বাসস
  ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৫৯

‘ইউরোপীয়ান ক্লাসিকো’তে বায়ার্নকে নিয়ে চিন্তিত মাদ্রিদ

মাদ্রিদ, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা নিশ্চিত করে ডাবল ক্রাউন জয়ের নেশায় এখন মরিয়া হয়ে আছে  রিয়াল মাদ্রিদ। লিগ শিরোপার পথে মাদ্রিদ অনেকটা এগিয়ে থাকলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে তাদের সামনে কঠিন প্রতিপক্ষ বায়ার্ন মিউনিখের বাঁধা পেরুতে হবে, যা অনেকটা কঠিন বলেই মেনে নিচ্ছে মাদ্রিদ। 
আগামীকাল সেমিফাইনালে প্রথম লেগ খেলতে বেভারিয়া সফরে যাবে কার্লো আনচেলত্তির দল। ইতোমধ্যেই এই দুই দল প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী একে অপরের মোকাবেলা করেছে, যে কারনে অনেকটা অলিখিত ভাবেই এই দুই জায়ান্টের দ্বৈরথ ‘ইউরোপীয়ান ক্লাসিকো’র তকমা পেয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ২৬ বারের মোকাবেলায় মাদ্রিদের ১২ জয়ের বিপরীতে বায়ার্নের জয় ১১ টিতে। যে কারনে একটু হলেও মাদ্রিদকে এগিয়ে রাখা যায়।
গত এক দশকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জার্মান জায়ান্টদের উপর অনেকটাই ছড়ি ঘুড়িয়েছে মাদ্রিদ। রেকর্ড ১৪ বারের বিজয়ী মাদ্রিদ সাম্প্রতিক তিনটি  আসরে বায়ার্নকে বিদায় করেছে, এর মধ্যে রয়েছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সেমিফাইনালে ও ২০১৭ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল। এই তিনটি আসরেই রিয়াল মাদ্রিদ শিরোপা নিয়ে ঘরে ফিরেছে। ২০১৭ সালে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অতিরিক্ত সময়ের বায়ার্ন বিদায় নিয়েছিল, ম্যাচটিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ঐ সময় বায়ার্নের কোচ ছিলেন আনচেলত্তি। কয়েক মাস পর এই ইতালিয়ান কোচকে বরখাস্ত করে বায়ার্ন। এই সুযোগটি লুফে নেয় মাদ্রিদ। আনচেলত্তিকে পেয়ে আরো বেশী উজ্জীবিত মাদ্রিদ এরপর আরো দুটি শিরোপা জয় করেছে। 
এবার বুন্দেসলিগায় বায়ার লেভাকুসেনের কাছে ১১ বছরের আধিপত্য হারিয়েছে বায়ার্ন। আর এ কারনেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাটি তাদের কাছে আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। লেভারকুসেন কোচ জাভি আলোনসো বায়ার্নের এক সময়ের দাপুটে খেলোয়াড় ছিলেন। আর এখন তার নেতৃত্বে লেভারকুসেন প্রথমবারের মত বুন্দেসলিগা শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখালো। 
মাদ্রিদের বিপক্ষে ২০১৭ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে ঐ ম্যাচে বাজে রেফারিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন আনচেলত্তি। মিডফিল্ডার আরতুরো ভিদালের লাল কার্ড ও রোনাল্ডোর একটি অফসাইডের গোল নিয়ে আনচেলত্তি বেশী আপত্তি করেছিলেন। 
যদিও এর মাধ্যমে মাদ্রিদ আরো একবার প্রমান করেছে জটিল পরিস্থিতিতে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করে ইউরোপে শিরোপা জয় করা যায়। ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বিজয়ী বায়ার্ন ২০১৩ সালে ওয়েম্বলিতে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের পর আর একবার ২০১৯ সালে শিরোপা পেয়েছে। বিপরীতে এই সময়ের মধ্যে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা জয় করেছে পাঁচটি শিরোপা। 
গত সপ্তাহে বার্সেলোনা কোচ জাভি হার্নান্দেজ বলেছেন মাদ্রিদের সাফল্য তাদেরকে আরো ক্ষুধার্ত করে তুলেছে। কোয়ার্টার ফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে জয়ের পর জাভি এই মন্তব্য করে বলেছিলেন, ‘যখন তুমি একের পর এক ম্যাচ জিততে থাকবে তখন স্বাভাবিক ভাবেই সব কিছু সহজ হয়ে যাবে, সবাই তখন শান্ত হয়ে আসবে, সকলের মধ্যে আত্মবিশ^াস বেড়ে যাবে, জয়ের তীব্র আকাঙ্খা কমে আসবে।’
এ সবই মিউনিখের ম্যাচের আগে আনচেলত্তির দলকে সাহস যোগাচ্ছে। বায়ার্নের ঐ ১১ জয়ের তুলনায় স্পেনের বাইরে অন্য কোন দলই এতবার মাদ্রিদকে পরাজিত করতে পারেনি। 
মৌসুমের দু:সহ স্মৃতি কাটিয়ে উঠতে বায়ার্নের সামনে এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ের বিকল্প নেই। কোচ থমাস টাচেলের দলের জন্য সবচেয়ে বড় শক্তি ইংলিশ স্ট্রাইকার হ্যারি কেনের ফর্ম। টটেনহ্যামের সাবেক এই তারকা ইতোমধ্যেই মৌসুমে নিজের ব্যক্তিগত  রেকর্ড ৩৫ গোল করেছেন।
আনচেলত্তি বলেছেন, ‘বায়ার্ন একটি কঠিন মৌসুম কাটিয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে সম্ভবত তাদের সামনে সেরা সময় অপেক্ষা করছে। তাদের রয়েছে কেনের মত খেলোয়াড় যে কিনা ইতোমধ্যেই অনেক গোল করেছে। কালকের ম্যাচটি কঠিন হবে, সমানে সমানে লড়াই চলবে। আমরা মোটেই ম্যাচটিকে সহজভাবে দেখছি না। কিন্তু এই ধরনের ম্যাচ খেলতে আমরা সবসময়ই পছন্দ করি। আমার দলের সবাই বেশ চাঙ্গা আছে।’
মাদ্রিদের গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিন সিটির বিপক্ষে দুটি পেনাল্টি সেভ করে নায়কে পরিনত হয়েছেন। যদিও কাল কেনকে তিনি কতটুকু সামলাতে পারেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। আনচেলত্তি জানিয়েছে বেলজিয়ান নাম্বার ওয়ান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া ফিট হয়ে উঠেছেন এবং আগামী সপ্তাহে লা লিগায় তিনি খেলতে পারবেন। এর অর্থ হচ্ছে দ্বিতীয় লেগে ও সম্ভাব্য ফাইনালে লুনিনের প্রথম দলে জায়গা পেতে বেশ বেগ পেতে হবে। ২১ এপ্রিল বার্সেলোনার বিপক্ষে এই ইউক্রেনিয়ান গোলরক্ষক একটি ভুল করেছিলেন। যে কারনে গোল হজম করতে হয় রিয়ালকে। যদিও শেষ পর্যন্ত রিয়াল ৩-২ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। 
করিম বেনজেমা দল ছেড়ে চলে গেলে সেই জায়গায় নিজেকে দারুনভাবে প্রমান করে চলেছেন তরুণ জুড বেলিংহাম। ইতোমধ্যেই মাদ্রিদের শীর্ষ এই গোলদাতা মৌসুমে বড় সব ম্যাচেই নিজেকে প্রমান করেছেন। বার্সেলোনার বিপক্ষে তিন ম্যাচে তিনি তিন গোল করেছেন। এখন ইউরোপীয়ান ক্লাসিকোতে সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে নিজেকে প্রমানের অপেক্ষায় মুখিয়ে আছেন বেলিংহাম।