শিরোনাম
লর্ডস, ১৩ জুলাই ২০২৪ (বাসস) : গতকাল দীর্ঘ ২২ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি ঘটলো ইংল্যান্ডের বর্ষীয়ান পেসার জেমস এন্ডারসনের। লর্ডসে এন্ডারসনের বিদায়ী টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১১৪ রানের বড় ব্যবধানে হারায় ইংল্যান্ড। জয় দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতি টানতে পেরে আবেগে আপ্লুত এন্ডারসন। ইংল্যান্ডের হয়ে আর ক্রিকেট খেলার সুযোগ হবে না তার। তাই ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট জয়ের অনুভূতিটা সবচেয়ে বেশি মিস করবেন বলে জানিয়েছেন এন্ডারসন। সিরিজের প্রথম টেস্ট শেষে এন্ডারসন বলেন,ইংল্যান্ডের হয়ে ম্যাচ জয়ের পর যে অনুভূতিটা হয়, সেটাই সবচেয়ে বেশি মিস করবো। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা কাজ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষনা আগেই দিয়ে রেখেছিলেন ৪১ বছর বয়সী এন্ডারসন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আড়াই দিনে সিরিজের প্রথম টেস্ট বড় ব্যবধানে জিতে নেয় ইংলিশরা। ২২ গজে ২২ বছর রাজত্বের পর জয় নিয়ে ক্যারিয়ারের ইতি টানতে সক্ষম হন এন্ডারসন।
বিদায়ী টেস্টের দুই ইনিংসে ২৬ দশমিক ৪ ওভার বল করে ৫৮ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন এন্ডারসন। ১৮৮ টেস্টে ৭০৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করলেন তিনি। টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় ও পেস বোলার হিসেবে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক এন্ডারসন। তার সামনে আছেন দুই স্পিনার শ্রীলংকার মুত্তিয়া মুরালিধরন (৮শ উইকেট) ও অস্ট্রেলিয়ার প্রয়াত ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন (৭০৮ উইকেট)।
সর্বোচ্চ টেস্ট ম্যাচ খেলার রেকর্ডে ভারতের শচীন টেন্ডুলকারের পরই আছেন এন্ডারসন। টেন্ডুলকার ২০০টি এবং এন্ডারসন ১৮৮টি টেস্ট খেলেছেন।
বিদায়ী ম্যাচে স্টেডিয়ামের আবহ দেখে অভিভূত এন্ডারসন। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে যা অর্জন করেছেন তাতে নিজেকে গর্বিত মনে করেন তিনি। স্কাই স্পোর্টসকে এন্ডারসন বলেন, ‘এটি আশ্চর্যজনক সপ্তাহ ছিলো। আমি দর্শকদের উপস্থিতি ও মাঠের চারপাশে সকলের প্রতিক্রিয়া দেখে অভিভূত। যা অর্জন করেছি, তাতে আমি গর্বিত।’
২০০২ সালের অভিষেকের পর ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে গত ২২ বছরে ১৮৮টি টেস্ট ছাড়াও ১৯৪টি ওয়ানডে ও ১৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন এন্ডারসন। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলাটা ছির পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা কাজ উল্লেখ করে এন্ডারসন বলেন, ‘আমার মনে হয়, আবেগটা ধরে রাখতে পেরেছি। দুই দল আর দর্শকদের প্রতিক্রিয়ায় সকালটা আমার জন্য অনেক আবেগের হয়ে উঠেছিল। চোখের পানি ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। আমি অনেক গর্বিত। ২০ বছর ক্রিকেট খেলা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। ইনজুরিমুক্ত থেকে সেটা করতে পেরে আমি সন্তুষ্ট। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা কাজ। দীর্ঘ সময় ধরে সেটা করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।’
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে বহু ম্যাচ জিতেছেন এন্ডারসন। দলের বহু জয়ে অবদনাও রেখেছেন তিনি। ক্যারিয়ার শেষে দলের হয়ে ম্যাচ জয়ের অনুভূতিটা সবচেয়ে বেশি মিস করবেন বলে জানান এন্ডারসন, ‘ম্যাচ জয়ের পর যে অনুভূতিটা এখন হচ্ছে, সেটাই সবচেয়ে বেশি মিস করবো। এর চেয়ে ভালো কোন অনুভূতি নেই। জয়ের পর এখানে বসা, এমন পারফরমেন্স উদযাপন করা অবিশ্বাস্য অনুভূতি, আমি এটা মিস করতে যাচ্ছি।’
ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও, ইংল্যান্ডের পেস বোলিং মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এন্ডারসন। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এন্ডারসন বলেন, ‘এখনো ভবিষ্যত নিয়ে কিছু ভাবিনি। এই গ্রীষ্মে দলের সাথে থাকবো। যতটা সম্ভব সাহায্য করবো। এরপর দেখি জীবন কোথায় নিয়ে যায়।’
বিদায়ী টেস্ট শেষে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ক্রিকেট ক্লাব, লর্ডস ক্রিকেট মাঠের স্বত্বাধিকারী ও ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) ‘অনারারি’ আজীবন সদস্য হয়েছেন এন্ডারসন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে এন্ডারসনের হাতে সদস্যপদ ও সম্মাননা তুলে দেন এমসিসির প্রেসিডেন্ট মার্ক নিকোলাস।
বিদায় লগ্নে এন্ডারসনের প্রশংসা করতে করতে ভুল করেননি ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস। তিনি বলেন, ‘বহু মানুষের কাছে অবিশ্বাস্যভাবে অনুপ্রেরণার নাম এন্ডারসন। ম্যাচ ও উইকেট সংখ্যা বিবেচনা করলে তার অসাধারণ কীর্তি আছে। কখনও কখনও আপনি কথা বলার জন্য শব্দ জন্য হারিয়ে ফেলতে পারেন, কিন্তু আপনি যদি আমাকে ১৫ মিনিট সময় দেন তারপরও এন্ডারসনকে নিয়ে যথেষ্ট প্রশংসা শেষ করতে পারবো না।’
প্রতিপক্ষের একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে এন্ডারসন সম্পর্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট বলেন,‘ তিনি এই খেলাটির একজন কিংবদন্তী। সত্যিকারার্থেই আমি তাকে মিস করবো।’