বাসস
  ০৫ জুলাই ২০২৪, ১৪:৩৩

ইংল্যান্ডের সামনে কোয়ার্টার ফাইনালে মূল বাঁধা সুইস গতি

ডাসেলডর্ফ, ৫ জুলাই ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : শনিবার ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের কোয়ার্টার ফাইনালে ডাসেলডর্ফে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ড। ২০২১ ফাইনালিস্টরা এখনো পর্যন্ত নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে না পারায় গতিময় সুইসদের বিপক্ষে কতটা নিজেদের প্রমান করতে পারবে তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
শেষ ষোলতে স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের গোলে জয়ী হয়ে শেষ আট নিশ্চিত করে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। বিপরীতে মুরাত ইয়াকিনের দল নক আউট পর্বে আগের ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে বিদায় করতে খুব একটা সমস্যার মুখে পড়েনি।
স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ-সি’র শেষ ম্যাচে ড্র করার পর সাউথগেটকে লক্ষ্য করে বিয়ার কাপ ছুঁড়ে মেরেছিল ক্ষুব্ধ ইংলিশ সমর্থকরা। আরো একটি হতাশাজনক পারফরমেন্সে আপাতত থ্রি লায়ন্সদের হয়তো শেষ আট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এমন শঙ্কাও করছে সমর্থকরা। জেলসেনকার্চেনের ম্যাচে ৯০ মিনিট পর্যন্ত ইংলিশদের রুখে দিয়ে ইভান শারাঞ্জের গোলে এগিয়ে ছিল স্লোভাকিয়া। ২১ বছর বয়সী জুড বেলিংহামের দুর্দান্ত বাইসাইকেল কিকে ইনজুরি টাইমের পাঁচ মিনিটে সমতায় ফিরে ইংল্যান্ড। এরপর অতিরিক্ত সময় শুরুর হবার মাত্র ৫২ সেকেন্ডের মধ্যে হ্যারি কেনের গোলে ইংল্যান্ডের ইউরোতে টিকে থাকার পাশাপাশি শেষ আটের টিকেট নিশ্চিত হয়। কিন্তু দলের সার্বিক পারফরমেন্স মোটেই খুশী করতে পারেনি বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে এমন দিন তো আর প্রতিদিন আসবে না।
টুর্ণামেন্টের অন্যতম ফেবারিট হিসেবে মাঠে নামলেও ইংল্যান্ডের এ পর্যন্ত পারফলমেন্সে কোন ম্যাচেই যোগ্যতর দল হিসেবে জয়ী হতে পারেনি। প্রথম ম্যাচে সার্বিয়াকে হারানোর পর ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে ইংল্যান্ড জয় ছিনিয়ে নিতে পারেনি। কিন্তু তারপরও বাস্ততা হচ্ছে সাউথগেট এনিয়ে টানা চারটি বড় টুর্নামেন্টে দলকে কোয়ার্টার ফাইনাল উপহার দিয়েছেন। বিশ^কাপ ও ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ মিলিয়ে নক আউট পর্বে সাত জয় সাউথগেটকে ১৯৬৬ সালের পর অন্যান্য সব ম্যানেজারদের তুলনায় কিছুটা হলেও এগিয়ে রেখেছে। কিন্তু এই পরিসংখ্যান অনেক সময় মাঠের পারফরমেন্সের কারনে চাপা পড়ে যায়। ফুটবলীয় পরিসংখ্যান এমনই।
বাছাইপর্বে দুইবার ইতালিকে হারিয়ে ইউরো ২০২০’এর ফাইনালের প্রতিশোধ ইতোমধ্যেই নিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ড। কিন্তু ডাসেলডর্ফে আরো একবার আজ্জুরিদের হারনোর সুযোগ আর পেলনা ইংলিশরা। এজন্য অবশ্য সুইজারল্যান্ডকে ধন্যবাদ জানাতে হয়, শেষ ষোলতে তাদের কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হয়ে বিদায় নিতে হয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। নক আউটের ম্যাচে রেমো ফ্রুলারের গোলের পর রুবেন ভারগাসের দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটের গোলে এটা নিশ্চিত হয়ে যায় যে, আগামী ১৪ জুলাই বার্লিনে ইউরোপের নতুন কোন চ্যাম্পিয়নকে দেখতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ^।
গ্রুপ পর্বে হাঙ্গেরিকে হারানোর পর জার্মানির সাথে ড্র করে ইয়াকিনের দল এখন টুর্নামেন্টের ডাক হর্স হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এনিয়ে ইউরোতে টানা দ্বিতীয়বার সুইসরা কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো। কিন্তু কোন সময়ই বড় টুর্নামেন্টে এর থেকে বেশীদুর যেতে পারেনি সুইসরা। ইংল্যান্ডের এবারের ফর্মহীনতা সুইসদের কিছুটা হলেও আশাবাদী করে তুলেছে। সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ইয়াকিনের দল এখনো পর্যন্ত টানা আট ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। ২০২২ বিশ^কাপের পর ১৮ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে পরাজিত হয়েছে, ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের বাছাইপর্বে রোমানিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে পরাজিত হয়েছিল সুইজারল্যান্ড। সুইসদের বিপক্ষে ইংল্যান্ড তাদের শেষ পাঁচটি ম্যাচে জয়ী হয়েছে। ২০০৪ ইউরোর গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের কাছে ৩-০ গোলের পরাজয়ের ম্যাচটিতে বর্তমান কোচ ইয়াকিন সুইস দলের সদস্য ছিলেন।
শেষ ষোলর ম্যাচে সেন্টার-ব্যাক মাক গুয়েহি কাঁধের ইনজুরিতে পড়েছেন। একইসাথে ক্রিস্টাল প্যালেসের এই ডিফেন্ডার হলুদ কার্ড পাওয়ায় আইনানুযায়ী কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে পারছেন না। গুয়েহির অনুপস্থিতিতে সাউথগেট তার ৪-৩-৩/৪-২-৩-১ সেট আপকে রদবদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। তিন জনের রক্ষনভাগকে এখন হয়তো আর রাখা সম্ভব হচ্ছে না। গুয়েহির স্থানে এজরি কোনসার খেলার সম্ভাবনাই বেশী।
নক আউট পর্ব শুরুর আগে পূর্নাঙ্গ অনুশীলনে ফিরেছেন লুক শ। কিন্তু ইউরোতে এখনো এক মিনিটও খেলতে না পারা এবং প্রায় পাঁচ মাস মাঠের বাইরে থাকা শ’র উপর আস্থা রাখতে পারছেন না সাউথগেট। উইং-ব্যাক হিসেবে কিয়েরান ট্রিপিয়ার ও বুকায়ো সাকর উপরই নির্ভর করছেন ইংলিশ কোচ।
ইংল্যান্ড বনাম সুইজারল্যান্ড ম্যাচের অর্থ হচ্ছে ডিক্লান রাইস বনাম গ্রানিত জাকার মধ্যে বর্তমান ও সাবেক আর্সেনাল মিডফিল্ডারের লড়াই। শেষ ম্যাচে জাকা কিছুটা ইনজুরিতে পড়লে তার খেলা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত স্ক্যান রিপোর্টে গুরুতর কিছু ধরা পড়েনি।  এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফিরেছেন সিলভান উইডমায়ার। যে কারনে ইয়াকিন তার পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই কাল মাঠে নামছেন। তার পরিবর্তে ইতালির বিপক্ষে খেলেছিলেন ড্যান এনডোয়ে। একটি সমাধান অবশ্য হতে পারে। ফাবিয়ান রেইডারের স্থানে আক্রমনভাগে এনডোয়েকে আনতে পারেন ইয়াকিন। এক্ষেত্রে উইডমায়ার তার নিজস্ব রাইট উইং পজিশনেই খেলবেন।