শিরোনাম
লন্ডন, ২৬ মে ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : ম্যানচেস্টার সিটিকে ফাইনালে ২-১ গোলে পরাজিত করে এফএ কাপের শিরোপা জয় করেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এই জয়ে ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগের ভবিষ্যত কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পেল কিনা তা সময়ই বলে দিবে।
বাজে একটি মৌসুম কাটানোর কারনে ওয়েম্বলির এই ফাইনালের আগেই টেন হাগকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে ফেবারিট সিটিকে হারিয়ে এফএ কাপের শিরোপা শেষ পর্যন্ত ঘরে তোলায় ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ হয়তো দ্বিতীয়বার টেন হাগকে নিয়ে ভাববেন, এমনই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
টানা দ্বিতীয়বারের মত প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের ডাবল শিরোপা জয়ে সিটিই সুস্পষ্ট ফেবারিট ছিল। কিন্তু পেপ গার্দিওলার দলের বিপক্ষে নিজেকে প্রমানের ঠিকই পথ খুঁজে নিয়েছেন টেন হাগ। প্রথমার্ধে আলেহান্দ্রো গারাঞ্চো ও কোবি মেইনুর গোলে আট বছরে প্রথমবারের মত ইউনাইটেডের এফএ কাপ জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। ৮৭ মিনিটে জেরেমি ডকু আন্দ্রে ওনানার পাশ দিয়ে বল জালে জড়ালে সিটি শিবিরে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই গোল খুব একটা কাজে আসেনি।
মৌসুমের প্রায় পুরোটা সময়ই নিজেদের প্রমানে ব্যর্থ হওয়া ইউনাইটেডের হয়ে টেন হাগের দুই বছরের মেয়াদ হয়তো প্রায় শেষের পথে পৌঁছে গেছে। এফএ কাপের শিরোপা জয়ের পরও শেষ পর্যন্ত যদি তাকে বিদায় নিতেই হয় তবে সেটা সতীর্থ ডাচম্যান লুইস ফন গালের ওল্ড ট্রাফোর্ড থেকে বিদায়ের স্মৃতি ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। ২০১৬ সালে সাবেক কোচ ফন গালের অধীনে ইউনাইটেড ক্রিস্টাল প্যালেসকে হারিয় এফএ কাপের ফাইনালে জয়ী হবার দুইদিন পর ক্লাব থেকে তাকে ছাঁটাই করা হয়েছিল। টেন হাগ অবশ্য এ্যালেক্স ফার্গুসনের অধীনে ১৯৯০ সালে প্যালেসের বিপক্ষে এফএ কাপের ফাইনালে জয়ের থেকে অনুপ্রেরণা পেতেই পারেন। আগের মৌসুমে ফার্গুসনকে বরখাস্ত করার আলোচনা শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি দীর্ঘদিন ইউনাইটেডে টিকে গিয়েছিলেন। গতকাল টেন হাগের ম্যাচটিতে ওয়েম্বলিতে দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফার্গুসন। এছাড়াও ইউনাইটেডের শেয়ারহোল্ডার জিম র্যাটক্লিফও সহ-মালিক জোয়েল ও এভি গ্লেজারের সাথে ভিআইপি স্ট্যান্ডে উপস্থিত থেকে দলের জয় উপভোগ করেছেন।
এবারের মৌসুমে টেবিলের অষ্টম স্থানে থেকে লিগ শেষ করেছে ইউনাইটেড, ১৯৯০ সালের পর এতটা বাজেভাবে ইউনাইটেড মৌসুম শেষ করেনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে তাদের বিদায় নিতে হয়েছিল। টেন হাগের স্থানে থমাস টাচেল, মরিসিওর পোচেত্তিনো, গ্যারেথ সাউথগেটের নাম জোড়েসোড়েই শোনা যাচ্ছে। টেন হাগ অবশ্য বিশ^াস করেন দলের এই হতাশাজনক পারফরমেন্সের মূল কারন ছিল দীর্ঘ ইনজুরি তালিকা। দল যখন পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামে তখন যে ফাইনালে ট্রফি জিততে পারে তা টেন হাগ তার অধীনে তিনটি কাপ ফাইনালের দুটিতে শিরোপা নিশ্চিতের মাধ্যমে প্রমান করেছেন। গত বছর টেন হাগের অধীনে লিগ কাপের শিরোপা জয়ের মাধ্যমে ছয় বছরের ট্রফি খরা কাটিয়েছিল রেড ডেভিলসরা। মাত্র এক বছর আগে এফএ কাপে ফাইনালে এই সিটির কাছে পরাজয়ের মধুর প্রতিশোধ নিল এবারের ২-১ গোলে জয়ের মাধ্যমে। যদিও লিগে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সিটির থেকে ৩১ পয়েন্টে পিছিয়ে থেকে মৌসুম শেষ করেছে।
এফএ কাপ জয়ের মাধ্যমে ইউরোপা লিগে খেলা নিশ্চিত করেছে ইউনাইটেড। এর মাধ্যমে ২০১৪-১৫ মৌসুমের পর প্রথমবারের মত ইউরোপীয়ান আসরে না খেলার লজ্জা অন্তত এড়াতে পেরেছে।
১৭১ দিন আগে লিগে এ্যাস্টন ভিলার কাছে পরাজয়ের পর ঘরোয়া কোন আসরে ইউনাইটেডের কাছে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল সিটি। গত সপ্তাহে সিটি প্রথম কোন দল হিসেবে টানা চার মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছে। গত সাত মৌসুমে এটি ছিল তাদের ষষ্ঠ লিগ শিরোপা।
ম্যাচ শুরুর প্রথম মিনিটেই লিসান্দ্রো মার্টিনেজ আর্লিং হালান্ডকে আটকানোর ঘটনায় সিটির পেনাল্টির শক্তিশালী আবেদন নাকচ হয়ে যায়। কিছুটা রক্ষনাত্মক কৌশলে খেলতে নামা ইউনাইটেড ধীরে ধীরে সিটির উপর চড়াও হতে থাকে। ৩০ মিনিটে তার ফলও পেয়ে যায়। দিয়োগো ডালটের বাড়িয়ে দেয়া বলে জাসকো গাভারডিওর শটের সুযোগ নিতে দেননি। এই লেফট-ব্যাক মনে করেছিলেন তিনি হয়তো অফ-সাইড পজিশনে আছেন। সে কারনে সিটি গোলরক্ষক স্টিফান ওরটেগার মাথার উপর দিয়ে ডালট হেড করে বল পাঠিয়ে দেন গারাঞ্চোর কাছে। ওরটেগা লাইনের উপর থেকে কিছুটা উপরে উঠে এসেছিলেন। সেই সুযোগই কাজে লাগিয়েছেন গারাঞ্চো। ফাঁকা পোস্টে সহজ ফিনিশিংয়ে বল জালে জড়ান গারাঞ্চো। ২০ বছর আগে মিওলয়ালের বিপক্ষে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর পর এফএ কাপের ফাইনালে টিনএজার হিসেবে গোলের কৃতিত্ব দেখালেন ১৯ বছর বয়সী গারাঞ্চো।
মাত্র ৯ মিনিট পর আরেক ১৯ বছর বয়সী টিনএজার মেইনু সিটির এলোমেলো রক্ষনভাগকে আরো শাস্তি দিয়েছে। রাইট উইং থেকে গারাঞ্চোর বাড়িয়ে দেয়া বলে ফার্নান্দেসের প্রথম পাসে ফাঁকায় দাঁড়ানো মেইনু পোস্টের খুব কাছে থেকে ব্যবধান দ্বিগুন করেন।
বিরতির পর সিটি ম্যাচে ফিরে আসার জন্য প্রানপন চেস্টা করে । শেষ ভাগে ডকুর শট ওনানাকে পরাস্ত করলে ফাইনালে কিছুটা উত্তেজনা ফিরে আসে। কিন্তু এই গোল ইউনাইটেডকে আটকাতে যথেষ্ঠ ছিলনা।