সেই ব্রাজিলিয়ান আইকন পেলের পাশাপাশি নেইমারের সাথে যাকে তুলনায় করা হচ্ছে সে আর কেউ নন, এনড্রিক। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের আগামী প্রজন্মের বড় একটি ভরসার জায়গা ইতোমধ্যেই দখল করে নিয়েছেন এই টিনএজার। যদিও এখনই এত বড় কিছু চিন্তা করার ব্যপারে মোটেই ভাবছেন না এনড্রিক।
সাও পাওলোর ক্লাব পালমেইরাসকে টানা দ্বিতীয় ব্রাজিলিয়ান লিগ শিরোপা জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এনড্রিক। আগামী বছর ১৮ বছর বয়সে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে যাচ্ছেন। তরুণ এই ফরোয়ার্ড এএফপির সাথে এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘আমি জানি পেলের পা ছোঁয়ার যোগ্যও কেউ কোনদিন হতে পারবে না। সে ফুটবলের রাজা। আমি শুধুমাত্র এনড্রিকই হতে চাই। আমি সবাইকে আমাকেই জানাতে চাই।’
১৬ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক এনড্রিকের। তখন থেকেই তিনি দেখিয়ে যাচ্ছেন বল পায়ে কতটা জমাট, ক্ষিপ্র ও চতুর। পেশাদার ফুটবলে দুই মৌসুম খেলেই পালমেইরাসের হয়ে দুবার ব্রাজিলের শীর্ষ লিগ জিতেছেন। শুধু লিগই নয়, ব্রাজিলিয়ান সুপার কাপ ও সাও পাওলো রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপও জেতা হয়ে গেছে এনড্রিকের। ১৯৯৪ সালে কিংবদন্তী রোনালডোর পর গতমাসে সবচেয়ে কম বয়সে ব্রাজিল জাতীয় দলেও ডাক পান এনড্রিক।
গত বছর ৬৫ মিলিয়ান মার্কিন ডলারে রিয়াল মাদ্রিদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন এনড্রিক। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে একটি কঠিন সময়ে তিনি এসেছে। পাঁচ বারের বিশ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ২০০২ সালের পর আর বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি।
নেইমার ও তার সতীর্থরা টানা তিনটি বিশ্বকাপে ব্যর্থ হয়েছেন ব্রাজিলিয়ানদের ‘হেক্সা’ উপহার দিতে। ২০২৬ বিশ্বকাপেও বাছাইপর্বের বাজে সময় যাচ্ছে সেলেসাওদের। ১০ দলের ডাবল লিগ পদ্ধতির কনমেবল অঞ্চলের বাছাইপর্বে এই মুহূর্তে ব্রাজিল আছে ছয় নম্বর অবস্থানে। টানা তিনটি ম্যাচ হেরেছে দলটি। তাতে বড় এক কলঙ্কের দাগও লেগে গেছে ব্রাজিল ফুটবলে। গত মাসে মারাকানায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার কাছে হারটা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ইতিহাসে ঘরের মাঠে ব্রাজিলের প্রথম হার।
দলটির অন্তর্বর্তীকালীন কোচ ফার্নান্দো দিনিজের ওপর চাপ শুধু বাড়ছেই। এনড্রিককে প্রথম একাদশে রাখার দাবি উঠেছে, দাবি উঠেছে রোনালডো ও তোস্তাওয়ের মতো সাবেক তারকারা যে ৯ নম্বর জার্সি পরতেন, সেই ৯ নম্বর জার্সিটা এনড্রিককে দেওয়ার। তবে এএফপিকে এনড্রিক বলেছে জার্সি নাম্বারে কিছু আসে যায় না, ‘অনেক খেলোয়াড়ই জাতীয় দলে ৯ নম্বর জার্সিটা চায়। আমি আমার নাম্বার নিয়ে ভাবি না। আমি শুধু দলে থাকতে চাই ও খেলতে চাই।’
আগামী বছর জুলাইয়ে রিয়ালে যোগ দিতে যাচ্ছেন এনড্রিক। ইতোমধ্যেই তিনি জেনে গেছেন চাপের মধ্যে কিভাবে খেলতে হয়। ২০২২ সালে অভিষেক মৌসুমে এনড্রিক সাত ম্যাচে তিন গোল করেছিলেন। তার অবদানে পালমেইরাস লিগ শিরোপা জয় করে। এ বছর পুরো মৌসুমে মাঠে থেকে তিনি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। প্রথম ১৯ ম্যাচে অবশ্য তিনি মাত্র চার গোল করেছিলেন। এক সময় তিনি গোল খরায় মাঠ ছাড়তে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন। কঠিন ঐ সময়গুলোর কথা মনে করে এনড্রিক বলেন, ‘মৌসুমের শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি। এরপর আমি নিজেকে কিছুটা পরিবর্তন করা শুরু করি। তখনই বুঝতে পারি আমি কিছুটা সন্তুষ্ট। আমি দলকে শিরোপা জয়ে সহযোগিতা করেছি। আশা করছি আগামী বছরও এই ধারাবাকিহতা ধরে রাখতে পারবো।’
নিজেকে বদলে ফেরার মূলমন্ত্র কি সেটিও বলেছেন এনড্রিক। এনড্রিক এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে কী লেখা হয়, সেগুলো পড়েন না। এর বদলে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে সময় কাটান। দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক অনুশীলনের বাইরেও আলাদাভাবে অনুশীলন শুরু করেছেন, শুরু করেছেন ইংলিশ ও স্প্যানিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাসে যাওয়াও। ফলটা সাথে সাথেই পেয়েছেন এনড্রিক। গোল করতে শুরু করেছেন। আর পালমেইরাসও টেনশনের সময়গুলো পেরিয়ে বোতাফোগোকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লিগে।
দলের সাফল্যে বড় ভূমিকা রাখলেও এনড্রিক সেটিকে খুব বড় করে দেখতে রাজি নন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘অনেকে বলে আমিই নায়ক, তবে আমি সে রকম ভাবি না। আমার কাছে পুরো দলই নায়ক। আমি শুধু ভালো লাগার ক্লাবটিকে সাহায্য করতে পেরেই খুশি।’
নার্ভাসনেসের কারনে মাদ্রিদে যাওয়া নিয়েও খুব একটা ভাবেন না বলেও জানালেন এনড্রিক। স্পেনে তার ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ ভিনিসিয়াস জুনিয়র যে বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন, সে বিষয়েও খুব ভালো জানা আছে তার। তবে ব্রাজিলেও যে তিনি বর্ণবাদের আঁচ পেয়েছেন, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘আমি এ নিয়ে বেশি ভাবতে চাইনি। আমি শুধু খেলা চালিয়ে গেছি। আমি শুধু তাই করতে চেয়েছি, যা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে- ফুটবল খেলা।’