শিরোনাম
লিপজিগ, ২০ জুন ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : তারকা সমৃদ্ধ অভিজ্ঞ দল হলেও কোন না কোনভাবে কিলিয়ান এমবাপ্পের উপস্থিতি ফ্রান্সকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগায়। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে নাক ভেঙ্গে যাওয়ায় এমবাপ্পেকে পাচ্ছে না কোচ দিদিয়ের দেশ্যম। যে কারনে বাধ্য হয়ে তাকে প্ল্যান-বি’র দিকে হাত বাড়াতে হচ্ছে।
অধিনায়ক এমবাপ্পে সোমবার অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ডাসেলডর্ফে প্রথম ম্যাচে একেবারে শেষ মিনিটে হেড করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার কেভিন ডানসোর ঘাড়ে আঘাত লেগে নাক ভাঙ্গেন। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন অলিভার গিরুদ। ম্যাচটিতে ফেবারিট ফ্রান্স ১-০ গোলে জয়ী হয়ে পূর্ন তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। রিয়াল মাদ্রিদে সদ্য যোগ দেয়া এই তারকা ফরোয়ার্ডের শটে ম্যাক্সিমিলিয়ান ওবারের আত্মঘাতি গোলে ফ্রান্সের জয় নিশ্চিত হয়।
ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশন পরবর্তীতে জানিয়েছে এমবাপ্পে কোন ধরনের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন নেই। কিন্তু একইসাথে তারা বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে মাঠে নামতে হলে তাকে মাস্ক পড়ে খেলতে হবে। যদিও ডাচদের বিপক্ষে লিপজিগের ম্যাচের আগে ২৫ বছর বয়সী এমবাপ্পে পুরোপুরি ফিট হতে পারেননি।
কোচ দিদিয়ের দেশ্যম আশা করছে তার দল ইতিবাচক ফল নিয়েই মাঠ ছাড়বে। এই ম্যাচে জিততে পারলেই শেষ ষোলর টিকেট পাবে ফ্রান্স। আর তা হলে গ্রুপ-ডি’র ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষেও এমবাপ্পেকে বিশ্রামে রাখতে পারবেন দেশ্যম।
কিন্তু এই মুহূর্তে বিশে^র অন্যতম সেরা এই স্ট্রাইকারকে ছাড়া নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে লেস ব্লুজরা যথেষ্ঠ শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। এ প্রসঙ্গে অবশ্য মিডফিল্ডার আদ্রিয়ের রাবোয়িত আত্মবিশ^াসী মন্তব্য করেছেন, ‘অবশ্যই সে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়, আমাদের অধিনায়ক, আমাদের নেতা। সে কারনেই তার অনুপস্থিতি দলে প্রভাব পড়বে। কিন্তু আমাদের দলটি একটি ভিন্নধর্মী দল। বেঞ্চে যারা রয়েছে তারা সমান প্রতিভাবান। কিলিয়ানের বদলী হিসেবে দলে যথেষ্ট খেলোয়াড় মজুত আছে। বেঞ্চের খেলোয়াড়দের উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। তাদের প্রতিভা নিয়েও কোন সন্দেহ নেই।’
গিরুদ ও থিয়েরি অঁরির পর ৮০ ম্যাচে ৪৭ গোল করে জাতীয় দলের জার্সিতে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন এমবাপ্পে। ফ্রান্সের শেষ ছয় ম্যাচে এমবাপ্পে মাত্র একটি গোল করেছেন। লুক্সেমবার্গের বিপক্ষে ইউরোর প্রস্তুতি ম্যাচে তিনি গোলটি করেন।
তবে কাতারে সর্বশেষ বিশ^কাপে এমবাপ্পে দুর্দান্ত খেলেছেন। পুরো টুর্ণামেন্টে করেছেন সর্বমোট আট গোল, ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন।
২০২৪ ইউরো বাছাইপর্বে দুইবার নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হয়েছে ফ্রান্স। প্যারিসে ৪-০ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে এমবাপ্পে জোড়া গোল করেন। এরপর আমাস্টারডামে ফিরতি ম্যাচেও ফ্রান্স ২-১ ব্যবধানে জয়ী হয়।
সাত বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার শেষে সদ্যা পিএসজি ছাড়া এমবাপ্পেকে বাদ দিয়ে ফ্রান্স মাঠে কেমন পারফর্ম করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। এমবাপ্পেকে বদলী বেঞ্চে রেখে গত সেপ্টেম্বরে জার্মানির কাছে প্রীতি ম্যাচে দেশ্যমের দল ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। প্রাক-টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচেও খর্বশক্তির কানাডার সাথে গোলশুন্য ড্রয়ের ম্যাচটিতে একেবারে শেষ মুহূর্তে মাঠে নেমেছিলেন এমবাপ্পে।
এমবাপ্পেকে ছাড়া ফ্রান্সের আক্রমনভাগ সমান শক্তিমত্তা যে দেখাতে পারবেনা সেটা সহজেই অনুমেয়। যদিও এখনো পর্যন্ত ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপে কোন গোল করতে পারেননি এমবাপ্পে। তিন বছর আগে সর্বশেষ ইউরোতে এমবাপ্পে কোন গোল করতে ব্যর্থ হন। এমনকি শেষ ষোলতে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে তার পেনাল্টি মিসেই ফ্রান্স বিদায় নিয়েছিল।
অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে গোলরক্ষককে একা পেয়েও তিনি কাজে লাগাতে পারেননি। এমবাপ্পের অনুপস্থিতিতে দেশ্যমের হাতে নিশ্চিতভাবে একটি বিকল্প রয়েছে, অভিজ্ঞ গিরুদ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গিরুদের মূল দলে খেলার সম্ভাবনাই বেশী। এই টুর্নামেন্টের পর ৩৭ বছর বয়সী গিরুদ এমএলএস’এ যোগ দিচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি উরুর সামান্য ইনজুরিতে ভুগছেন। কাতারে তিনি ফ্রান্সের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। শেষ মুহূর্তে করিম বেনজেমা ইনজুরির কারনে দলে থাকতে না পারায় গিরুদের সামনে নিজেকে প্রমানের দরজা খুলে যায়।
অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পর গিরুদ বলেছেন, ‘আমার মানসিক পরিকল্পনা সবসময় একই থাকে। কোচ যখনই আমাকে সুযোগ দিক না কেন আমি শতভাগ দেবার চেষ্টা করি। সবাই জানে আমি সবসময় দলের চিন্তা করি, নিজের চিন্তা আগে মাথায় আসেনা।’
আরো একটি অপশন দেশ্যমের হাতে রয়েছে। লেফট উইং এবং সেন্ট্রাল রোলে তিনি মার্কাস থুরামকে খেলাতে পারেন। ২০ ম্যাচে এ পর্যন্ত থুরাম দেশের হয়ে মাত্র দুই গোল করেছেন। এর মধ্যে একটি আবার পুঁচকে জিব্রালটারের বিপক্ষে।
এছাড়াও আরো রয়েছেন রানডাল কোলো মুয়ানি। কিন্তু পিএসজিতে এমবাপ্পের কারনে মূল দলে জায়গা না পেয়ে কঠিন একটি মৌসুম কাটানোর পর তার আত্মবিশ^াসে ঘাটতি রয়েছে।
একটি বিষয় অন্তত নিশ্চিত যে এন’গোলো কান্তে দলে ফেরায় রক্ষনভাগে যে শক্তিশালী পারফরমেন্স ফ্রান্স অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে দেখিয়েছে তাতে অন্তত এমবাপ্পে ফেরার আগে দলকে এই বিভাগ নিয়ে কোন চিন্তা করতে হচ্ছে না। সে কারনে প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন তাদের প্রতিরোধ করার যথেষ্ঠ শক্তি বর্তমান ফরাসি দলটির রয়েছে।