শিরোনাম
ফ্রাঙ্কফুর্ট, ২৪ জুন ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : স্টপেজ টাইমে নিকলাস ফুলক্রুগের গোলে সুইজারল্যান্ডের সাথে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করে এ-গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবেই নক আউট পর্ব নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক জার্মানি। এদিকে বার্নাবাস ভারগার গুরুতর ইনজুরির দিনের স্কটল্যান্ডকে ১-০ গোলে পরাজিত করে ইউরো থেকে বিদায় করে নিজেদের আশা টিকিয়ে রেখেছে হাঙ্গেরি।
ফ্রাঙ্কফুর্টে ড্যান এনডোয়ের প্রথমার্ধের ২৮ মিনিটে গোলে এগিয়ে গিয়েছিল সুইজারল্যান্ড। এই ম্যাচে জয়ী হতে পারলে জার্মানিকে টপকে গ্রুপের শীর্ষে উঠতে পারতো সুইসরা। কিন্তু ফুলক্রুগের শেষ মুহূর্তের হেডে জুলিয়ান নাগলসম্যানের দল ৭ পয়েণ্ট নিয়ে শেষ ষোল নিশ্চিত করেন।
ম্যাচ শেষে নাগলসম্যান বলেছেন, ‘ম্যাচের শেষ ভাগে এই এক পয়েন্ট আমাদের প্রাপ্য ছিল। আমরা ফিরে আসার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছি। যোগ্য দল হিসেবেই আমরা আজ এক পয়েন্ট নিয়ে বাড়ি ফিরছি। নিকলাস সবসময়ই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় । বদলী হিসেবে মাঠে নামার পর দলের ভাগ্য নির্ধারনী গোল করা ঐ খেলোয়াড়টির জন্য এবং একই সাথে দলের জন্যও গুরুত্বপূর্ন।’
১৯৯৬ সালে সর্বশেষ ইউরো জয়ী জার্মানি শেষ ষোলতে গ্রুপ-সি’র রানার্স-আপ দলের মুখোমুখি হবে। বর্তমানে ঐ গ্রুপের টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডেনমার্ক। আগামীকাল গ্রুপের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের থেকে দুই পয়েন্ট পিছিয়ে থাকা ড্যানিশরা সার্বিয়ার মোকাবেলা করবে।
এছাড়া সব কিছু ঠিক থাকলে সম্ভাব্য কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির দেখা হতে পারে স্পেনের সাথে। টুর্নামেন্টে এখনো পর্যন্ত সেরা ফর্মে থাকা দলগুলোর মধ্যে স্পেন অন্যতম।
এনিয়ে টানা ষষ্ঠ বড় কোন টুর্নামেন্টে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করলো সুইজারল্যান্ড। পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ-এ’র রানার্স-আপ হিসেবে শেষ ষোলতে তাদের প্রতিপক্ষ গ্রুপ-বি’র দ্বিতীয় দল।
সুইজারল্যান্ডের কোচ মুরাত ইয়াকিন বলেছেন, ‘আমরা লড়াই করেছি, কিন্তু এই ধরনের একটি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সবসময়ই এগিয়ে থাকা কঠিন। তারপরও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।’
স্কটল্যান্ড ও হাঙ্গেরিকে প্রথম দুই ম্যাচে হারিয়ে ইতোমধ্যেই শেষ ষোল নিশ্চিত করা জার্মানি ২৮ মিনিটে পিছিয়ে পড়ে। রেমো ফ্রেলার্সের ক্রসে পোস্টের খুব কাছে থেকে দারুন এক ভলিতে জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যারকে পরাস্ত করেন এনডোয়ে। গত মৌসুমে বোলোনিয়ার হয়ে এনডোয়েও ফ্রেলার দুজনইে সিরি-এ লিগে খেলেছেন। জার্মানির সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন জোনাথন টাহ। পরপর দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড পাবার কারনে নক আউট পর্বের প্রথম ম্যাচে এই সেন্টার-ব্যাক খেলতে পারছেন না। জামাল মুসিয়ালার শট দারুনভাবে রুখে দেন সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সোমার। ইকে গুনডোগানের শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত ইনজুরি টাইমে ফুলক্রুগ আর কোন ভুল করেননি।
এদিকে স্টুটগার্টে ভয়ঙ্কর ইনজুরিতে পড়া স্ট্রাইকার ভারগার জন্য ম্যাচ প্রায় ৮ মিনিট বন্ধ ছিল। ৭৪ মিনিটে একটি লং ক্রস ধরতে গেলে স্কটল্যান্ডের গোলরক্ষক এ্যানগাস গুন তা ধরতে এগিয়ে আসেন। আর তখনই ভারগার সাথে তার সংঘর্ষ হয়। ২৯ বছর বয়সী ভারগাকে ঘিড়ে চিন্তিত সতীর্থরা অনেকটাই মুষড়ে পড়েছিল। মাঠের ভিতরেই চারদিকে লাল শিটে আবৃত করে মেডিকেল টিম ভারগাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়। এই ঘটনা ২০২০ ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ড্যানিশ তারকা মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের হৃদরোগে আক্রান্তের ঘটনারই স্মৃতি সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছিল। ভারগাকে পরবর্তীতে স্ট্রেচারে করে মাঠ থেকে বের করে তাৎক্ষনিকভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেবার পথে ভারগার জ্ঞান ছিল। পরবর্তীতে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে ভারগার চিকবোনের হাড় ভেঙ্গে গেছে। তার অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও খুব দ্রুতই অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে।
হাঙ্গেরি উইঙ্গার রোলান্ড সালাই বলেছেন ঘটনাটি খুবই ভয়াবহ ছিল।
গ্রুপের কোন ম্যাচেই জয়ী হতে না পারায় স্কটল্যান্ডের বিদায় নিশ্চিত হয়েছে। আরো একবার বড় কোন টুর্ণামেন্টে নক আউট পর্বে খেলার অপেক্ষা তাদের দীর্ঘ হলো। এনিয়ে আটটি বিশ^কাপ ও তিনটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে স্কটিশরা গ্রুপ পর্ব থেকেই বাড়ি ফিরেছে। এবার তিন ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট নিয়ে তাদের বাড়ির পথে রওয়ানা দিতে হচ্ছে।
স্টিভ ক্লার্কের দল প্রথম ম্যাচে জার্মানির কাছে বড় ব্যবধানে বিধ্বস্ত হবার পর দ্বিতীয় ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের সাথে ড্র করে আশা টিকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু কাল স্টপেজ টাইমের ১০ মিনিটে কেভিন সোবোথের গোলে তাদের বিদায় নিশ্চিত হয়। বদলী খেলোয়াড় স্টুয়ার্ট আর্মস্ট্রংয়ের বিপক্ষে একটি চ্যালেঞ্জে পেনাল্টির জোড়ালো আবেদন করেও সফল হতে পারেনি স্কটল্যান্ড।
এ সম্পর্কে ক্লার্ক বলেন, ‘আমি বুঝতে পারিনা ভিএআর কি দেখে। নিশ্চিত একটি পেনাল্টি থেকে আজ আমরা বঞ্চিত হয়েছি। সব মিলিয়ে ইউরো থেকে বিদায়ে আমরা সত্যিই হতাশ।’
তিন ম্যাচে তিন পয়েণ্ট নিয়ে হাঙ্গেরি হয়তোবা শেষ ষোলতে খেলতে পারবে না।