শিরোনাম
হামবুর্গ, ৬ জুলাই ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : পেনাল্টি শ্যুট আউটে পর্তুগালকে ৫-৩ গোলে পরাজিত করে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের সেমিফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে ১২০ মিনিট ম্যাচটি গোলশুন্য ড্র থাকার পর শেষ পর্যন্ত কিলিয়ান এমবাপ্পের দল ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালকে বিদায় করে শেষ চারের টিকেট পেয়েছে। এই ম্যাচটি ছিল ইউরোতে পর্তুগীজ সুপারস্টার রোনাল্ডোর শেষ ম্যাচ।
ফ্রান্স তাদের পেনাল্টি শ্যুট আউটের প্রতিটিতেই সফল হয়েছে। অন্যদিকে হুয়াও ফেলিক্সের তৃতীয় শটটি মিস হলে পর্তুগালের দিায় নিশ্চিত হয়। শেষ চারে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ দূরন্ত স্পেন।
২০২২ বিশ^কাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে পেনাল্টিতে পরাজিত হবার পর এই পরিস্থিতিতে একটি জয় জরুরী হয়ে পড়েছিল ফ্রান্সের। তিন বছর আগে শেষ ষোলতে সুইজারল্যান্ডের কাছে পরাজিত হয়ে এভাবেই বিদায় নিয়েছিল ফরাসিরা। জার্মানির মাটিতে সর্বশেষ বড় টুর্নামেন্টেও ফ্রান্স পেনাল্টিতেই পরাজিত হয়েছিল। ২০০৬ বিশ^কাপের ফাইনালে তখন ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ ছিল ইতালি।
সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে এমবাপ্পে গুরুত্বপূর্ণ পেনাল্টি শটটি মিস করেছিলেন। কাল শ্যুট আউটের আগেই তাকে ডাগ আউটে উঠিয়ে নেন কোচ দিদিয়ের দেশ্যম। তার স্থানে অতিরিক্ত সময়ের মাঝামাঝিতে মাঠে নামেন ব্র্যাডলি বারকোলা। ফ্রান্সের হয়ে স্পট কিক থেকে গোল করেছেন বারকোলা, ওসমানে ডেম্বেলে, ইউসুফ ফোফানা, জুলেস কুন্ডে ও থিও হার্নান্দেজ।
ফরাসি কোচ দেশ্যম ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমি খেলোয়াড়দের নিয়ে দারুন গর্বিত। এমনকি সবকিছু সঠিক ভাবে করতে না পারলেও আমরা ম্যাচ ছেড়ে দেইনি। আরো একবার আমরা সেমিফাইনালে উঠেছি। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে। আশা করছি সবকিছু শেষ পর্যন্ত ঠিক ভাবেই সম্পন্ন হবে।’
ইউরোতে নিজের সেরা ফর্ম খুঁজতে থাকা এমবাপ্পের জন্য কালকের রাতটাও ছিল দারুন হতাশার। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে অন্তত সেমিফাইনালে নিজেকে প্রমানের আরো একটি সুযোগ তিনি পাচ্ছেন। তবে ৩৯ বছর বয়সী রোনাল্ডো শেষ বারের মত ইউরোতে ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। এটা তার ষষ্ঠ ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ ছিল। কিন্তু জার্মানির মাটিতে ইউরোতে নিজের সর্বোচ্চ ১৪ গোলের রেকর্ডকে সমৃদ্ধ করতে পারেননি সিআর সেভেন। এবারের আসরে পর্তুগালের পাঁচ ম্যাচের কোনটিতেই গোল করতে পারেননি রোনাল্ডো। কাল পর্তুগালের হয়ে প্রথম পেনাল্টি শটে তিনি গোল করেছিলেন। কিন্তু রবার্তো মার্টিনেজের দল শেষ পর্যন্ত আর নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি।
শেষ ষোলতে তারা স্লোভেনিয়াকে গোলশ্যু ড্রয়ের পর পেনাল্টিতে পরাজিত করেছিল। কিন্তু এবার হামবুর্গে তাদের নতি স্বীকার করতে হলো।
বার্নান্ডো সিলভা ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘এই একইভাবে আমরা স্লোভেনিয়াকে শেষ ষোলতে হারিয়েছিলাম। আর আজ আমরা হেরে গেলাম। এটাই ফুটবল।’
এই দুই দলের কেউই আগের ম্যাচগুলোতে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। বিশেষ করে ফ্রান্স এখনো পর্যন্ত ওপেন প্লেতে কোন গোল না করেই শেষ চার পর্যন্ত এসেছে।
ফরাসি লাইন-আপে কাল আবারো ফিরেছিলেন রানডাল কোলো মুয়ানি ও এডুয়ার্ডো কামভিনগা। স্ট্রাইকারদের পিছনে ছিলেন আঁতোয়ান গ্রিজম্যান। ফ্রান্স পুরো আসরেই দুর্দান্ত রক্ষনভাগের উপর ভরসা করেছে, কালও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। বলের পজিশনের দিক থেকে কালও তাদেরকে খুব একটা সরব মনে হয়নি। বরং পর্তুগালের থেকে তারা বল কমই পেয়েছে। তবে প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচটি কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে পায়। মধ্যমাঠ থেকে পর্তুগাল বেশ কিছু আক্রমন করার চেষ্টা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ব্রুনো ফার্নান্দেসের শট কোনমতে রুখে দেন ফরাসি গোলরক্ষক মাইক মেইগন্যান। রাফায়েল লিয়াওর লো সেন্টার থেকে ভিটিনিহা পরের সুযোগটি নষ্ট করেন। মেইগন্যান ওপেন প্লেতে কোন গোল হজম না করার ব্রতে অটল ছিলেন। পোস্টের খুব কাছে থেকে রোনাল্ডোর ব্যাক-হিল রুখে দেন মেইগন্যান।
বিপরীতে ফ্রান্সও কম যায়নি। কুন্ডের সাথে বল আদান প্রদান করে কোলা মুয়ানি এগিয়ে গেলেও রুবেন ডিয়াস সেই আক্রমন রক্ষা করেন। ৬৭ মিনিটে গ্রিজম্যানের স্থানে ডেম্বেলেকে মাঠে নামান দেশ্যম। বদলী বেঞ্চ থেকে মাঠে নেমেই ডেম্বেলে দারুন এক সুযোগ তৈরী করেছিলেন। কিন্তু মিডফিল্ডার কামভিনগা তা কাজে লাগাতে পারেননি।
এরপর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। বদলী খেলোয়াড় ফ্রান্সিসকো কনসেইকাওর কাটব্যাক থেকে রোনাল্ডো ভাল একটি সুযোগ নষ্ট করেন। আগের ম্যাচে পর্তুগালের গোলরক্ষক দিয়োগো কস্তা স্লোভেনিয়ান তিনটি পেনাল্টি সেভ করলেও কাল একটিও আটকাতে পারেননি।