শিরোনাম
প্যারিস, ১১ মে, ২০২৪ (বাসস/এএফপি): এ মৌসুমের শেষে প্যারিস সেইন্ট-জার্মেই(পিএসজি) ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। রিয়াল মাদ্রিদই হতে পারে ফরাসি এই তারকা স্ট্রাইকারের পরবর্তী সম্ভাব্য গন্তব্য।
এই ঘোষনার সাথে সাথে ঘরের ক্লাবের সাথে এমবাপ্পের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের সমাপ্তির চিত্র সবার সামনে এলো। ১৮০ মিলিয়ন ইউরোতে ২০১৭ সালে মোনাকো থেকে এমবাপ্পে পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিওতে এ সম্পর্কে ২৫ বছর বয়সী এমবাপ্পে বলেছেন, ‘আমি সবার কাছে ঘোষনা করতে চাই যে এটাই পিএসজিতে আমরা শেষ বছর। আমি আর চুক্তি নবায়ন করছি না। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সব রোমাঞ্চের অবসান হবে। রোববার পার্ক ডি প্রিন্সেসে আমি আমার শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি।’
ইতোমধ্যেই পিএসজি চলতি মৌসুমে লিগ ওয়ানের শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে। এনিয়ে গত ১২ মৌসুমে ১০ম লিগ শিরোপা ঘরে তুলেছে প্যারিসের জায়ান্টরা। রোববার ঘরের মাঠে তুলসের বিপক্ষে ম্যাচের পরই কাতারি মালিকানাধীন ক্লাবটি তাদের শিরোপা হাতে তুলে নিবে। ঘরের মাঠে এটাই পিএসজির এবারের আসরের শেষ ম্যাচ।
লুইস এনরিকের দল পিএসজি মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের কাছে দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠে ১-০ গোলে পরাজয়ের মাধ্যমে দুই লেগ মিলিয়ে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে বিদায় নিয়েছে।
এর অর্থ হচ্ছে আগামী ১ জুন পিএসজির জার্সিতে এমবাপ্পের আর ওয়েম্বলিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলা হলোনা। পিএসজিতে সাত বছরের ক্যারিয়ারে ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের শিরোপাও অধরাই থেকে গেল।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে পিএসজিকে ব্যক্তিগত ভাবে এমবাপ্পে ক্লাব ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন। মৌসুম শেষের পর চুক্তি আর নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত এমবাপ্পে তখনই বলে দিয়েছিলেন। এবার সেই ঘোষনা প্রকাশ্যে এলো। ক্লাব ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত থাকলেও ২০১৮ বিশ^কাপ বিজয়ী এমবাপ্পে এর আগে কখনই জনসমুক্ষে কিছু বলেননি। এমনকি পিএসজি ছেড়ে কোন ক্লাবে যাচ্ছেন তাও স্পষ্ট করেননি। যদিও বিভিন্ন সূত্রমতে তার রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানা গেছে।
বিশেষ করে স্প্যানিশ গণমাধ্যম কয়েক মাস ধরেই ইঙ্গিত দিয়ে আসছিল পিএসজির সাথে বর্তমান চুক্তি শেষে লা গিা চ্যাম্পিয়ন দলেই যোগ দিতে যাচ্ছেন এমবাপ্পে।
ভিডিও বার্তায় এমবাপ্পে আরো বলেন, ‘এখানে অনেক বেশী আবেগ জড়িত। বিশে^র অন্যতম সেরা ও ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় ক্লাবে এতগুলো বছর খেলার সুযোগ পাওয়া সত্যিই সম্মানের। এই ক্লাবই আমাকে এখানে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে। একটি ক্লাবও যে কতটা চাপের মধ্যে থাকতে পারে তার প্রথম অভিজ্ঞতা আমি এখান থেকেই পেয়েছি। অবশ্যই পিএসজিতে আমি খেলোয়াড় হিসেবে আরো বেশী পরিনত হয়েছি। ইতিহাসে সেরা কিছু দলের বিপক্ষে সেরা কিছু চ্যাম্পিয়নের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেয়েছি। এখান থেকে বিদায় সত্যিই কঠিন। আমি আগে কখনই বুঝতে পারিনি এই ধরনের ঘোষনা দেয়াটা এতটা কঠিন। কিন্তু একইসাথে আমি বিশ^াস করি সাত বছর পর একটি নতুন চ্যালেঞ্জের প্রয়োজন ছিল।’
২০১৭ সালে টিনএজার হিসেবে ফ্রান্সের রাজধানীতে এসেছিলেন এমবাপ্পে। ঐ সময় মোনাকোকে লিগ শিরোপা জয়ে সহযোগিতা করার পুরস্কার হিসেবেই পিএসজি এমবাপ্পেকে দলে ভিড়িয়েছিল। প্রথমে ধারে পিএসজিতে যোগ দেবার পর তার চুক্তি স্থায়ী হয়। এখনো তার চুক্তির পরিমান ফুটবল ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ডের তালিকায় স্থান কওের আছে।
বার্সেলোনা থেকে নেইমারকে ২২২ মিলিয়ন ইউরোর বিশ^ রেকর্ডে চুক্তিভূক্ত করার এক সপ্তাহ পর এমবাপ্পে পিএসজিতে এসেছিলেন।
২০১১ সালে কাতারি মালিক পিএসজির দায়িত্ব নেবার পর থেকে ক্লাবটির চেহারা আমুল পাল্টে যায়। প্যারিসে তো বটেই ধীরে ধীরে ক্লাবটি ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোর মধ্যে জায়গা করে নেয়। দুই মৌসুমের জন্য তারা লিওনের মেসিকেও দলে নিয়েছিল। যদিও এতকিছুর পর ক্লাবের মূল লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় সম্ভব হয়নি। বিশে^র সেরা কিছু খেলোয়াড়কে বিপুল পরিমান অর্থের বিনিময়ে দলে নিয়েও ইউরোপের সাফল্য আসেনি।
২০২০ সালে তারা শিরোপা কাছাকাছি গিয়েও ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরে যায়। পিএসজির একাডেমি গ্র্যাজুয়েট কিংসলে কোম্যান তার সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে জয়সূচক গোলটি করেছিলেন।
ডর্টমুন্ডের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায়ের পর এমবাপ্পের সামনে ভবিষ্যত ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ফাইনালে খেলার আশাও শেষ হয়ে গেছে। সেমিফাইনালের দুই লেগে এমবাপ্পে কোন গোল পাননি।
সব ধরনের প্রতিযোগিতায় এ মৌসুমে এমবাপ্পে সব মিলিয়ে ৪৩ গোল করেছেন। এর মধ্যে লিগ ওয়ানে করেছেন ২৬ গোল। আগামী ২৫ মে ফ্রেঞ্চ কাপের ফাইনালে আরো একটি শিরোপা জয়ের সুযোগ তার সামনে রয়েছে। এছাড়া ক্লাব রেকর্ড ২৫৫ গোলের মাইলফলকও আরো সমৃদ্ধ করার সুযোগ রয়েছে। এ পর্যন্ত এমবাপ্পে লিগ ওয়ানের ছয়টি, ফরাসি কাপের তিনটি ও লিগ কাপের দুটি শিরোপা জয় করেছেন।
রোববারের ম্যাচের পর পিএসজির সামনে নিস ও রেলিগেশন খরায় থাকা মেটজের বিপক্ষে দুটি এ্যাওয়ে ম্যাচ বাকি থাকবে। এরপর কাপ ফাইনালে লিলির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এমবাপ্পের পিএসজি যুগের অবসান হবে।
এবারের মৌসুমের শুরু থেকেই এমবাপ্পেকে নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষরে বেশ চাপে রেখেছিল পিএসজি। বছরের শুরুতে ক্লাব ছাড়ার ইঙ্গিত দেয়ায় পিএসজি বস লুইস এনরিকের সাথেও তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কিন্তু সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে মেসি ও নেইমারের পথ ধরে এখন এমবাপ্পেও পিএসজি ছাড়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। পিএসজিকে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে অবশ্যই মানিয়ে নিতে হবে। কিন্তু এমবাপ্পের অনুপস্থিতি দলে বেশ অনুভূত হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।