শিরোনাম
প্যারিস, ১০ আগস্ট ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : অতিরিক্ত সময়ে বদলী খেলোয়াড় সার্জিও ক্যামেলোর জোড়া গোলে অলিম্পিক ফুটবলের ফাইনালে স্বাগতিক ফ্রান্সকে ৫-৩ ব্যবধানে পরাজিত করে স্বর্ণ জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছে স্পেন। থিয়েরি অঁরির ফ্রান্স অবশ্য এর আগে দারুনভাবে ম্যাচে ফিরে এসে নির্ধারিত সময়ে ৩-৩ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল।
পার্ক ডি প্রিন্সেসে ২৮ মিনিটের মধ্যে ৩-১ গোলে এগিয়ে থাকার পর স্পেনের জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। এনেজো মিলোট ফ্রান্সকে এগিয়ে দেবার পর ফারমির লোপেজের দুই গোল ও এ্যালেক্স বায়নার ফ্রি-কিকে পুরো ম্যাচের চেহারা পাল্টে যায়। ৭৯ মিনিটে মাহনেস আলিউচের গোলের পর স্টপেজ টাইমে জিন-ফিলিপ মাতেতার পেনাল্টির গোলে ফ্রান্স দুর্দান্ত ভাবে লড়াইয়ে ফিরে আসে। ম্যাচটি গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। রায়ো ভায়োকানো ফরোয়ার্ড ক্যামেলা ১০০ মিনিটে স্পেনকে এগিয়ে দেবার পর একেবারে শেষ মুহূর্তে আরো এক গোল করে স্বর্ণ জয় নিশ্চিত করেন।
স্পেন কোচ সান্তি দেনিয়া ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘অলিম্পিকে জয়ের পর কোচদের বিজয় মঞ্চে যাবার কোন নিয়ম নেই। এটা শুধুই খেলোয়াড়দের বিজয়। তারা এটা করে দেখিয়েছে। একটি পরিবারের মত আজ সবাই লড়াই করেছে। সৌভাগ্যবশত: আজ আমরা স্বর্ণ জয় করেছি যার অপেক্ষায় ছিলাম দীর্ঘদিন।’
তিন বছর আগে টোকিও গেমসে রৌপ্য পদক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল স্পেনকে। ১৯৯২ বার্সেলোনা গেমসের পর এনিয়ে দ্বিতীয়বারের মত অলিম্পিকে স্বর্ণ জয় করলো স্পেন। বার্সেলোনায় স্বর্ণ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন বর্তমানের দুই জনপ্রিয় কোচ পেপ গার্দিওলা ও লুইস এনরিকে।
এদিকে লস এ্যাঞ্জেলেস গেমসের ৪০ বছর পর ফুটবলে দ্বিতীয় স্বর্ণ জয়ের আশায় ছিল ফ্রান্স। কিন্তু এবারও তাদেরকে রৌপ্য নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে। অঁরি বলেন, ‘যেভাবে শেষ করতে চেয়েছিলাম তার পুরোটা অর্জিত হয়নি। কিন্তু তারপরও আমি বলেবো এটি একটি অসাধারণ রাত ছিল। আমরা পদক নিয়ে বাড়ি ফিরছি, যে কারনে প্রত্যেকের কাছেই এই ফাইনাল স্বরণীয় হয়ে থাকবে।’
গত মাসে জার্মানিতে ইউরা চ্যাম্পিয়নশীপে শিরোপা জয়ের পর এবার ছোটদের এই অলিম্পিক বিজয় স্প্যানিশ ফুটবলকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। অতি সম্প্রতি অনুর্ধ্ব-১৯ ইউরোর ফাইনালে ফ্রান্সকে পরাজিত করে স্পেন শিরোপা জয় করেছে।
যদিও দারুন এক ম্যাচের পর অঁরির দল মাথা উঁচু করেই মাঠ ছেড়েছে। এই দৃশ্য অনেকটাই ২০২২ কাতার বিশ^কাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর ফ্রান্সের পরাজয় বরণ করে মাঠ ছাড়ার স্মৃতিকে মনে করিয়ে দিয়েছিল।
ম্যাচের মাত্র ১১ মিনিটে মিলোটের গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ডানদিক থেকে বক্সের ভিতর থেকে গোলরক্ষক আরনো টেনাসকে পরাস্ত করে মিলোট বল জালে জড়ান। যদিও দ্রুতই সমতায় ফিরে স্পেন। ২৬টি পাসের পর বায়েনার এ্যাসিস্টে লোপেজ দলের হয়ে সমতা আনেন। ২৫ মিনিটে হুয়ান মিরান্ডার ক্রসে ফরাসি রক্ষনভাগ এলোমেলো হয়ে গেলে আবেল রুইজের শট রুখে দেন গুইলামে রেসটেস। কিন্তু ফিরতি বলে স্পেনকে এগিয়ে দেন লোপেজ। বার্সেলোনার এই মিডফিল্ডারের এটি ষষ্ঠ গোল। বক্সের ঠিক বাইরে মিরান্ডার বিপক্ষে আদায় করা ফ্রি-কিক থেকে ভিয়ারিয়াল মিডফিল্ডার বায়েনা গোল করলে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় স্পেন। প্রথমার্ধের স্টপেজ টাইমে মাতেতার একটি শট দারুনভাবে রুখে দেন টেনাস।
মানু কোনের হেড বারে লেগে ফেরত আসলে হতাশ হতে হয় ফ্রান্সকে। পিএসজির গোলরক্ষক টেনাস এরপর কোনের আরো একটি শট রুখে দেন। ৭৯ মিনিটে অবশ্য মাইকেল অলিসের ফ্রি-কিক থেকে আকলিউচের শট আর আটকাতে পারেননি টেনাস। শেষ মিনিটে নেটা টারিয়েনটেস আরনাড কালিমুয়েন্ডোকে ফাউল করলে রেফারি প্রথমে খেলা চালিয়ে যাবার নির্দেশ দেন। কিন্তু পরক্ষনেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ভিএআর রিভিউর আবেদন করেন। ৯৩ মিনিটে স্পট কিক থেকে ফ্রান্সকে সমতায় ফেরান মাতেতা। ১০০ মিনিটে আদ্রিয়ান বারনাবের এ্যাসিস্টে ক্যামেলো স্পেনকে এগিয়ে দেন। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে টেনাসের দুর্দান্ত চতুরতায় ক্যামেলো দলের হয়ে পঞ্চম গোল করেন।