শিরোনাম
বার্লিন, ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার আর নেই। কোচ ও অধিনায়ক হিসেবে একাই জার্মান ফুটবলকে বদলে দেয়া এই কিংবদন্তী গতকাল ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। জার্মান ফুটবল এসোসিয়েশন সোমবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ডিএফবি সভাপতি হ্যান্স-জোয়াকিম ওয়াটজকে বলেছেন, ‘ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার নি:সন্দেহে জার্মান ফুটবলের সর্বকালের সবচেয়ে বড় নাম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমার জানামতে একজন সেরা ব্যক্তিত্ব।’
খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ী তিনজন ব্যক্তির মধ্যে বেকেনবাওয়ার অন্যতম।
কিংবদন্তী এই ফুটবল ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে বিশ্ব জুড়ে শোকের ছায়া বইছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ ও সাবেক জার্মান অধিনায়ক লোথার ম্যাথিউস বলেছেন, ‘আমরা তাকে মিস করবো।’
বেকেনবাওয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইউরোপীয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফা বলেছেন, তিনি ইউরোপীয়ান ফুটবলের একজন সেরা সন্তান ছিলেন যার কারনে জার্মান ফুটবলে যে পরিবর্তন এসেছিল তা আগে কেউ কোনদিন করতে পারেনি।’
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ বেকেনবাওয়ার সম্পর্কে বলেছে, ‘ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর একজন খেলোয়াড় ছিলেন, যিনি মেধা ও সৌন্দর্য দিয়ে সবকিছু জয় করেছিলেন।’
ফিফা সভাপতি গিয়ান্নি ইনফান্তিনো ইন্সটাগ্রামে বেকেনবাওয়ারকে একজন ‘সত্যিকার কিংবদন্তী’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা তোমাকে কখনই ভুলবো না, ফ্রাঞ্জ, সবকিছুর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।’
নিজের ৭৫তম জন্মদিনে বেকেনবাওয়ার জার্মান ট্যাবলয়েড বিল্ডে বলেছিলেন এই বয়সেও তিনি নিয়মিত প্রার্থনা করেন। বিল্ডের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘সেই প্রার্থনাগুলোতে শুধু কৃতজ্ঞতা থাকে। যে সুন্দর একটি জীবন আমি পেয়েছি তার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে সবসময় ধন্যবাদ জানাই।’
৭০’র দশকে জার্মান জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন বেকেনবাওয়ার। জীবনের শেষ ভাগে স্বাস্থ্যগত জটিলতায় বেশীরভাগ সময়ই তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে অস্ট্রিয়ার সালজবার্গে বসবাস শুরু করেন।
জার্মান ফুটবলে তিনি ‘দ্য কাইজার’ নামে পরিচিত ছিলেন, যার অর্থ স¤্রাট। জার্মান ফুটবলে অন্যতম কিছু সেরা অর্জনের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বেকেনবাওয়ার। কিন্তু ২০০৬ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ত লাভে বিডে অস্বচ্ছতার পিছনে তাকে জড়িয়ে ব্যপক সমালোচনা তৈরী হয়েছিল।
১৯৪৫ সালে মিউনিখে জন্ম নেয়া বেকেনবাওয়ার বায়ার্নকে দেশীয় ফুটবলের অন্যতম শক্তিশালী একটি ক্লাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সহযোগিতা করেছিলেন। ব্রাজিলিয়ান আরেক কিংবদন্তী মারিও জাগালো (গত শুক্রবার ৯২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন) ও ফ্রান্সের দিদিয়েদের দেশ্যমের সাথে তৃতীয় খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
ঘরের মাঠে ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপ জয়ী পশ্চিম জার্মানীকে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। মিউনিখের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে ২-১ গোলে পরাজিত করে পশ্চিম জার্মানী শিরোপা জয় করেছিল। এরপর ৯০ সালে রোমে তার অধীনে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইতালি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
মাঠ ও মাঠের বাইরে তার নেতৃত্বগুন সবসময়ই প্রশংসিত হয়েছে। ১৯৭২ ও ১৯৭৬ সালে তিনি ইউরোপীয়ান ফুটবলের বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন। বুন্দেসলিগায় ৪২৪টি ম্যাচ খেলে ৪৪ গোল করেছেন। এর মধ্যে বায়ার্নে কাটিয়েছেন দীর্ঘ ১৩ বছর। ১৯৮৩ সালে নিউ ইয়র্ক কসমসের হয়ে পেশাদার ফুটবলকে বিদায় জানানোর আগে হামবুর্গেও খেলেছেন।
বায়ার্ন ও মার্সেইতে দীর্ঘদিন কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯১ সালে মার্সেইকে ফরাসি লিগ ও ১৯৯৪ সালে বায়ার্নকে বুন্দেসলিগা শিরোপা উপহার দিয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালে কোচিং দায়িত্ব থেকে অবসর নেন। এরপর বায়ার্নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যে কারনে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থা ফিফার কার্যনির্বাহী কমিটিতে জায়গা স্থায়ী হয়। মাঠের বাইরে জার্মান ফুটবলে তার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ২০০৬ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পাবার পিছনে তার অনবদ্য ভূমিকা ছিল। সফল একটি বিশ্বকাপ আয়োজন করে এখনো ফুটবল বিশ্বে আয়োজক হিসেবে প্রশংসিত হয় জার্মানীর নাম। যদিও ২০১৫ সালের অক্টোবরে জার্মান ম্যাগাজিন স্পিজেলের এক রিপোর্টের সূত্র ধরে জানা যায় বিশ্বকাপের আয়োজক স্বত্ব নিজেদের করে নিতে ঘুষের বিনিময়ে বেকেনবাওয়ার সদস্য দেশের ভোট কিনেছিলেন। বিশেষ করে ফিফার ২৪ সদস্যের শক্তিশালী কার্যনির্বাহী কমিটিতে থাকা এশিয়ান চারটি ভোট বেকেনবাওয়ার নিজের করে নিয়েছিলেন। কিন্তু বরাবরই এই অভিযোগের বিষয়টি নাকচ করে এসেছেন বেকেনবাওয়ার।
২০১৬ ও ২০১৭ সালে পরপর দুইবার বেকেবাওয়ারের হার্টে অস্ত্রোপচার করা হয়। তারপর থেকেই বিভিন্ন সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রাজিল কিংবদন্তী পেলের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে বেকেনবাওয়ার অনুপস্থিত ছিলেন। এরপর আগস্টে জার্মানীর ১৯৯০’র বিশ্বকাপ জয়ী দলের ঐত্যিবাহী বার্ষিক পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। দুটি বড় অনুষ্ঠানেই অসুস্থতার কারনে তিনি অংশ নিতে পারেননি।
২০২২ সালের আগস্টে সর্বশেষ তাকে বায়ার্ন মিউনিখের আলিয়াঁজ এরেনাতে দেখা গেছে। বরুসিয়া মোচেনগ্ল্যাডবাখের বিপক্ষে বুন্দেসলিগার একটি ম্যাচ তিনি দেখতে