শিরোনাম
লন্ডন, ২১ এপ্রিল ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : বার্নার্ডো সিলভার গোলে ওয়েম্বলির সেমিফাইনালে চেলসিকে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত করে এফএ কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ম্যানচেস্টার সিটি।
ম্যাচের ৮৪ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করেন পর্তুগীজ এই তারকা মিডফিল্ডার। পুরো ম্যাচে সিটির আধিপত্য খুব একটা দেখা যায়নি, চেলসিও বেশ কিছু সুযোগ নষ্ট করেছে। ম্যাচ শেষ হওয়ার ছয় মিনিট আগে সিলভার গোলে দলের জয় নিশ্চিত হবার আগ পর্যন্ত মোটেই স্বস্তিতে ছিলনা সিটিজেনরা।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নেবার পর স্বাভাবিক ভাবেই আত্মবিশ^াসের ঘাটটিতে ভুগছিল ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা। বিশেষ করে প্রথম ইংলিশ দল হিসেবে টানা দুই মৌসুমে ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাওয়ায় বেশ হতাশ হতে হয়েছে পেপ গার্দিওলার দলকে।
রিয়ালের বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়ায় নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ডকে ছাড়াই কাল মাঠে নেমেছিল সিটি। তার পরিবর্তে দলে নামা জুলিয়ান আলভারেজ নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। বিপরীতে চেলসি স্ট্রাইকার নিকোলাস জ্যাকসন সিটির রক্ষনভাগকে বেশ ব্যস্ত রেখেছিলেন। গার্দিওলার বিশ^াস এই ধরনের লড়াই এবারের মৌসুমে সিটিকে অন্তত প্রিমিয়ার লিগ ও এএফ কাপের শিরোপা জয়ে অনেটাই এগিয়ে রাখবে।
প্রিমিয়ার লিগ শেষ হতে আর মাত্র ছয় ম্যাচ বাকি আছে। এই মুহূর্তে আর্সেনালের থেকে এক পয়েন্ট পিছিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিটি। এফএ কাপে এনিয়ে ১৩ বারের মত ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে সিটি। গত বছর ওয়েম্বলিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়ের ম্যাচটি ফিরে আসার সম্ভাবনাই বেশী। আরেক সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও কভেন্ট্রি।
ফেব্রুয়ারিতে লিগ কাপের ফাইনালে লিভারপুলের কাছে পরাজয়ের পর ২০১৮ সালের পর প্রথমবারের মত ঘরোয়া কোন শিরোপা জয়ের পথে আত্মবিশ^াস নিয়েই মাঠে নেমেছিল চেলসি। কিন্তু আরো একবার তাদের শিরোপা বিহীন থেকেই মৌসুম শেষ করতে হচ্ছে। ব্লুজ ম্যানেজার মরিসিও পোচেত্তিনোর জন্য সময়টা মোটেই ভাল কাটেনি। প্রথম মৌসুমে দলকে ভাল কিছু উপহার দিতে তিনি ব্যর্থ হয়েছে। ইংল্যান্ডে এখনো পর্যন্ত কোন শিরোপার দেখা পাননি পোচেত্তিনো।
সেপ্টেম্বরে সিটি ছেড়ে চেলসিতে যোগ দেবার পর ফরোয়ার্ড কোল পালমারের জন্য এটি ছিল পুরনো ক্লাবকে কিছুটা শিক্ষা দেবার সুযোগ। আগেরদিন গার্দিওলা বলেছিলেন দুই বছর আগে থেকেই সিটি ছাড়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন পালমার। এবারের মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় পালমার ২৩ গোল করেছেন, যার মধ্যে শেষ ছয় ম্যাচে করেছেন ১১ গোল। সোমবার এভারটনের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগে ৬-০ গোলে জয়ের ম্যাচটিতে পালমার একাই করেছেন চার গোল। কাল যে কারনে পালমারকে নিয়ে বাড়তি সতর্ক থাকতে হয়েছে সিটিকে। যদিও শেষ পর্যন্ত খুব একটা বিপদজনক হয়ে উঠতে পারেননি পালমার।
ম্যাচের শুরুতেই পালমারের নিখুঁত পাসে জ্যাকসন গোলরক্ষক স্টিফান ওরতেগাকে একা পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। বড় ম্যাচে এই ধরনের সুযোগ খুব কমই পাওয়া যায়। জ্যাকসনের এই মিস পরবর্তীতে চেলসিকে ভুগিয়েছে। সিটি রক্ষনভাগকে কাটিয়ে এনজো ফার্নান্দেজের পাস থেকেও জ্যাকসন কোন সুখবর দিতে পারেননি। তার শটটি পিছন থেকে ন্যাথান এ্যাকে ক্লিয়ার করেন।
সিটির থেকে অনেক বেশী গভীরতা নিয়ে ম্যাচে এগিয়ে যাওয়া চেলসি বেশ কিছু সুযোগ মিসের কারনে অনেকটাই মুষড়ে পড়ে। রড্রিকে কাটিয়ে ১২ গজ দুর থেকে পালমারের লো ড্রাইভ দারুনভাবে রুখে দেন ওরতেগা। ফেব্রুয়ারিতে এভারটনের বিপক্ষে ম্যাচের পর এই প্রথম কোন ম্যাচে প্রথমার্ধে টার্গেটে একটি শটও নিতে পরেনি সিটিজেনরা।
বিরতির ঠিক পরপরই জ্যাকসনের একটি শট ওরতেগা রুখে দিলে আবারা হতাশ হতে হয় চেলসিকে। পরের আক্রমনেই জ্যাকসনের হেড কর্ণারের মাধ্যমে রক্ষা করেন ওরতেগা। শেষ পর্যন্ত ফিল ফোডেন চেলসির সার্বিয়ান গোলরক্ষক ডোয়ে পেট্রোভিচকে পরীক্ষায় ফেলেন। কিন্তু ফোডেনের শক্তিশালী শটের মত সমান ক্ষিপ্রতায় তা রুখে দেন পেট্রোভিচ। পালমারের ফ্রি-কিক জ্যাক গ্রিলিশের কনুইয়ে লেগে গতিরোধ হলে চেলসি পেনাল্টির আবেদন করলেও তা নাকচ হয়ে যায়। গ্রিলিশের পরিবর্তে নামা জেরেমি ডকু মাঠে নেমেই সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু পোস্টের কাছ থেকে তার শটটি রুখে দেন পেট্রোভিচ। ৮৪ মিনিটে শেষ পর্যন্ত সিলভার গোলের পিছনে ডকুর অবদান রয়েছেন। চেলসির গোল এরিয়ার মধ্যে প্রবেশ করে ডকু কেভিন ডি ব্রুইনার দিকে বল বাড়িয়ে দেন। ব্রুইনার লো ক্রসে সিলভা ক্লোজ ফিনিশিংয়ে সিটিকে জয় উপহার দেন।