বাসস
  ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:০৬

এবারের নিউজিল্যান্ড সফর ‘সফল’ মনে করছেন হাথুরুসিংহে

মাউন্ট মাউঙ্গানুই, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ (বাসস) : আজই শেষ হওয়া নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার সমান সংখ্যক ম্যাচের  টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। টাইগাররা  দুই ফরম্যাটে কোন সিরিজই জিততে না পারলেও  এবারের সফরকে সফল বলছেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কারন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিউজিল্যান্ডে প্রথমবারের মত জয়ের ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। হাথুরু বলেন, আগের সফরগুলোর চেয়ে এবার ভালো কিছু করতে পারার কারনে এই সফরকে সফল বলবো। এবার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিততে পেরেছে দল।
গেল বছরের আগ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে কখনও কোন ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। গেল বছরের প্রথম দিন মাউন্ট মাউঙ্গানুইতে শুরু হওয়া টেস্ট ৮ উইকেটে জিতে প্রথমবারের মত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয় রচনা করে বাংলাদেশ। এরপর বাকী থাকে, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট। এই দুই ফরম্যাটে হারের বৃত্ত ভাঙার স্বপ্ন নিয়ে এ মাসে নিউজিল্যান্ডে পা রাখে বাংলাদেশ দল।
সফর শুরুর আগ থেকেই এবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ইতিহাস গড়ার কথা বলে আসছিলো বাংলাদেশ দল। ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে শুরু হওয়া সফরের প্রথম দুই ম্যাচে হেরে যায় টাইগাররা। সিরিজ  হাতছাড়া হলেও ইতিহাস গড়ার লক্ষ্য তো হাতছাড়া হয়নি।  সিরিজের শেষ ম্যাচ জিতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মত ওয়ানডে জয়ের নজির গড়ে বাংলাদেশ। কিউইদের আঙ্গিনায় ১৯তম ওয়ানডে ম্যাচে এসে জয়ের স্বাদ পায় টাইগাররা।
সিরিজের শেষ ওয়ানডের জয়, বাংলাদেশকে চাঙা করেছিলো। সেই প্রমান পাওয়া যায় প্রথম টি-টোয়েন্টিতে। সিরিজের প্রথম ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে বিধ্বস্ত করে জয় তুলে নেয় টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডের আঙ্গিনায় তিন ফরম্যাটেই জয়ের চক্র পূরণ হয় বাংলাদেশের।
ওয়ানডে হারার  পর  টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করে বাংলাদেশ দল। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হারের খড়া কাটাতে পেরেই সন্তুস্ট বাংলাদেশের কোচ হাথুরুসিংহে। এজন্য এবারের সফরকে সফল বলতে এক বিন্দুও ভাবেননি তিনি।
আজ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের হাথুরুসিংহে বলেন, ‘আমরা এখানে আগে কি করেছি, সেসব নিয়ে সিরিজের শুরুতে কথা বলেছি। আমরা আগের চেয়ে ভালো কিছু করতে চেয়েছিলাম। সেই দিক থেকে যদি চিন্তা করি, তাহলে এই সফরকে খুবই সফল বলবো।’
দলের খেলোয়াড়দের নির্ভিক  পারফরমেন্স মুগ্ধ করেছে হাথুরুসিংহকে। তাতেই সাফল্যের দেখা পেয়েছে বলে জানান তিনি, ‘এই দলটা বেশ তরুণ। নিজেদের খেলায় নির্ভার ছিলো তারা। তাদের মধ্যে কোন ভয়ডর ছিলো না। প্রতিপক্ষের সাথে পালা দিয়ে লড়াই করতে উদগ্রীব ছিলো তারা।’
খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সের প্রশংসা করতে গিয়ে অধিনায়ক শান্তর নেতৃত্বকে অসাধারন বলেছেন হাথুরুসিংহে। তিনি বলেন, ‘ শান্তর নেতৃত্ব ছিলো অসাধারণ। কৌশল দিয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে সে। খেলোয়াড়দের বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সে একদম পরিষ্কার ছিল। দলের কাছ থেকে কি প্রত্যাশা বা কি চায়।’
শান্তকে দীর্ঘমেয়াদে অধিনায়ক করার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ভাবতে পারে বলে মনে করছেন  হাথুরুসিংহে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় বিসিবি বেশ ভালোভাবেই চিন্তা করবে। অবশ্যই এটি বোর্ডের সিদ্ধান্ত। শান্তকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার জন্য নিজকে বেশ ভালোভাবেই প্রমাণ করেছে সে।’
দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা না থাকারও পর তরুণদের হাত ধরে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অধরা জয়ের ব্যাপারে হাথুরুসিংহে বলেন, ‘এই দলের খেলোয়াড়রা ক্রিকেট উপভোগ করতে চায়। আমি মনে করি, ড্রেসিংরুমের পরিবেশ অনেক ভালো। কারণ, সবার মধ্যে যোগাযোগ বা বুঝাপড়াটা  বেশ ভালো। প্রতিন্দ্বন্দিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলার মতো খেলোয়াড় তারা।’
তবে স্পিন বান্ধব উইকেটের চেয়ে গতিময় উইকেটে বাংলাদেশ দল ভালো খেলে বলে জানান হাথুরুসিংহে, ‘আমরা কিন্তু স্পিনের বিপক্ষে খুব ভালো না। আমরা বাউন্সি উইকেটে ভালো খেলি। বাউন্স থাকলে আপনি ৩৬০ ডিগ্রিতে রান করতে পারেন। ব্যাটাররা ভালোই করেছে। বিশেষ করে বোলাররা খুবই ভাল করেছে। এ ধরনের উইকেটে বোলিং উপভোগ করেছে শরিফুল, জুনিয়র সাকিব, মুস্তাফিজ।’
এই সিরিজে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন বাংলাদেশের শরিফুল। ওয়ানডেতে ৯৯ রানে ও টি-টোয়েন্টিতে ৫৯ রানে ৬টি করে উইকেট নেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ সেরা খেলোয়াড় হন শরিফুল। শরিফুলের প্রশংসা করেছেন হাথুরুসিংহে, ‘আমরা ড্রেসিংরুমে আলোচনা করেছিলাম, সম্প্রতি তিন ফরম্যাটেই অসাধারণ বল করছে শরিফুল। ৮ মাস আগে দলেই ছিল না, কোন ফরম্যাটই খেলছিল না। এখন সে দলের সেরা বোলার। পাশাপাশি একজন লেগ স্পিনারকে সাদা বলে ক্রিকেটে সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম, সুযোগ পেয়ে সফল হয়েছে রিশাদ হোসেন।’