শিরোনাম
মাদ্রিদ, ৯ মে ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : শেষ মুহূর্তে সুপার সাব হোসেলুর দুই গোলে বায়ার্ন মিউনিখকে সেমিফাইনালে দ্বিতীয় লেগে ২-১ গোলে পরাজিত করে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
বুধবার সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আলফনসো ডেভিসের গোলে জার্মান জায়ান্টরা দ্বিতীয়ার্ধে লিড নিয়েছিল। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলটা যে রিয়াল মাদ্রিদ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যাদের ১৪ বারের শিরোপা জয়ের রেকর্ড রয়েছে। নিজেদের মাঠে এভাবে বিদায় নেয়াটা অন্তত রিয়ালকে মানায় না, এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই যেন শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেছে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা। তার ফলও পেয়েছে। শেষ ১০ মিনিট বায়ার্নের উপর চেপে বসা রিয়াল ঠিকই গোল আদায় করে নিয়েছে। ৮৮ ও ৯১ মিনিটে বদলী খেলোয়াড় জোসেলুর দুই গোলে নাটকীয় এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লস ব্লাঙ্কোসরা।
আগামী ১ জুন ওয়েম্বলির ফাইনালে রিয়ালের প্রতিপক্ষ জার্মানির আরেক ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। প্রথম সেমিফাইনালে পিএসজিকে বিদায় করে ১১ বছর পর ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করেছে ডর্টমুন্ড।
রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেছেন, ‘এটা সত্যিই অভাবনীয়, এর কোন ব্যাখ্যা হয়না।’
দলে সবসময়ই হোসেলুর অবস্থান ব্যাক-আপ স্ট্রাইকার হিসেবে। কালও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। ৮১ মিনিটে ফেডে ভালভার্দের পরিবর্তে খেলতে নেমে এখন তার নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে গেল। ইউরোপীয়ান আসরে এভাবেও ফিরে আসা যায়, যার শুরু করলেন এই স্প্যানিশ অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার। সান্তিয়াগোর সমর্থকদের আরো একটি স্মরণীয় রাত উপহার দিলেন হোসেলু।
ম্যাচ শেষে এই ইতিহাসের রচয়িতা হোসেলু বলেছেন, ‘এই ফিরে আসা আমাদের হৃদয়ের গভীর থেকে এসেছে। এটা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। কোচও আমাকে এই কথাই বলেছেন, তুমি হৃদয় দিয়ে আজ এই ম্যাচে আমাদের জয়ী করেছো।’
মাদ্রিদ শেষ পর্যন্ত সফল হলেও সার্জি গ্যানাব্রির ইনজুরিতে ২৭ মিনিটে মাঠে নামা কানাডিয়ান ডিফেন্ডার আলফোনসো ডেভিসের দুর্দান্ত গোলটিও অনেকদিন সবাই মনে রাখবে। ৬৮ মিনিটে ডেভিসের গোলে বায়ার্ন যখন এগিয়ে যায় তখন ২০১৩ সালের লন্ডনে অল-জার্মান ফাইনালের স্মৃতি আবারো ফিরে এসেছিল। কিন্তু ম্যাচের নাটকীয়তা তখনো বাকি। ২০১২ সালের পর এই প্রথম বায়ার্ন কোন শিরোপা ছাড়া মৌসুম শেষ করতে যাচ্ছে। বায়ার্ন গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যারের হাত ফসকে যাওয়া বল জালে ঠেলে দিয়ে হোসেলু প্রথমে মাদ্রিদের পক্ষে সমতা ফেরান। এই গোলের আগে অনেকবারই বায়ার্নকে একাই রক্ষা করেছেন নয়্যার।
বায়ার্ন ডিফেন্ডার মাথিস ডি লিট বলেছেন, ‘ঐ গোলের আগে নয়্যার যেভাবে একের পর শট রুখে দিয়ে আমাদের রক্ষা করেছে তা উল্লেখ করতেই হয়। কিন্তু এটাই ফুটবল, এখানে এমনটা যেকোন সময়ই ঘটতে পারে।’
প্রথম লেগের একাদশ থেকে তিনটি পরিবর্তন করে কাল মূল দল সাজিয়েছিলেন বায়ার্ন কোচ থমাস টাচেল। এসময় তিনি বদলী বেঞ্চে রাখেন অভিজ্ঞ থমাস মুলার ও লিঁও গোরেতকাকে। শুরু থেকেই মাদ্রিদের আধিপত্য লক্ষ্য করা গেছে। মাদ্রিদের পরপর দুটি শট দুর্দান্ত ভাবে রুখে দেন নয়্যার। প্রথমে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের শট রুখে দেবার পর ফিরতি বলে রডরিগোকে হতাশ করেন নয়্যার। ২৭ মিনিটে গ্যানাব্রি পেশীর ইনজুরিতে পড়লে ডেভিসকে নামাতে বাধ্য হন টাচেল। ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেন এ সময় কিছুটা বিপদজনক হয়ে উঠলেও মাদ্রিদ গোলবারে আন্দ্রি লুনিন ছিলেন অটল। ভিনিসিয়াসের ফ্রি-কিক কর্ণারের সাহায্যে রক্ষা করেন নয়্যার। দুই দলের আক্রমন পাল্টা আক্রমনে প্রথমার্ধ টেনশনের মধ্য দিয়েই শেষ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধ ছিল দুই দলের মধ্যে এগিয়ে যাবার লড়াই। ডেভিসের ক্রস কোনমতে রক্ষা করেন লুনিন। বামদিক থেকে ভিনি লো ক্রসে রডরিগো পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন। ৩৮ বছর বয়সী নয়্যার আবারো ব্রাজিলিয়ান দুই ফরোয়ার্ডের শট রুখে দিয়ে বায়ার্নকে রক্ষা করেন। ধীরে ধীরে রিয়াল আক্রমনের চাপ বাড়াতে থাকে। কিন্তু মিউনিখের মতই লস ব্লাঙ্কোসরা যখন আক্রমনের ধার বাড়ায় তার প্রতিশোধ নেয় বায়ার্ন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বামদিক থেকে কাট করে ৬৮ মিনিটে দারুন এক শক্তিশালী শটে ডেভিস বল জালে জড়ান। লুনিন ঝাঁপিয়ে পড়েও তা রক্ষা করতে পারেননি। কিছুক্ষনের মধ্যে কর্ণার থেকে নাচোর শটে মাদ্রিদ সমতা ফেরালেও ভিএআর রিভিউতে ধরা পড়ে শ্যুটের আগে জসুয়া কিমিচকে মুখে আঘাত করেছেন এই ডিফেন্ডার। যে কারনে গোলটি বাতিল হয়ে যায়।
ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে উন্মুখ হয়ে থাকা কোচ টাচেল এসময় কেনকে বদলী বেঞ্চে নিয়ে যান। মাদ্রিদ অবশ্য তাদের শেষ লড়াইটুকু উপহার দেবার জন্য তখনো অপেক্ষায় ছিল। ২০১৭ সালে বায়ার্ন থেকে বহিষ্কৃত আনচেলত্তি তখনো আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। ডাগ আউট থেকে বারবার খেলোয়াড়দের ঠান্ডা মাথায় উৎসাহ যুগিয়ে গেছেন। পুরো মৌসুমে ক্লাবের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আনচেলত্তির একটি সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত রিয়ালকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ৮১ মিনিটে তিনি ভালভার্দের পরিবর্তে হোসেলুকে মাঠে নামান। আর এতেই রিয়ালের ভাগ্যের চাকা ঘুড়ে যায়। ভিনিসিয়াসের স্ট্রাইক নয়্যার আটকাতে গিয়ে হাত ফসকে বল বেরিয়ে গেলে পোস্টের কাছে থেকে হোসেলু বল জালে জড়ান। দ্বিতীয় বিভাগের দল এস্পানিয়ল থেকে ধারে খেলতে আসা হোসেলু এরপর ইনজুরি টাইনে এন্টোনিও রুডিগারের পাসে রিয়ালকে জয়সূচক গোলটি উপহার দিয়েছেন। যদিও অফসাইডের কারনে প্রথমে গোলটি বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু রিভিউ দেখে গোল বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। ইনজুরি টাইমে প্রায় ১৫ মিনিট খেলা হয়েছে। এসময় ডি লিট বায়ার্নকে একটি গোলও উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু লাইন্সম্যান অফসাইডের পতাকা ওঠানোয় সেই গোলটি বাতিল করা হয় যা নিয়ে ম্যাচ শেষে টাচেল বেশ সমালোচনা করেছেন।
ডি লিট বলেছেন, ‘আমি এটা বলবো না যে রেফারির ভুলে মাদ্রিদ এগিয়ে গেছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত আজকের ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’