শিরোনাম
সিডনি, ১ জানুয়ারি ২০২৪ (বাসস) : পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বিদায়ী টেস্ট খেলতে নামবেন অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। বিদায়ী টেস্টে ওয়ার্নারকে জয় উপহার দিতে চায় অস্ট্রেলিয়া। সেই সাথে সিরিজের শেষ টেস্ট জিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার লক্ষ্য অসিদের। প্রথম দুই টেস্ট হেরে সিরিজ হাতছাড়া হলেও হোয়াইটওয়াশ এড়াতে মরিয়া পাকিস্তান। আগামী ৩ জানুয়ারি সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ওয়ার্নারের ক্যারিয়ারের বিদায়ী টেস্ট।
গত বছর জুনে ১২ বছরের বণার্ঢ্য টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানান ঘোষনা দিয়েছিলেন ওয়ার্নার। তিনি জানিয়েছিলেন, সিডনিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারকে ইতি টানতে চাই।
একারণেই পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে শেষ ম্যাচই বিদায়ী টেস্ট হতে যাচ্ছে ওয়ার্নারের। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম ভরসা ছিলেন এই বাঁ-হাতি টপ অর্ডার ব্যাটার।
২০১১ সালের ডিসেম্বরে ব্রিসবেনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট আঙিনায় পথচলা শুরু হয় ওয়ার্নারের। অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসে যথাক্রমে- ৩ ও ১২ রান করেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটা ভালো না হলেও পরবর্তীতে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ১১১ টেস্টে ২৬টি সেঞ্চুরি ও ৩৬টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৪৪.৫৮ গড়ে ৮৬৯৫ রান করেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট রান সংগ্রহের তালিকায় পঞ্চমস্থানে আছেন ওয়ার্নার।
সিডনি টেস্ট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি বলেন, ‘আমরা ডেভিড ওয়ার্নারের বিদায়ী টেস্ট ম্যাচ এবং তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার আনন্দের সাথে উদযাপন করতে চাই।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে বিদায় টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে পার্থে প্রথম ইনিংসে ১৬৪ রানের অসাধারন ইনিংস খেলেছিলেন ওয়ার্নার। দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়ার্নার খালি হাতে ফিরলেও, ৩৬০ রানের বড় জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্নে দ্বিতীয় টেস্টের দুই ইনিংসে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন ওয়ার্নার। তার ব্যাট থেকে ৩৮ ও ৬ রান আসলেও, ৭৯ রানের জয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিলো অসিরা। তবে বিদায়ী টেস্টে নিজের সেরাটা উজার করে দিতে চান ৩৭ বছর বয়সী ওয়ার্নার।
বিদায়ী টেস্টের আগে সংবাদ সম্মেলনে ওয়ার্নার বলেন, ‘ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট নিয়ে আমি খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে আছি। আশা করি, শেষ টেস্টে দলের জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারবো। দেশের হয়ে শেষ টেস্টে নিজের সেরাটা উজার করে দিবো। তবে আমার প্রধান লক্ষ্য থাকবে, জয় দিয়ে টেস্ট শেষ করা।’
প্রথম দুই টেস্ট জিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টানা দশ সিরিজ জয়ের নজির গড়ে অস্ট্রেলিয়া। জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্য অসিদের। দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিলো সিরিজ জয়। সেটি আমরা পূরণ করেছি। এবার আমরা পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করতে চাই। পাশাপাশি ওয়ার্নারের বিদায়টা স্মরনীয় করতে রাখতে চাই।’
সিরিজ হারলেও, জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে আছে পাকিস্তান। কারন গত ২৮ বছরে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে টানা ১৬ টেস্ট হেরেছে পাকরা। সিরিজের শেষ টেস্ট জিতে জয়ে খড়া কাটানোর পাশাপাশি হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে চায় পাকিস্তান। দলের অধিনায়ক শান মাসুদ বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক, প্রথম দুই টেস্টেই আমরা হেরেছি। দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের ভালো সুযোগ আমরা হাতছাড়া করেছি। সিরিজ হারলেও, আমরা ভেঙে পড়িনি। শেষ টেস্ট জয়ের জন্য দলের খেলোয়াড়রা মরিয়া হয়ে আছে। এ সফরের সেরা পারফরমেন্স দিয়ে জয় দিয়ে সিরিজ শেষ করতে চাই।’
সিরিজের শেষ টেস্টে তরুন ব্যাটার সাইম আইয়ুবকে সুযোগ দিতে পারে পাকিস্তান। দেশের হয়ে শুধুমাত্র ৮টি টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা আছে তার। গত বছর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় আইয়ুবের। বাহারি স্ট্রোকে নজর কাড়েন তিনি। ১৪টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৩টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ-সেঞ্চুরিতে ১০৬৯ রান করেছেন আইয়ুুব।
এদিকে, ইনজুরির কারনে প্রথম দুই টেস্টে খেলতে পারেননি স্পিনার আবরার আহমেদ। শেষ টেস্টে তাকে খেলানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে পাকিস্তানের ফিজিওরা। যদি তৃতীয় টেস্টেও আবরার খেলার জন্য ফিট হতে না পারেন, তাহলে স্পিনার সাজিদ খানকে সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে পাকিস্তানের। এতে দ্বিতীয় টেস্টের একাদশ থেকে বাদ পড়তে পারেন পেসার হাসান আলি।
এখন পর্যন্ত টেস্টে ৭১বার মুখোমুখি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান। এরমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৩৬টিতে, পাকিস্তানের জয় ১৫টিতে ও ২০টি টেস্ট ড্র হয়।
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ এই সিরিজটি। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে ৫০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়স্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া। ৪৫.৮৩ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চমস্থানে আছে পাকিস্তান।
পাকিস্তান দল : শান মাসুদ (অধিনায়ক), আমির জামাল, আবদুল্লাহ শফিক, সাজিদ খান, বাবর আজম, ফাহিম আশরাফ, হাসান আলী, ইমাম-উল-হক, মীর হামজা, মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ ওয়াসিম, সাইম আইয়ুব, সালমান আগা, সরফরাজ আহমেদ, সৌদ শাকিল ও শাহিন শাহ আফ্রিদি।
অস্ট্রেলিয়া দল : প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), স্কট বোল্যান্ড, অ্যালেক্স ক্যারি, ক্যামেরন গ্রিন, জশ হ্যাজেলউড, ট্রাভিস হেড, উসমান খাজা, মার্নাস লাবুশেন, নাথান লিঁও, মিচেল মার্শ, স্টিভেন স্মিথ, মিচেল স্টার্ক এবং ডেভিড ওয়ার্নার।