শিরোনাম
ত্রিনিদাদ, ২৫ জুন ২০২৪ (বাসস) : ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মত আইসিসির কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠার লক্ষ্য নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপ নবম আসরের প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা-আফগানিস্তান। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপ মিলিয়ে সাতবার সেমিফাইনালে খেললেও ফাইনালে মঞ্চে নামার সুযোগ হয়নি প্রোটিয়াদের। ফাইনালে খেলতে না পারার বন্ধ্যাত্ব এবার ঘোচাতে মরিয়া অষ্টমবারের মত আইসিসি টুর্নামেন্টের সেমিতে উঠা দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্যদিকে, ফাইনাল ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না প্রথমবারের মত আইসিসির কোন ইভেন্টের সেমিফাইনালে জায়গা করে নেওয়া আফগানিস্তান।
ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে আগামী ২৬ জুন বৃহস্পতিবার টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তান।
গ্রুপ পর্বে ৪ ম্যাচের সবগুলোতে জিতে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে হারিয়েছিলো তারা।
গ্রুপ পর্বের মত সুপার এইটেও শতভাগ সাফল্য পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সুপার এইটে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের সেমিফাইনালে উঠে প্রোটিয়ারা। গ্রুপ পর্বের ৪ ও সুপার এইটে ৩ ম্যাচসহ টানা ৭ জয় দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গী।
টানা ৭ জয়ের মধ্যে ৬টিতে ঘাম ঝরিয়ে ও ভাগ্যের জোরে জিততে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। কিন্তু সেমিফাইনালের মঞ্চে শ^াসরুদ্ধকর জয় চান না প্রোটিয়া অধিনায়ক আইডেন মার্করাম। দাপুটে জয়ে প্রথমবারের মত ফাইনালে নাম লেখানোর স্বপ্ন মার্করামের, ‘সেমিফাইনালে উঠতে পেরে দারুণ তৃপ্তি লাগছে। সেমিতে দাপটের সাথে জিততে চাই। আগের সাত ম্যাচে অনেক ভুল করেছি আমরা। আশা করি, সেমিতে পুরনো ভুলগুলো হবে না। তবে এটি সত্যি চলতি আসরে আমরা এখন পর্যন্ত দারুন ক্রিকেট খেলেছি। বোলিং ইউনিট দুর্দান্ত করেছে। পাশাপাশি ব্যাটিং ইউনিট সময়মত নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিয়েছে। আশা করি, সেমিতে আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে পারবো।’
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে ফেভারিট হিসেবে খেলতে নেমে বার বার তীরে এসে তরি ডুবায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে বিশ^কাপে পাঁচবার এবং টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে দু’বার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ায় প্রোটিয়াদের গায়ে ‘চোকার্স’ শব্দটি স্থায়ীভাবে লেপ্টে গেছে।
২০০৯ ও ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের সেমিফাইনাল খেকে বিদায় নিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারও কি ‘চোকার্স’ শব্দকে নিজেদের সাথে আরও জোরালো করবে প্রোটিয়ারা? এমন প্রশ্নের জবাবে মার্করাম বলেন, ‘অতীতের পরিসংখ্যান নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমাদের সামনে এখন নতুন একটি ম্যাচ। এই ম্যাচ ঘিরেই আমাদের সব পরিকল্পনা। আফগানিস্তান খুবই ভালো দল। বিশ^কাপের সব ম্যাচেই নিজেদের সামর্থ্যের প্রমান দিয়েছে তারা। আমরাও আফগান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত ।’
গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে আফগানিস্তান। প্রথম তিন ম্যাচে নিউজিল্যান্ড, উগান্ডা ও পাপুয়া নিউ গিনিকে হারিয়ে সুপার এইট নিশ্চিত করে তারা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে যায় আফগানরা। গ্রুপ রানার্স-আপ সুপার এইটে উঠে আরও বড় চমক দেখায় আফগানিস্তান। ভারতের কাছে হারলেও, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয় রশিদ-নবিরা।
আজ সুপার এইটে নিজেদের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে বৃষ্টি আইনে ৮ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মত সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছে আফগানিস্তান। বিশ^কাপ সেমিফাইনাল স্বপ্নের মত লাগছে আফগান অধিনায়ক রশিদ খানের, ‘বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে খেলা, দল হিসেবে এটি আমাদের জন্য স্বপ্নের মতো। আমরা যেভাবে টুর্নামেন্ট শুরু করেছি, নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর বিশ্বাসটা চলে আসে। এটি অবিশ্বাস্য। অনুভূতি বোঝানোর মতো ভাষা নেই আমার। এত বড় অর্জনে দেশের সবাই নিশ্চিতভাবেই আমাদের নিয়ে অনেক খুশি।’
এবার সেমিফাইনালেও চমক দেখিয়ে বাজিমাত করতে চায় আফগানিস্তান। ফাইনালের টিকিট পেতে মরিয়া রশিদ বলেন, ‘আমাদের সামনে ফাইনালে খেলার সেরা সুযোগ এসেছে। আমরা ফাইনাল ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছি না। পুরো দল উজ্জীবিত ও আত্মবিশ^াসী। সেমিফাইনালে সেরা ক্রিকেট খেলতে মরিয়া তারা। দক্ষিণ আফ্রিকা শক্তিশালী দল, কিন্ত আমরা নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে জয় পাওয়া অসম্ভব নয়।’
এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে দু’বার মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা-আফগানিস্তান। দু’বারই বিশ^কাপের মঞ্চে দেখা হওয়া ম্যাচে জয় পেয়েছে প্রোটিয়ারা। ২০১০ সালে ৫৯ রানে এবং ২০১৬ সালে ৩৭ রানে জয় পেয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা।
দক্ষিণ আফ্রিকা দল : আইডেন মার্করাম (অধিনায়ক), অটনিল বার্টম্যান, জেরাল্ড কোয়েৎজি, কুইন্টন ডি কক, বিজর্ন ফরচুইন, রেজা হেনড্রিক্স, মার্কো জানসেন, হেনরিচ ক্লাসেন, কেশব মহারাজ, ডেভিড মিলার, এনরিচ নর্টি, কাগিসো রাবাদা, রায়ান রিকেলটন, তাবরাইজ শামসি, ট্রিস্টান স্টাবস।
আফগানিস্তান দল : রশিদ খান (অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, আজমতুল্লাহ ওমরজাই, করিম জানাত, নাজিবুল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ ইশাক, মোহাম্মদ নবি, গুলবাদিন নাইব, নাঙ্গিয়াল খারোতি, নুর আহমেদ, নাভিন উল হক, ফজলহক ফারুকি, ফরিদ মালিক ও হজরতুল্লাহ জাজাই।