বাসস
  ০৫ মে ২০২৪, ১৫:২৪

জিরোনার কাছে বার্সেলোনার হারে রিয়ালের লা লিগা শিরোপা নিশ্চিত

মাদ্রিদ, ৫ মে, ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : বার্সেলোনাকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ইতিহাস রচনার পাশাপাশি রিয়াল মাদ্রিদকে লা লিগায় শিরোপা জয়ে সহযোগিতা করেছে জিরোনা। গতকাল দিনের শুরুতে কাদিজকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপায় এক হাত দিয়ে রেখেছিল মাদ্রিদ। পরের কাজটুকু করে দিয়েছে জিরোনা।
রিয়াল বস কার্লোন আনচেলত্তি কাদিজের বিপক্ষে জয়ের পরপরই বলেছিলেন লি লিগার শিরোপা রিয়ালেরই প্রাপ্য। এনিয়ে রেকর্ড ৩৬তম লিগ শিরোপা ঘরে তুললো লস ব্লাঙ্কোসরা।
বার্সেলোনার বিপক্ষে নাটকীয় হয়ে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে কাতালান মিনোস জিরোনা। এনিয়ে স্প্যানিশ শীর্ষ লিগে তারা চতুর্থবারের মত খেলতে এসেছিল।
আগামী সপ্তাহে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল ম্যাচকে সামনে রেখে আনচেলত্তি তার দলকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। মূল দলের অনেকেই কাল বিশ্রামে থাকলেও বাকি খেলোয়াড়রা নিজেদের দায়িত্ব ঠিকই পালন করেছেন। ৫১ মিনিটে ব্রাহিম দিয়াজ মাদ্রিদকে এগিয়ে দেন। এরপর দিয়াজ জুড বেলিংহামকে দিয়ে দ্বিতীয় গোলটি করিয়েছেন। ইনজুরি টাইমে তৃতীয় গোলটি করেছেন জোসেলু।
ম্যাচ শেষে আনচেলত্তি বলেছেন, ‘এবারের লা লিগা আমাদের দারুন কেটেছে। আমরা অল্প কিছু ভুল করেছি, কিন্তু আবার সেগুলো শুধরে ওঠারও চেষ্টা করেছি। এই শিরোপাটা আমাদের প্রাপ্য ছিল।’
কাদিজের বিপক্ষে সহজ জয়ে মাদ্রিদ গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনার থেকে ১৪ পয়েন্ট এগিয়ে গিয়েছিল। তৃতীয় স্থানে থাকা বার্সেলোনার হাতে আর মাত্র ১২ পয়েন্টের খেলা বাকি আছে।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা জিরোনা মাদ্রিদের থেকে ১৩ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে। এনিয়ে এবারের মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মত বার্সেলোনাকে ৪-২ গোলে পরাজিত করলো জিরোনা।
মাদ্রিদ স্ট্রাইকার জোসেলু রিয়াল মাদ্রিদ টিভিকে বলেন, ‘আজকের এই দিনটির জন্য মুখিয়ে ছিলাম। নিজেদের ম্যাচের পরও আমরা মাঠ ছাড়িনি, শিরোপা জয়ের অপেক্ষা করেছি। দলে বেশ কয়েকজন তরুণ খেলোয়াড় রয়েছে, যারা শিরোপার জন্য ক্ষুধার্ত ছিল।  পুরনো অনেক খেলোয়াড় আজ আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে, এটা সত্যিই বিশেষ এক মুহূর্ত।’
বায়ার্নের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচকে সামনে রেখে আনচেলত্তি শুধুমাত্র গত সপ্তাহে প্রথম লেগে ২-২ গোলের ড্রয়ের ম্যাচটি থেকে অধিনায়ক নাচো ফার্নান্দেজকে মূল দলে রেখেছিলেন। বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া হাঁটুর ইনজুরি কাটিয়ে দীর্ঘ নয় মাস পর মাঠে ফিরে রিয়ালকে কোন গোল হজম করতে দেয়নি।
ক্লাবের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে কাল লা লিগায় খেলেছেন অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার লুকা মড্রিচ। ৩৮ বছর ২৩৮ দিন বয়সে মাদ্রিদের হয়ে কাল খেলেছেন ক্রোয়েশিয়ান এই তারকা। এর মাধ্যমে তিনি ১৯৬৫ সালের হাঙ্গেরিয়ান তারকা ফেরেঙ্ক পুসকাসকে মাত্র পাঁচদিনের ব্যবধানে পিছনে ফেলেছেন।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যু সফরে আসা কাদিজ ১৮তম স্থানে থেকে এখনো রেলিগেশন শঙ্কায় ভুগছে। প্রথমার্ধে তারা মাদ্রিদকে রুখে দিলেও দ্বিতীয়ার্ধে আর শেষ রক্ষা হয়নি।
বিরতির পরপরই ক্রিস রামোসের শট দারুনভাবে রুখে দেন কোর্তোয়া। পরের মুহূর্তেই মাদ্রিদ লিড নেয়। মড্রিচের কাছ থেকে পাস পেয়ে কার্লিং শটে দিয়াজ দারুন এক গোলে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন। টার্কিশ টিনএজার আরদা গুলারের বদলী হিসেবে মাঠে নামা বেলিংহাম দারুন এক সংঘবদ্ধ আক্রমন থেকে ৬৮ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন। ইংলিশ এই মিডফিল্ডারের মৌসুমে এটি ১৮তম গোল। শীর্ষ গোলদাতা হিসেবে মৌসুম শেষ করার দৌড়ে এখনো তিনি টিকে আছেন। স্টপেজ টাইমে নাচোর দারুন এক আক্রমনে জোসেলু সহজ ফিনিশিংয়ে রিয়ালের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন।
ঘরের মাঠে বার্সার কাছে দুইবার পিছিয়ে পড়েও দারুন এক লড়াইয়ের মাধ্যমে জিরোনা শেষ পর্যন্ত জয় নিশ্চিত করে। আন্দ্রেস ক্রিস্টেনসেনের দুর্দান্ত ভলিতে তিন মিনিটেই এগিয়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা।  লা লিগার শীর্ষ গোলদাতা আরটেম ডোভিক মিনিটখানেক পরেই মৌসুমের ২০তম গোল করে জিরোনার পক্ষে সমতা ফেরান। লামিস ইয়ামালের আদায় করা পেনাল্টি থেকে রবার্ট লিওয়ানদোস্কি বিরতির ঠিক আগে আবারো কাতালান জায়ান্টদের এগিয়ে দেন।
দ্বিতীয়ার্ধে বদলী হিসেবে খেলতে নামা পর্তু দলের উপর দারুন প্রভাব ফেলেন। দুই মিনিটের মধ্যে গোল করে মাইকেল সানচেজের দল এগিয়ে যায়। ৬৫ মিনিটে পর্তুর গোলে সমতায় ফিরে জিরোনা। এরপর পর্তুর এ্যাসিস্টে মিগুয়েল গুটিরেজ জিরোনাকে এগিয়ে দেন। ৭৪ মিনিটে পর্তু নিজের দ্বিতীয় গোল করলে মন্টিলিভি স্টেডিয়ামে পার্টি শুরু হয়ে যায়।
এই জয়ের পরপরই জিরোনা পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মিউজিক বাজাতে শুরু করে, যাতে দারের সমর্থকরা কিছুটা হলেও বিশাল পরিসরের স্বাদ পেতে পারে।
ম্যাচ শেষে বার্সা কোচ জাভি বলেছেন, ‘এটা সত্যিই লজ্জার, আজ আমাদের খেলায় সব ধরনের নেতিবাচক বিষয়গুলো উপস্থিত ছিল। এমন একটি পরিস্থিতিতে আমরা পড়েছিলাম যেখানে তাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অসম্ভব।