শিরোনাম
স্টুটগার্ট, ৬ জুলাই, ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : মিকেল মেরিনোর অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তের গোলে জার্মানিকে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত করে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে অপ্রতিরোধ্য স্পেন। এই জয়ে রেকর্ড চতুর্থ ইউরো শিরোপা জয়ের স্বপ্নে টিকে রাখলো স্প্যানিশরা।
উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটিতে প্রথমার্ধ ছিল গোলশুন্য। ৫১ মিনিটে ১৬ বছর বয়সী লামিন ইয়ামালের নিখুঁত পাসে ডানি ওলমোর গোলে এগিয়ে যায় লা রোজারা। ম্যাচ শেষের ১৪ মিনিট আগে নিকলাস ফুলক্রুগ পোস্টে বল লাগান। কিন্তু ম্যাচের নাটকীয়তা তখনো বাকি। স্বাগতিকরা যখন বিদায়ের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল তখনই ৮৯ মিনিটে জসুয়া কিমিচের সহায়তায় ফ্লোরিয়ান রিটজ দলকে সমতায় ফিরিয়ে ম্যাচটি নিয়ে যান অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে দুই দল সমানভাবে আক্রমন চালিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১১৯ মিনিটে ওলমোর লফটেড পাসে মেরিনো গোল করে সেমিফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করেন। শেষ চারে স্পেনের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স।
ম্যাচ শেষে জয়সূচক গোলদাতা মেরিনো বলেছেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি আমি জীবিত নই। চারিদিকে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। এটা আমার জন্য এক বিশেষ মুহূর্ত।’
ওলমো বলেছেন, ‘এই মুহূর্তটি গৌরবের। ম্যাচের শেষ মিনিট পর্যন্ত আমরা যেভাবে লড়েছি তা অনেকের কাছেই অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।’
বড় আসরে প্রায় এক দশক যাবত ব্যর্থতার পর ঘরের মাঠে জার্মানিননর সামনে সুযোগ এসেছিল হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবার। কিন্তু শেষ আটে এসে স্বাগতিকদের সেই আশা পূরণ হলোনা। এই ম্যাচ শেষেই বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সমাপ্তি টেনে বিদায় নিয়েছেন দলের মধ্যমাঠের নির্ভরযোগ্য কান্ডারি টনি ক্রুস।
ইউরোতে এ পর্যন্ত সবচেয়ে সফল দুটি দলের লড়াই নিয়ে পুরো ফুটবল বিশে^র মনোযোগ ছিল একটু অন্যরকম। তিনটি করে শিরোপা নিজেদের ঘরে তোলার পর স্পেন ও জার্মানি উভয় দলই এই রেকর্ডকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে মাঠে নেমেছিল। অনেকেই এই ম্যাচটিকে অলিখিত ফাইনাল হিসেবে ধরে নিয়েছিল। যে লড়াইয়ে জুলিয়ান নাগলসম্যানের অধীনে পুনর্জাগরিত জার্মানিকে ছাড়িয়ে গেছে ইন-ফর্ম স্পেন।
ম্যাচের আগে জার্মানির সবচেয়ে বিপদজনক খেলোয়াড় হিসেবে স্পেন ক্রুসকে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু ক্রুস কাল নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। তার উপর বেশ কয়েকটি ফাউল করেও রেফারির দৃষ্টি এড়িয়ে গেছেন। তার সাথে সংঘর্ষে পেড্রি ৮ মিনিটেই ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলে তার স্থানে বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে আসেন ওলমো।
এবারের আসরে সবচেয়ে বেশী বয়সী খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া জার্মানির শেষ রক্ষা হলোনা। প্রথমার্ধে স্পেনের গতির কাছে তাদের বারবার থামতে হয়েছে। যদিও প্রথমার্ধে ম্যাচের সেরা দুটি সুযোগ পেয়েছিল স্বাগতিকরা। আর দুটোই নষ্ট করেছেন কেই হাভার্টজ। আর্সেনালের এই ফরোয়ার্ড শুরুতেই দারুন এক ক্রসে হেডে করলেও তা সরাসরি স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সাইমনের হাতে ধরা পড়ে। এরপর প্রথমার্ধের শেষ ভাগে সাইমনকে একা পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি।
জার্মান কোচ নাগলসম্যান মূল দলে রবার্ট এ্যানড্রিচের পরিবর্তে এমরে কান ও লেরয় সানের পরিবর্তে রিটজকে নামিয়ে কিছুটা হলেও বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিলেন। স্প্যানিশ বদলী বেঞ্চ থেকে একটু আগে ভাগে উঠে আসা ওলমোকে থামাতে পারেনি জার্মান রক্ষনভাগ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এই ওলমোর গোলেই লিড পায় স্পেন। ইয়ামালের পাস থেকে জার্মান রক্ষনভাগের মধ্য থেকেই ওলমো ম্যানুয়েল নয়্যারকে পরাস্ত করেছেন। এক গোলে পিছিয়ে থেকে জার্মানী ম্যাচে ফিরে আসার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। বিশেষ করে রিটজ এ সময় বেশ বিপদজনক হয়ে উঠেন। বায়ার লেভারকুসেনের এই স্ট্রাইকার কাউন্টার এ্যাটাক থেকে ফুলক্রুগের সাথে মিলে স্পেনের শক্ত প্রতিরোধ ভেঙ্গে একের পর এক আক্রমন করেছেন। ম্যাচ শেষের ১০ মিনিট আগে নাগলসম্যান তার শেষ পরিবর্তন করেন। এসময় তিনি জোনাথন টাহর পরিবর্তে মাঠে নামান অভিজ্ঞ থমাস মুলারকে। কিন্তু মুলারের থেকে ১৩ বছরের ছোট রিটজই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেন। কিমিচের পাস থেকে দারুন ফিনিশিংয়ে রিটজ জার্মানিকে সমতায় ফেরান।
১০৪ মিনিটে নিকো উইলিয়ামসের স্থানে খেলতে নামা মিকের ওয়ারজাবালের শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ঐ সময়ই রিটজ আরো একটি সুযোগ হাতছাড়া করেন।
অতিরিক্ত সময়ে জামাল মুসিয়ালার শট ডি বক্সের ভিতর মার্ক কুকুরেলার হাতে লাগলে জার্মানি পেনাল্টির জোড়ালো আবেদন করেছিল। কিন্তু ভিএআর রিভিউ তাদের সেই আবেদন নাকচ করে দেয়। মিনিটখানেক পর ওলমোর ক্রসে মেরিনোর অসাধারণ হেড নয়্যারের আটকানোর সাধ্য ছিলনা। পুরো ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে ইংলিশ রেফারি এন্থনি টেইলর ১৫টি হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন।
মুসিয়ালাকে বাজেভাবে ট্যাকেল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের কারনে মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য হন ডানি কারভাহাল। রিয়াল মাদ্রিদের এই অভিজ্ঞ রাইট-ব্যাকে পরিবর্তে কোচ লুইন ডি লা ফুয়েন্তেকে বাধ্য হয়েই সেমিতে অন্য কাউকে বেছে নিতে হবে। এছাড়া টানা দ্বিতীয় হলুদ কাডের কারনে সেন্টার-ব্যাক রবিন লি নরমান্ড ও অধিনায়ক আলভারো মোরাতাকেও সেমিফাইনালে পাচ্ছেন না স্প্যানিশ কোচ।