শিরোনাম
লন্ডন, ২ জুন ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে বরুসিা ডর্টমুন্ডকে ২-০ গোলে পরাজিত করে রেকর্ড ১৫ বারের মত শিরোপা ঘরে তুলেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ওয়েম্বলিতে শনিবার ডানি কারভাহাল ও ভিনিসিয়াস জুনিয়রের গোলের মাদ্রিদের জয় নিশ্চিত হয়।
রাইট-ব্যাক কারভাহাল ৭৪ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্ণার থেকে দুর্দান্ত হেডে মাদ্রিদকে এগিয়ে দেন। এরপর ৮৩ মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়র স্প্যানিশ জায়ান্টদের জয় নিশ্চিত করেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ক্লাব হিসেবে আগেই মাদ্রিদের গায়ে যে জনপ্রিয়তার তকমা লেগেছিল এই জয়ে তা আরো কিছুটা সমৃদ্ধ হলো।
এনিয়ে মাদ্রিদ তাদের গত নয়টি ইউরোপীয়ান কাপ ফাইনালেই জয়ী হলো, একইসাথে গত ১১ মৌসুমে ছয়বার এই প্রতিযোগিতার ট্রফি হাতে নিল।
যদিও এই প্রথমবারের মত কোন ফাইনালে আন্ডারডগ কোন দলের বিপক্ষে তাদের খেলতে হয়েছে এবং অনেকটা চাপে থেকে সৌভাগ্যের জোড়ে এই জয় ছিনিয়ে আনতে হয়েছে। প্রথমার্ধে ডর্টমুন্ডই একের পর এক আক্রমনে বিপদে ফেলেছিল মাদ্রিদকে। নিকলাস ফুলক্রুগের শট পোস্টে লাগে, কারিম আদেইয়েমি গোলরক্ষক থিবো কোর্তেয়াকে একা পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
মাদ্রিদ অবশ্যই ইউরোপের এলিট এই প্রতিযোগিতায় কিভাবে জয়ের পথ খুঁজে নিতে হয় তা খুব ভালভাবেই জানে। লন্ডনে আরো একবার তা দেখলো পুরো ফুটবল বিশ^।
মাদ্রিদ বস কার্লো আনচেলত্তি বলেছেন, ‘তারা আমাদেরকে ভাল খেলতে বাধ্য করেছে, দ্বিতীয়ার্ধে আমরা তুলনামূলক ভাল শুরু করেছি। এই দলটিকে নিয়ে আমি দারুন সন্তুষ্ট। কারন আমরা সবসময় সেরাটা দিতে না পারলেও কখনই ম্যাচ ছেড়ে দেইনা।’
কারভাহাল, ক্রুস, নাচো, লুকা মড্রিচ- মাদ্রিদের এই চার তারকা গতকাল রিয়াল লিজেন্ড পাকো জেনটোর সাথে ছয়টি ইউরোপীয়ান শিরোপা জয়ের ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন।
একইসাথে আনচেলত্তি পঞ্চম শিরোপা জয়ের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কোচ হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন।
তিন বছর আগে ইউরোর ফাইনালে টিকেটিবিহীন দর্শকদের কারনে যে সংঘর্ষ হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কাল ওয়েম্বলিতে বাড়তি আড়াই হাজার নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত ছিল। কিন্তু তারপরও ওয়েম্বলির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে, ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে তিন ব্যক্তি মাঠের ভিতর প্রবেশ করে। এদের মধ্যে একজন আবার জুড বেলিংহাম ও ভিনিসিয়াসকে পাশে নিয়ে ছবিও তুলেছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে মাঠে প্রবেশ করা পাঁচজনসহ এ পর্যন্ত ৫৩জনকে আটক করা হয়েছে।
ম্যাচের আগে আনচেলত্তি জানিয়েছিলেন দুপুরের ঘুম ভাঙ্গার পর তার নাকি নিজেকে সিংহ বলে মনে হয়েছে। কিন্তু প্রথমার্ধে তার দল যেভাবে ডর্টমুন্ডের আক্রমন সামলাতে ব্যস্ত ছিল তাতে ম্যাচের ভাগ্য ভিন্ন হলে অবাক হবার কিছুই থাকতো না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের মৌসুমে হাঁটুর গুরুতর ইনজুরির কারনে কোর্তোয়া একটি ম্যাচও খেলেননি। কিন্তু ফাইনালে এই বেলজিয়ান তারকার উপরই আস্থা রেখেছিলেন আনচেলত্তি। আর তাকে বিবেচনা করে আনচেলত্তি যে কোন ভুল করেননি তা শুরু থেকেই প্রমান দিয়েছেন কোর্তোয়া।
ডর্টমুন্ডের সবচেয়ে সেরা সুযোগটি পেয়েছিলেন আদেইয়েমি। কারভাহাল এই জার্মান স্ট্রাইকারের গতির সাথে পেরে উঠেননি। ম্যাটস হামেলসের দুর্দান্তপ পাস থেকে আদেইয়েমি প্রথম সুযোগেই শট নিলে কোর্তোয়া চাপে পড়েন। যদিও শেষ পর্যন্ত শটটি কারভাহালই ব্লক করেন। ডর্টমুন্ডে প্রথম মৌসুমে সমর্থকদের কাছে ফেবারিট হয়ে ওঠা ফুলক্রুগ বিরতির আগে ডেডলক প্রায় ভেঙ্গেই ফেলেছিলেন। ইয়ান মাস্তেনের থ্রু বলে তিনি শট নিলেও পোস্টে লেগে তা ফেরত আসে।
ডর্টমুন্ড কোচ এডিন টারজিক বলেছেন, ‘আমরা গোলের ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারিনি। ম্যাচে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে আমরা বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিলাম, ঐ গোলগুলো হলে ম্যাচের চিত্র পাল্টে যেত। কিন্তু তা না হওয়াতে সবাই দেখেছে কেন রিয়াল আজ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জয় করেছে।’
প্রথমার্ধে ভাগ্য সহায় না হলেও দ্বিতীয়ার্ধে ঠিকই ঘুড়ে দাঁড়ায় স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা। ৪৮ মিনিটে শেষ পর্যন্ত ক্রুসের ট্রেডমার্ক ফ্রি-কিক রুখে দিয়ে ডর্টমুন্ড গোলরক্ষক গ্রেগর কোবেল নিজের উপস্থিতি জানান দেন।
মাত্র ১২ মাস আগে ১০০ মিলিয়ন ইউরোরও বেশী অর্থের বিনিময়ে ডর্টমুন্ডের তিন বছরের ক্যারিয়ার ছেড়ে মাদ্রিদে যোগ দিয়েছিলেন ইংলিশ মিডফিল্ডার জুড বেলিংহাম। তাকে কাল অনেকটাই বাক্সবন্দী করে রেখেছিলেন সাবেক সতীর্থরা। ভিনিসিয়াসের ক্রস থেকে অল্পের জন্য ফাইনাল টাচটি দিতে পারেননি বেলিংহাম। কাল পুরো ম্যাচে এই একটি সুযোগই তৈরী করেছিলেন ইংলিশ এই তরুণ। ম্যাচ শেষের ১৬ মিনিট ক্রুসের নিখুঁত কর্ণার থেকে কারভাহালের শক্তিশালী হেড আটকানোর সাধ্য ছিলনা কোবেলের। এরপর একে একে এডুয়ার্ডো কামভিনগা ও নাচোর শট দারুনভাবে রুখে দিয়েছেন কোবেল। ৮৩ মিনিটে বেলিংহামের পাসে ভিনিসিয়াসের গোলে মাদ্রিদের জয় নিশ্চিত হয়।