বাসস
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:৫৩

জাগালো আর নেই

সাও পাওলো, ৬ জানুয়ারি ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : বিশ্ব ফুটবলে ‘বুড়ো নেকড়ে’ খ্যাত ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী মারিও জাগালো আর নেই। ৯২ বছর বয়সে শুক্রবার  তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। কিংবদন্তী এই ফুটবলারের মৃত্যুতে পুরো ফুটবল বিশ্বে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। 
জাগালো একমাত্র ব্যক্তি যিনি কোচ ও খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলের যে পরাশক্তি হিসেবে উত্থান তার পিছনে জাগালোর অনেকটাই অবদান রয়েছে। ১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিল দলের একমাত্র সদস্য হিসেবে বেঁচে ছিলেন জাগালো। এই শিরোপার মাধ্যমে আট বছর আগে মারাকানা স্টেডিয়ামে উরুগুয়ের কাছে পরাজয়ের হতাশা অনেকটাই ভুলে গিয়েছিল ব্রাজিল। উরুগুয়ের কাছে ঐ পরাজয় জাতীয় শোকে পরিনত হয়েছিল। ঐ সময় জাগালো বলেছিলেন, ‘মারাকানায় উরুগুয়ের বিপক্ষে পরাজয় কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। আমি এই দলের একজন সৈনিক ছিলাম। মানুষের নিস্তব্ধতা, দু:খ, হতাশা আমি কখনোই ভুলবো না।’ 
এটাই ছিল বিশ্বকাপে সেলেসাওদের প্রথম শিরোপা। এরপর রেকর্ড চারবার শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছে ব্রাজিল।
জাগালোর আরেক কিংবদন্তী সতীর্থ পেলে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মারা গেছেন। 
তিনবার ফুটবল বিশ্বকাপ জেতা একজন ফুটবলার যে কতটা অসাধারণ হতে পারেন তা তার কীর্তিই বলে দেয়। যেখানে ফেরেঙ্ক পুসকাস, ইউসেবিও কিংবা ইয়োহান ক্রুইফদের মতো কিংবদন্তীরা একটি বিশ্বকাপ না পাওয়ার হতাশা নিয়ে ফুটবলে নিজেদের এপিটাফ লিখেছেন, সেখানে জাগালোর নামের পাশে থাকা তিনটি বিশ্বকাপ ট্রফিই সাক্ষী দিচ্ছে তার শ্রেষ্ঠত্বের।
৫০’এর দশকে অপেশাদার ফুটবল থেকে যাত্রা শুরু করা জাগালো লেফট উইঙ্গার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।   তার নেতৃত্বে ব্রাজিল দলে এ্যাটাকিং ফুটবলের ধারা ফিরে আসে। নিজের অনন্য এক কৌশলের সাথে তিনি পুরো দলের মধ্যে বিশেষ এক ছন্দ নিয়ে এসেছিলেন। 
ফ্ল্যামেঙ্গো ও বোটাফোগোর হয়ে পাঁচটি রিও ডি জেনিরো প্রাদেশিক চ্যাম্পিয়নশীপ জয় করেছেন। ১৯৫৮ সালে সুইডেন বিশ্বকাপের কিছু আগে মাত্র ২৬ বছর বয়সে জাতীয় দলে তার অভিষেক হয়। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দলের একজন নির্ভরযোগ্য সদস্য হয়ে উঠেন। জাতীয় দলের হয়ে ৩৭টি ম্যাচ জিতেছেন। সুইডেনের ফাইনালে স্বাগতিকদের ৫-২ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ব্রাজিল শিরোপা জয় করে। ১৭ বছর বয়সী পেলেকে দিয়ে শেষ গোলটি করানোর আগে দলের হয়ে চতুর্থ গোলটি করেছিলেন জাগালো। 
চার বছর পর সান্তিয়াগোতে চেকোস্লোভাকিয়া বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও ৩-১ গোলে জয়ী হয়ে শিরোপা ধরে রাখে ব্রাজিল। ফাইনালে পুরো ৯০ মিনিট মাঠে ছিলেন জাগালো। 
জাগালো অবশ্য অনেকের কাছে ‘দ্য উলফ’ বা ‘বুড়ো নেকড়ে’ হিসেবেও পরিচিত; যদিও সেটা তার ডাকনাম ‘লোবো’ হওয়ার কারণে। পর্তুগিজ এই শব্দের ইংরেজি অর্থ উলফ বা নেকড়ে। তবে এই ডাকনাম বাদ দিলেও খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে জাগালোর যে অর্জন, নেকড়ের মতো শিকারি প্রবৃত্তি ও বুদ্ধিমত্তা না থাকলে সেটি সম্ভব হতো কি না, অজানা। নিজের এই ডাকনামই হয়তো জাগালোকে আলাদাভাবে জাগিয়ে দিয়েছিল।
১৯৬৪ সালে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবন শেষে জাগালো কোচ হিসেবেও ছিলেন শতভাগ সফল। সাবেক ক্লাব বোটাফোগোর হয়ে তার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু। তার অধীনে দুটি প্রাদেশিক শিরোপা জয় করে বোটাফোগো। 
জাতীয় দল থেকে জাগালোর বিদায়ের পর ১৯৬৬ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে পারেনি। সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে জাগালোকে ১৯৭০ বিশ্বকাপ দলের কোচের দায়িত্ব দেয়া হয়। ঐ সময় মাত্র ৩৮ বছর বয়সী জাগালোর সামনে ছিল পেলে, কার্লোস আলবার্তো, জেয়ারজিনহো, রিভেলিনোর মত তারকা সমৃদ্ধ একটি দল। যাদের নিয়ে জাগালো কোচ হিসেবে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেন।  ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ জয়ী দলের কোচ কার্লোস আলবার্তো পেরেইরার সাথে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন জাগালো।