শিরোনাম
লিপজিগ, ২৮ জুন ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে আগামীকাল ডর্টমন্ডে নক আউট পর্বের শেষ ষোলর ম্যাচে ডেনমার্কের মুখোমুখি হবে ইউরো ২০২৪ স্বাগতিক দেশ জার্মানি। গ্রুপের শেষ ম্যাচে উজ্জীবিত সুইজারল্যান্ডের সাথে ১-১ গোলে ড্র করার ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে আরো এগিয়ে যেতে চায় জুলিয়ান নাগলসম্যানের জার্মানি।
বড় টুর্নামেন্টে প্রায় এক দশক ধরে নিজেদের সুনাম হারানো জার্মানরা গ্রুপ পর্বে স্কটল্যান্ডক ও হাঙ্গেরিকে হারিয়ে নিজেদের হারানোর ঐতিহ্যের জানান দিয়েছে। যদিও সুইসদের শক্তিশালী রক্ষনভাগের বিপরীতে শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠেনি। প্রায় পরাজয়ের হাত থেকে ইনজুরি টাইমের গোলে তারা ম্যাচ বাঁচিয়েছে। নিকলাস ফুলক্রুগ স্টপেজ টাইমে দারুন এক হেডে জার্মানদের এক পয়েন্ট উপহার দেয়। এই ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে জার্মানি টেবিলের শীর্ষ দল হিসেবে নক আউট পর্বে খেলতে এসেছে।
এটা অবশ্য স্বাগতিকদের জন্য একটি ওয়েক-আপ কলের মতই। বিশেষ করে ঘরের মাঠে ২০০৬ সালের পর বড় টুর্নামেন্ট আয়োজনের সুযোগে দলকে চতুর্থ ইউরোর শিরোপা হাতে দেখতে মুখিয়ে আছে সমর্থকর। কোচ নাগলসম্যানকেও সুইসরা বুঝিয়ে দিয়েছে তার আরো কাজ করার বাকি রয়েছে।
উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশটির তুলনায় জার্মানি তাদের কেবিনেটে শিরোপা অনেকটাই বেশী জমিয়েছে। কিন্তু ১৯৯২ ইউরোর ফাইনালে ডেনসের কাছে পরাজয় এখনো ভুলে যায়নি জেদী জার্মানরা। ঐ আসরে বাছাইপর্বের বাঁধা পেরুতে পারেনি ডেনামার্ক। কিন্তু যুগোস্লাভিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতায় শেষ পর্যন্ত ইউরোর চূড়ান্ত আসর থেকে বাদ পড়লে মাত্র ১০দিন আগে কপাল খুলে ডেনমার্কের। রূপকথার সেই আগমনের শেষটাও জার্মানিকে হারিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছিল ড্যানিশরা। এখনো জার্মানি স্বীকার করে ঐ সময় তারা ডেনমার্ককে হালকা ভাবে নিয়েছিল।
খেলোয়াড় হিসেবে ইউরো ও বিশ^কাপ জয়ী তারকা বার্টি ভোটাস ১৯৯১ ফাইনালে জার্মানির কোচের দায়িত্বে ছিলেন। সম্প্রতি এক দৈনিক পত্রিকায় এক কলামে তিনি স্বীকার করেছেন তার পুরো দল ডেনমার্ককে খাটো করে দেখেছিল। তিনি লিখেছেন, ‘১৯৯২ সালে আমরা দুর্দান্ত ড্যানিশ দলের কাছে হেরে যাই। এমনকি ঐ আসরে এখনকার মতই আমরাই ফেবারিট ছিলাম। সবাই ধরে নিয়েছিল আমরাই শিরোপা পাচ্ছি। দূর্ভাগ্যবশত: খেলোয়াড়রাও সেটা ভেবেই মাঠে নেমে শেষ পরিনতি দেখেছিল।’
ইউরোপের বেশ কিছু শীর্ষ ক্লাবে খেলা তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ২০২০ সেমিফাইনালিস্ট ডেনমার্ক অনেকাংশেই সুইজারল্যান্ডের অনুরূপ। সাবেক কোচ অবশ্য স্বীকার করেছেন ১৯৯২ সালে যে ড্যানিশ দলটি ছিল তার সাথে এবারের দলের অনেকাংশেই কোন মিল নেই। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই জার্মানরা চাপে রয়েছে।
ভোটাস আরো বলেন, ‘ডেনমার্ক সাফল্যের জন্য ক্ষধার্ত ছিল এবং তাদের সামনে হারানোর কিছু ছিলনা। তারা শুধু ভাল ফুটবল খেলতে মাঠে নেমেছিল এবং সেটাই তারা করে দেখিয়েছে। আমরাও তাদেরকে সেভাবে মাপতে পারিনি। এবারের দলটিকে এই ভুল করলে চলবে না। সুইজারল্যান্ডের ম্যাচটি আমাদের পথ দেখিয়ে দিয়েছে। সেই পথেই আমাদের হাঁটতে হবে।’
২০২৩ সালে ১১ ম্যাচের মধ্যে জার্মানি মাত্র তিনটিতে জয়ী হয়েছে। কিন্তু এ বছর এখনো কোন ম্যাচে পরাজিত হয়নি। পাঁচটিতে জয় ও দুটিতে ড্র করেছে। নাগলসম্যান এই ম্যাচগুলোতে একই একাদশ নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। কোচ তার মূল দল নিয়ে দারুন আত্মবিশ^াসী। শুধুমাত্র ইনজুরি কিংবা অন্য কোন কারনে কাউকে না পাওয়া গেলে নাগলসম্যান দলে পরিবর্তন আনেন না। এ কারনে জার্মান দলে একটি স্থিতিশীলতা এসেছে। যদিও সুইসদের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের পরপর দুই ম্যাচে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পাবার কারনে সেন্টার-ব্যাক জোনাথন টাহকে পাচ্ছেন না নাগলসম্যান। তার স্থানে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার নিকো শ্লোটারবেককে মূল একাদশে ডাকা হয়েছে। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারনে এন্টোনিও রুডিগারের খেলা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
তারপরও টাহর অনুপস্থিতিতে নাগলম্যানের হাতে রয়েছে আর্সেনালের ফরোয়ার্ড কেই হাভার্টজ, অথবা বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে এসে এ পর্যন্ত দুই গোল করা ফুলক্রগ। ২০২২ সালে ২৯ বছর বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক হবার পর ফুলক্রুগ ১৩ গোল করেছেন। যদিও সাধারণত তিনি বদলী বেঞ্চ থেকেই সব ম্যাচে মাঠে নামেন।