বাসস
  ১৯ জুন ২০২৪, ১৪:১৫

শেষ মুহূর্তের গোলে পর্তুগালের নাটকীয় জয়, জর্জিয়াকে উড়িয়ে দিয়েছে তুরষ্ক

লিপজিগ, ১৯ জুন ২০২০ (বাসস/এএফপি) : পিছিয়ে পড়েও শেষ মুহূর্তে ফ্রান্সিসকো কনসেইকাওর গোলে চেক প্রজাতন্ত্রকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে নাটকীয় জয়ে ইউরো যাত্রা শুরু করেছে সাবেক চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল।
এর আগে ডর্টমুন্ডে গ্রুপ-এফ’র দারুন উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে জর্জিয়াকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে তুরষ্ক।
রবার্তো মার্টিনেজের পর্তুগাল বাছাইপর্বে শতভাগ জয় নিয়ে মূল পর্বে খেলতে এসেছে। কাল লিপজিগে বৃষ্টি বিঘিœত ম্যাচে চেকদের বিপক্ষে জয়ী হতে তাদের বেশ কষ্টই করতে হয়েছে।
এই ম্যাচের মাধ্যমে পর্তুগীজ সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো রেকর্ড ষষ্ঠ ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ খেলার রেকর্ড গড়েছেন। একইসাথে ৪১ বছর বয়সে মাঠে নেমে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার পেপে সবচেয়ে বেশী বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোতে খেলার রেকর্ড গড়েছেন।
৬২ মিনিটে লুকাস প্রোভোডের দারুন স্ট্রাইকে চেকরা এগিয়ে যায়। রবিন রানাকের আত্মঘাতি গোলে ৬৯ মিনিটে সমতায় ফিরে পর্তুগাল। এরপর ইনজুরি টাইমে কনসেইকাও জয়সূচক গোলটি করেন।
ম্যাচ সেরা পর্তুগালের মিডফিল্ডার ভিটিনহা বলেছেন, ‘আমরা আরো ভাল খেলার আশা করেছিলাম। আমাদের মধ্যে আরো বড় কিছুর আকাঙ্খা আছে, যদিও শুরুটা জয় দিয়ে হয়েছে, এখন এগিয়ে যাবার পালা। ইউরোতে এগিয়ে যেতে হলে আরো শক্তিশালী ভাবে নিজেদেও প্রমান করতে হবে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত: প্রথম গোল আমরাই হজম করি। যে কারনে কিছুটা নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। চেক তাদের প্রথম সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে। আমরা ধৈর্য্য ধরে তাদেরকে প্রতিহত করেছি।’
পর্তুগালের সমর্থকরা পুরো ম্যাচেই তাদের প্রিয় তারকা রোনাল্ডোর নাম ধরে চিৎকার করেছেন। এর আগে শনিবার পর্তুগালের প্রথম অনুশীলন সেশনে প্রায় ৮ হাজার সমর্থক উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই এসেছিল রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক তারকা ৩৯ বছর বয়সী রোনাল্ডোকে এক পলক দেখার জন্য। কাল রোনাল্ডোর রেপ্লিকা জার্সি পড়ে হাজারো ভক্ত স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন। যদিও দেশের হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও আরো বেশ কয়েকটি রেকর্ডের অধিকারী রোনাল্ডোর গোল তারা দেখতে পায়নি। চেকদের কঠোর রক্ষন ভেঙ্গে রোনাল্ডোর পক্ষে গোল করা সম্ভম হয়নি।
যদিও তিনবার তাকে হতাশ করেছে চেক গোলরক্ষক জিনড্রিচ স্টানেক। হেডের সাহায্যে একটি গোলও তিনি করেছিলেন। কিন্তু অফসাইডের কারনে সেটি বাতিল হয়ে যায়।
দিয়োড়ো জোতাও একটি ফিরতি শটে বল জালে জড়িয়েছিলেন। কিন্তু ভিএআর নিশ্চিত করে আল নাসর স্ট্রাইকার রোনাল্ডো গোলের আগে ফাউল করেছেন। কাল অবশ্য সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন ২১ বছর বয়সী পোর্তো উইঙ্গার কনসেইকাও। সাবেক পর্তুগীজ তারকা সার্জিও কনসেইকার ছেলের গোলেই শেষ মুহূর্তে পর্তুগীজদের জয় নিশ্চিত হয়। ম্যাচ শেষে কোচ মার্টিনেজ বলেছেন, ‘ফ্রান্সিসকো আমার দলে ভবিষ্যত। পুরো যোগ্যতা নিয়ে সে জাতীয় দলে এসেছে। একইসাথে প্রমান করেছে যেকোন মুহূর্তেই সে দলকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
উইগান ও এভারটনের সাবেক কোচ মার্টিনেজ তার দলের পারফরমেন্সের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘আজ আমরা জয়ী হয়েছি। কারন পুরো দল সংঘবদ্ধ ছিল। এই দলটির নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া বেশ ভাল। বেশ কিছুদিন ধরেই সবাই একসাথে খেলছে। গোল হজমের পর একে অন্যকে দায়ী করা খুব সহজ ছিল। কিন্তু কেউই তা করেনি। উল্টো গোল পরিশোধে একে অপরকে সহযোগিতা করেছে।’
কঠিন লড়াইয়ের পর এই ধরনের পরাজয়ে দারুন হতাশা প্রকাশ করেছে চেক প্রজাতন্ত্র। দলের একমাত্র গোলদাতা প্রোভোড বলেছেন, ‘পুরো ৯০ মিনিট এভাবে খেলার পরও জিততে না পারা সত্যিই হতাশার। আমরা সবাই আজ জয়ের জন্য সবকিছু দিয়েছি। কিন্তু একেবারে শেষ মিনিটে এসে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। দলের রক্ষনভাগ দুর্দান্ত খেলেছে, শুধুমাত্র একটু সৌভাগ্যের প্রয়োজন ছিল।’
দিনের আরেক ম্যাচে সমর্থকদের দুর্দান্ত সমর্থনে তুরষ্ক তাদের আস্থার প্রতিদান দিয়েছে। ইউরোতে প্রথমবারের মত খেলতে আসা জর্জিয়াও ছেড়ে কথা বলেনি। রিয়াল মাদ্রিদের প্লেমেকার আরডা গুলার দুর্দান্ত এক গোলে তুরষ্কের জয় নিশ্চিত করেন। এছাড়াও স্কোরশিটে আরো নাম লিখিয়েছেন মেরেত মুলডার ও কেরেম আকটুরকোগ্লু।
মুলডারের গোল জর্জেস মিকাওটাজে পরিশোধ করার পর জর্জিয়া বেশ বিপদজনক হয়ে উঠেছিল। নাপোলি তারকা কাভিচা কাভারাটসখেইলা তার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। কিন্তু এই পরাজয় সত্তেও তার দল প্রথম ম্যাচেই নিজেদের শক্তিমত্তার যথেষ্ট প্রমান দিয়েছে। চেক প্রজাতন্ত্র ও পর্তুগালের বিপক্ষে পরবর্তী দুই ম্যাচে জর্জিয়াকে নিয়ে প্রতিপক্ষ দলগুলোকে বাড়তি সতর্ক থাকতেই হবে।
তুরষ্কের কোচ ভিনসেনজো মনটেলা বলেছেন, ‘ইউরোতে এই ধরনের ম্যাচই সবাই দেখতে চায়। কঠিন মুহূর্তে সমর্থকরা আমাদের দারুনভাবে সমর্থন করেছে। এই জয়টা তাদের প্রাপ্য। আজ আমার ৬০তম জন্মদিন। ছেলেরা আমাকে জন্মদিনের সেরা উপহার দিয়েছে।’