শিরোনাম
বার্লিন, ২৮ জুন ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে শনিবার শেষ ষোলর ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালি। গ্রুপ পর্বে কোনমত রক্ষা পেয়ে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করা আজ্জুরিদের জন্য সুইস পরীক্ষা যে মোটেই সহজ হবে না তা অনুমেয়।
গ্রুপের শেষ ম্যাচে ৯৮ মিনিটে অনেকটাই অপরিচিত মাত্তিয়া জাকাগনির গোল ক্রোয়েশিয়ার সাথে ড্র করে গ্রুপ-বি’র দ্বিতীয় স্থান লাভ করে ইতালি। টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত সবচেয়ে সফল স্পেনের থেকে তারা গ্রুপ পর্বে পাঁচ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল।
কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তি বলেছেন তার দল এগিয়ে যাবার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ক্রোয়েটদের বিপক্ষে খেলোয়াড়দের মান নিয়ে সমালোচনাকে তিনি মানতে পারছেন না। ৬৫ বছর বয়সী স্পালেত্তি গণমাধ্যমের মন্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছেন। একইসাথে যারা তার দলকে চাপে রাখতে চায় তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এমন কিছু না করতে যাতে দলকে বাড়তি মানসিক চাপে পড়তে হয়। দুই বারের বিজয়ীদের কাছ থেকে এখনো তেমন কোন পারফরমেন্স দেখেনি ফুটবলীপ্রেমীরা, এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। বিশেষ করে তিন বছর আগের উড়ন্ত ইতালিকে এবার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
কিন্তু নিজেকে সামনে নিয়ে এসে স্পালেত্তি বলেছেন, তার দল ধীরে ধীরে টুর্নামেন্টে উন্নতি করছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এটাই বলবো আগে দল যা করেছে তা অতীত। এই দলটিরও ভাল করার সম্ভাবনা আছে।’
যদিও খালি চোখে স্পালেত্তির নতুন চেহারা ইতালিকে নিয়ে এখনো গর্ব করার মত কিছু দেখছে না সমর্থকরা। ইউরো ২০২০’এ শিরোপা জয়ে গ্রুপ পর্বে এই সুইজারল্যান্ডকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ইতালি। ঐ ম্যাচে ম্যানুয়েল লোকাত্তেলি দুই গোল করেছিলেন। বাকি গোলটি এসেছিল আরেক তারকা সিরো ইমোবিলের কাছ থেকে। দু’জনই এবার স্পালেত্তির দল থেকে বাদ পড়েছেন, তাদের সাথে আরো বিবেচনা করা হয়নি মিডফিল্ডার মার্কো ভেরাত্তিকে। এছাড়া দলের দীর্ঘদিনের দুই নির্ভরযোগ্য ডিফে-ার লিওনার্দো বনুচ্চি ও গিওর্গিও চিয়েলিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন। জুভেন্টাস ফরোয়ার্ড ফেডেরিকো চিয়েসা ফর্মহীনতা ভুগছেন।
ল্যাজিও ফরোয়ার্ড ২৯ বছর বয়সী জাকাগনি বলেছেন নক আউট পর্বে তার দল ঠিকই জ¦লে উঠবে। উয়েফার ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কে জাকাগনি বলেন, ‘আমরা এখন শুধুমাত্র সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটির প্রস্তুতি নিয়ে চিন্তা করছি। আমরা প্রায়ই দেখে থাকি জাতীয় দল কখনো কখনো এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ে। এরপর আবারো সময়মত ঘুড়ে দাঁড়ায়। এখন আমরাও এটাই নিজেদের নিয়ে প্রত্যাশা করছি। আমরা ইতোমধ্যেই সুইজারল্যান্ডের অনেক ভিডিও দেখেছি। তারা খুবই সংঘবদ্ধ দল। তারা একে অন্যের জন্য খেলে। এ কারনেই তাদের বিরুদ্ধে লড়াইটা কঠিন হবে।’
এদিকে সুইজারল্যান্ডের কোচ মুরাত ইয়াকিন বেশ কিছু সিরি-এ খেলোয়াড় দলে রেখে দারুন আত্মবিশ^াসী মনোভাব পোষন করেছেন। বিশেষ করে ইন্টার মিলানের তারকা গোলরক্ষক ইয়ান সোমারের সাথে বোলোনিয়ার তিন খেলোয়াড় ড্যান এনডোয়ে, রেমো ফ্রুলার ও মাইকেল এইবিশার নিজেদের প্রমান করেছেন। নিষেধাজ্ঞার কারনে ডিফেন্ডার রিকাডো কালাফিওরিকে পাচ্ছেনা ইতালি। কিন্তু জাকাগনি বলেছেন গোলের পর খেলোয়াড়দের অতি উদযাপনের কারনে বুকের পাঁজরে কিছুটা আঘাত পেলেও আগামীকালের ম্যাচের জন্য তিনি পুরোপুরি প্রস্তুত।
তবে প্রশ্ন উঠেছে ইতালির সেরা সেটা-আপ নিয়ে, স্পালেত্তি ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে যা পরিবর্তণ করেছিলেন। বিশেষ করে তারকা মিডফিল্ডার জর্জিনহো কিছুটা ফর্মহীনতায় ভুগছেন। ক্রোয়েটদের বিপক্ষে স্ট্রাইকার মাতেও রেটেগুই কিছুটা কঠিন সময় পার করেছে। আলবেনিয়ার সাথে ২-১ গোলের জয় ও স্পেনের বিপক্ষে ১-০ গোলের পরাজয়ের ম্যাচে যেভাবে গিয়ানলুকা সামাক্কা খেলতে পারেননি।
সর্বশেষ বিশ^কাপ বাছাইবপর্বে সুইসদের বিপক্ষে পেরে উঠেনি ইতালি। জার্মানীর বিপক্ষে এবারের ইউরোর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে সুইজারল্যান্ড ১-১ গোলে ড্রয়ের মাধ্যমে প্রমান করেছে তারা যেকোন দলের বিপক্ষে হুমকি হয়ে উঠতে পারে। গ্রুপ-এ’তে অপরাজিত থেকে সুইজারল্যান্ড নক আউট পর্বে উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে জার্মানিকে এক পয়েন্ট আদায় করতে ৯২ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
এই ফলাফলে সুইজারল্যান্ড গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে পরের রাউন্ডের টিকেট পেয়েছে। যদিও এটা তাদের জন্য একদিক থেকে ভালই হয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। কারন সামনে এগিয়ে যেতে হলে তাদেরকে জার্মানি, স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স কিংবা বেলজিয়ামের মত দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে হবে না।
ইউরো ২০২০’এও সুইজারল্যান্ড প্রমান করেছে তারা বড় দলগুলোকে যেকোন সময়ই বিপদে ফেলতে পারে। শেষ ষোলতে তারা কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্সকে পেনাল্টিতে পরাজিত করে বিদায় করেছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে অবশ্য স্পেনের সাথে পেরে উঠেনি। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে জয় তাদেরকে দারুন আত্মবিশ^াসী করে তুলেছিল।
ফ্রুলার উয়েফার ওয়েবসাইটে বলেছেন, ‘শেষ ১৬’তে কিভাবে জিততে হয় আমরা জানি। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে আমরা যা খেলেছি তার থেকে ভাল করার বিকল্প নেই। জার্মানির বিপক্ষে আমরা সাম্প্রতিক সময়ের সেরা খেলা খেলেছি।’
এই ম্যাচের বিজয়ী দল কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড ও স্লোভাকিয়ার মধ্যে বিজয়ী দলের মুখোমুখি হবে।