শিরোনাম
পার্থ, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ (বাসস/এএফপি) : কাল পার্থে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ দিয়ে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের বিদায়ী টেস্ট সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। ঘরের মাঠ সিডনিতে এই সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষনা আগেই দিয়েছিলেন ৩৭ বছর বয়সী ওয়ার্নার। এজন্য পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতে লাল বলে ওয়ার্নারের বিদায়টা স্মরনীয় করে রাখতে চায় অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কখনও টেস্ট সিরিজ জিততে না পারার বন্ধ্যাত্ব এবার ঘোচাতে মরিয়া পাকিস্তান। পার্থে বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শুরু হবে সিরিজের প্রথম টেস্ট।
এক দশকেরও বেশি সময় যাবত অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম ভরসা ওয়ার্নার। কিন্তু টেস্টে তার সাম্প্রতিক বাজে ফর্ম সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে টেস্টে মাত্র ১টি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
তবে ওয়ার্নারের বিদায়ী টেস্ট সিরিজের আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারই সাবেক সতীর্থ পেসার মিচেল জনসন। ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় কেপটাউন টেস্টে বল টেম্পারিংয়ের সাথে ওয়ার্নারের জড়িত থাকার ঘটনা তুলে ধরেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার একটি পত্রিকার কলামে জনসন লিখেন, ‘ওয়ার্নারের বিদায়ী টেস্ট কেন এতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফর্ম নিয়ে ধুঁকতে থাকা খেলোয়াড়কে কেন রাজকীয় বিদায় দিতে হবে, কেউ কি বলতে পারেন?
পার্থে প্রথম টেস্টের জন্য অস্ট্রেলিয়া দল ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি বলেছিলেন, দলে জায়গা অর্জন করেছেন ওয়ার্নার।
কিন্তু প্রথম টেস্টে বড় স্কোর করার নিশ্চয়তা না থাকলেও সিডনিতে আবেগঘন বিদায় নিতে হলে ওয়ার্নারকে অবশ্যই রান করার চাপ মোকাবেলা করতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ার কোচ এন্ড্র ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘প্রথম টেস্টে ওয়ার্নার খেলতে যাচ্ছে এবং এখান থেকেই আমরা শুরু করতে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অন্য কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকবে। আমি মনে করি, তার দলে থাকার বিষয়টি আলোচনায় থাকবে।’
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াই পাকিস্তানের বিপক্ষে স্পস্টভাবে ফেবারিট
এ বছরটি স্বপ্নের মত কাটচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার। এ বছর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি জয়, অ্যাশেজ সিরিজ ধরে রাখার পর গত মাসেই রেকর্ড ষষ্ঠবারের মত ওয়ানডে বিশ^কাপের শিরোপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ^কাপে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ওয়ার্নার।
১৯৬৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শুরুর পর এখন পর্যন্ত মাত্র ৪টি টেস্ট জিতেছে পাকিস্তান। ১৯৯৫ সালে নভেম্বরে সর্বশেষ জয়ের স্বাদ পেয়েছিলো উপমহাদেশের দলটি। সিডনিতে ঐ টেস্ট ৭৪ রানে জিতেছিলো পাকিস্তান। সর্বশেষ ১৪ ম্যাচের সবগুলোতেই হেরেছে তারা। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১২টি সিরিজ খেলে একবারও জিততে পারেনি পাকিস্তান।
ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘ পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্টে অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং তাদেও কাছ থেকে আমরা ভাল প্রতিদ্বন্দিতা আশা করছি। তবে নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারলে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের ধারা অব্যাহত সম্ভব।’
২০১৯ সালে সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট ২-০ ব্যবধানে হেরেছিলো পাকিস্তান। ব্রিজবেনে প্রথম টেস্টে ইনিংস ও পাঁচ রানে এবং অ্যাডিলেডে ইনিংস ও ৪৮ রানে হারের লজ্জা পায় পাকরা। দুই টেস্টে যথাক্রমে- ১৫৪ এবং অপরাজিত ৩৩৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ওয়ার্নার।
ওয়ার্নার ছাড়াও কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউড এবং নাথান লিঁওর মত বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বোলিং আক্রমণকে সামলাতে হবে পাকিস্তানকে।
বিশে^র অষ্টম ও চতুর্থ স্পিনার হিসেবে টেস্টে ৫শ উইকেট শিকারের দ্বারপ্রান্তে লিঁও। আর মাত্র ৪ উইকেট প্রয়োজন ১২২ টেস্ট খেলা লিঁওর। স্পিনার হিসেবে ৫শ বা তার বেশি উইকেট শিকার করেছেন শ্রীলংকার মুত্তিয়া মুরালিধরন, প্রয়াত অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্র্ন এবং ভারতের অনিল কুম্বলে।
পাকিস্তান টিম ডিরেক্টর মোহাম্মদ হাফিজ জানিয়েছেন, শুধুমাত্র প্রতিন্বন্দিতা করতে নয়, পাকিস্তানের লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা অনুশীলনে নিজেদের ভালোভাবেই প্রস্তুত করেছি। দলের সবাই নিজেদের সেরাটা উজার করে দিতে এবং জয়ের জন্য মুখিয়ে আছে।’
তিন ফরম্যাট থেকে বাবর আজম সরে যাবার পর টেস্ট অধিনায়কত্ব পান শান মাসুদ। দলে বেশ কিছু নতুন মুখও রয়েছে।
পাকিস্তানের এই দলের মধ্যে শুধুমাত্র বাবর ও শাহিন শাহ আফ্রিদির অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলার অভিজ্ঞতা আছে।
নতুন মুখ হিসেবে দলে আছেন পেসার খুররম শাহজাদ, ড্যাশিং বাঁ-হাতি ব্যাটার সাইম আইযুব এবং অলরাউন্ডার আমির জামাল।
প্রথম টেস্টের পর ২৬ ডিসেম্বর মেলবোর্নে দ্বিতীয় এবং ৩ জানুয়ারি সিডনিতে তৃতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু করবে দু’দল।
পাকিস্তান দল : শান মাসুদ (অধিনায়ক), আমির জামাল, আবদুল্লাহ শফিক, সাজিদ খান, বাবর আজম, ফাহিম আশরাফ, হাসান আলী, ইমাম-উল-হক, খুররম শাহজাদ, মীর হামজা, মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ ওয়াসিম, নোমান আলী, সাইম আইয়ুব, সালমান আগা, সরফরাজ আহমেদ, সৌদ শাকিল ও শাহিন শাহ আফ্রিদি।
অস্ট্রেলিয়া দল : প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাজা, মার্নাস লাবুশেন, স্টিভ স্মিথ, ট্রাভিস হেড, মিচেল মার্শ, অ্যালেক্স ক্যারি, মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড, স্কট বোলান্ড, ক্যামেরন গ্রিন ও ল্যান্স মরিস।