বাসস
  ১২ আগস্ট ২০২৪, ১৪:১৫

২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের দশটি স্মরণীয় মুহূর্ত

প্যারিস, ১২ আগস্ট ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : ইতোমধ্যেই অলিম্পিকের ইতিহাসে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ও সফল আয়োজনের তকমা পাওয়া প্যারিস  গেমসের পর্দা গতকাল  রাতে  নেমেছে। যদিও চার বছর অন্তর আয়োজিত ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ যে দেশেই আয়োজিত হোক না কেন স্বাগতিক হিসেবে একে অপরকে ছাড়িয়ে যাবার প্রতিযোগিতা যেন চলছেই। সে কারনে ২০২৮ সালে লস এ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক প্যারিসকেও যে ছাড়িয়ে যাবে না সেটা এখনই নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনা।
চোখ ধাঁধনো উদ্বোধণী অনুষ্ঠানের পর গত ১৬ দিন পুরো ক্রীড়া বিশ্ব মেতে ছিল প্যারিসের প্রতিযোগিতাকে ঘিড়ে। নতুন কিছু খেলোয়াড়ের উত্থান যেমন হয়েছে তেমনি পুরনোরাও নিজেদের রেকর্ডকে সমৃদ্ধ করতে কোন কার্পন্য করেনি। আর এতেই অলিম্পিকের গতি এগিয়ে গেছে, আলো ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে।
বার্তা সংস্থা এএফপি প্যারিস অলিম্পিকের ১০টি স্মরণীয় মুহূর্তকে খুঁজে বেরা করার চেস্টা করেছে, যা এখানে তুলে ধরা হলো :
ব্যতিক্রমী উদ্বোধনী অনুষ্ঠান :
এবারই প্রথমবারের মত অলিম্পিকের মূল ভেন্যুর বাইরে গিয়ে প্যারিসের ঐতিহ্যবাহী সিন নদীতে আয়োজিত হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ক্রীড়াবিদদের মার্চ পাস্ট। বিভিন্ন আকারের জলযানে চড়ে একেকটি দেশ তাদের পতাকা নিয়ে এই মার্চ পাস্টে উপস্থিত হয়। আর ব্যতিক্রমী এই আয়োজন সারা বিশ্বকে দারুনভাবে নাড়া দিয়েছে।
তবে উদ্বোধণী অনুষ্ঠানকে ঘিড়ে সমালোচনাও কম হয়নি। বড় বিতর্ক ছিল অনুষ্ঠানের একটি অংশ নিয়ে। ফ্রান্সের সমকামী ডিজে বারবারা বুচের পারফরমেন্স দেখে অনেকেই মনে করেছেন, যিশুখ্রিষ্টের ‘লাস্ট সাপার’-এর প্যারোডি করেছেন। যাতে চার্চ নেতা, রক্ষণশীল সমাজ, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকেও প্রতিক্রিয়া আসে। যদিও শিল্পনির্দেশক থমাস জলি এমন উদ্দেশ্য অস্বীকার করেন। অনলাইনে অবশ্য এনিয়ে আয়োজকদের হেনস্তার স্বীকার হতে হয়, যেটি গড়ায় পুলিশি অভিযোগ পর্যন্ত।
 
জকোভিচের ফিরে আসা :
পুরুষ টেনিস এককের  ফাইনালে বর্তমান সময়ের ক্রেজ কার্লোস আলকারাজকে পরাজিত করে স্বর্ণ জয়ের মাধ্যমে পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে সবকটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের সাথে অলিম্পিকের স্বর্ণ জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন নোভাক জকোভিচ। অনন্য এই কৃতিত্বের পর ৩৭ বছর বয়সী জকোভিচ রোলা গাঁরোতে চিৎকার করে এই অর্জনকে জানান দিয়েছেন। ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী এই সার্বিয়ান বলেছেন, দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার থেকে বড় অনুপ্রেরণা আর কিছু হতে পারেনা।
এই পরাজয়ে আলাকারাজও চোখের পানি ফেলেছেন। এসময় তিনি বলেন, স্পেনকে তিনি খাটো করেছেন।
 
নতুন রানী আন্ড্রেডকে বাইলসের কুর্নিশ :
জিমন্যাস্টিক্সকে এবারও নিজেকে ভালভাবেই প্রমান করে বিদায় নিয়েছেন সিমোনে বাইলস। কিন্তু ফ্লোর ফাইনালে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের রেবেকা আন্ড্রেডের কাছে নতী স্বীকার করে বিজয়মঞ্চে নতুন রানীকে কুর্নিশ করেছেন বাইলস। যা অনেকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। বাইলস ও তার মার্কিন সতীর্থ জর্ডান চাইলস এই ইভেন্টে আন্ড্রেডের পরে যথাক্রমে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক জয় করেছেন। বাইলস পরবর্তীতে বলেছেন, আমি যা করেছি এটাই করা উচিৎ ছিল। রেবেকা দারুন এক জিমন্যাস্ট, সে এখানকার রানী।
তবে পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ ক্রীড়া আদালত কোর্ট অব অ্যারবিট্রেশন ব্রোঞ্জটি দেয় রোমানিয়ার আনা বারবোসুকে। তাদের মতে, চাইলস প্রাথমিকভাবে যে পঞ্চম হয়েছিলেন তা থেকে তাকে এগিয়ে নেওয়া উচিত হয়নি।
 
১০০ মিটারে ফটো ফিনিশ :
গেমসের অন্যতম আকষর্ণীয় ইভেন্ট ১০০ মিটার স্প্রিন্টে এবার যা ঘটেছে তা খুবই বিরল। ৯.৭৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে নাটকীয় ভাবে এই ইভেন্টে স্বর্ণ ছিনিয়ে নিয়েছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নোহা লাইলস। এক সেকেন্ডের পাঁচ হাজার ভাগের এক ভাগ সময়ের ব্যবধানে তিনি পিছনে ফেলেছেন জ্যামাইকান কিশানে থম্পসনকে। ফটো ফিনিশের পর বিজয় নিশ্চিত হবার পর যুক্তরাষ্ট্রের লাইলস বলেছেন, আমি তাদের সবার মধ্যে মানুষ, আমি নেকড়েদের মধ্যে নেকড়ে।
 
ক্রিকেটের বাইরেও ভারত-পাকিস্তান লড়াই :
ভারত-পাকিস্তান লড়াই মানে পুরো বিশ্বের সামনে ক্রিকেটই সামনে চলে আসে। কিন্তু ক্রিকেটের বাইরেও যে এই দুই দেশের দুই তারকার লড়াই হতে পারে তা বারবার অলিম্পিক কিংবা এশিয়ান গেমসে মনে করিয়ে দেয়া হয়। দুই দেশের দুই জ্যাভলিন তারকাকে নিয়ে সবাই আশায় বুক বাঁধে। এবার অবশ্য পাকিস্তানের আরশাদ নাদিম আর কোন ভুল করেননি। নতুন অলিম্পিক রেকর্ড ৯২.৯৭ মিটার দূরত্বে জ্যাভলিন ছুঁড়ে তিনি পাকিস্তানকে ব্যকিগত কোন ইভেন্টে ইতিহাসে প্রথম স্বর্ণ উপহার দিয়েছেন। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় নিরাজ চোপড়াকে রৌপ্য পদক নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।
অসাধারণ এই বিজয়ের পর আরশাদ বলেছেন, ‘ক্রিকেট ম্যাচেই কেবলমাত্র দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যায়। কিন্তু অন্য ক্রীড়ায়ও এই ধরনের প্রতিযোগিতা আছে। একটি কথাই বলবো ভারত-পাকিস্তানের তরুণদের উদ্দ্যেশে যারা আমাদের অনুসরণ করে তাদের জন্য এটা ভাল একটি বার্তা। প্রতিদ্বন্দ্বি হলেও এটা দুই দেশের জন্য একটি ইতিবাচক দিক।’
 
বিজয় মঞ্চে দুই কোরিয়ার সেলফি ভাইরাল :
উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মিক্সড ডাবলস টেবিল টেনিস খেলোয়াড়দের বিজয় মঞ্চে একসাথে সেলফি তোলার দৃশ্যটি দক্ষিণ কোরিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। স্বর্ণ জয়ী চীনের পেছনে থেকে রৌপ্য জয় করে  উত্তর কোরিয়া, ব্রোঞ্জ জেতে দক্ষিণ কোরিয়া। পদক গলায় ঝুলিয়ে গ্রুপ সেলফি তোলেন দক্ষিণ কোরিয়ার লিম জং-হুন। দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা জংঅ্যাং ইলবো লিখেছিল, ‘দুই কোরিয়ার পতাকা আর স্যামসাং ফোন নিয়ে একটি সেলফি।’
 
ট্রিউয়ের স্বপ্নপূরণ :
মাত্র ১৪ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান স্কেটবোর্ড সেনসেশন আরিসা ট্রিউ দেশের হয়ে সর্বকণিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে প্যারিসে স্বর্ণ জয় করেছেন। ট্রেডমার্ক গোলাপি হেলমেট মাথায় দিয়ে ট্রিউ ফাইনাল রাউন্ডে অত্যন্ত ঝুঁকিয়ে নিয়ে দুর্দান্ত গতিতে প্রতিযোগিতা শেষ করেছেন।
ট্রিউ বলেন, ‘অলিম্পিকে স্কেটবোর্ডিং করা আর বাড়ির আশপাশে স্কেটবোর্ডিং করার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এখানে শুধু দর্শক বেশি।’
এই ইভেন্টে চায়নার হয়ে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করার রেকর্ড গড়েছেন ১১ বছর বয়সী ঝেং হাওহাও।
 
বক্সিংয়ে লিঙ্গ বিতর্ক :
লিঙ্গ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে তাইওয়ানের লিন ইউ-টিংয়ের মতো আলজেলিয়ার বক্সার ইমানে খেলিফকে গত বছরের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এবার প্যারিসে অংশ নেন দুজনই। যদিও তাদের এই অংশগ্রহণ এবারের গেমসে সবচেয়ে বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
‘আমার অংশ নেওয়ার পুরো যোগ্যতা আছে, আমি অন্য যেকোনো নারীর মতোই। আমার জন্ম নারী হিসেবে, বেড়ে উঠেছি নারী হিসেবে, অংশও নিয়েছি নারী হিসেবে’- স্বর্ণ জয়ের পর সমালোচকদের ‘আক্রমণের’ জবাব দিতে এসব কথা বলেন তিনি।
 
লোপেজের হাই ফাইভ :
কিংবদন্তী এ্যাথলেট কার্ল লুইস ও সাঁতারু মাইকেল ফেলপসের পর প্রথম কোন ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্টে টানা পাঁচটি স্বর্ণ জয়ের কৃতিত্ব গড়েছেন কিউবার কুস্তিগীর মিয়াইন লোপেজ। স্বর্ণ জয়ের পর ম্যাটের মধ্যে নিজের জুতো রেখে ৪২ বছর বয়সী লোপেজ ইঙ্গিত দিয়েছেন এটাই শেষ। কিন্তু একইসাথে বলেছেন, কুস্তিকে আমি আজীবন ভালবেসে যাব। এটা আমার জীবন।’
 
শুটিংয়ে ঝড় তোলা ইউসুফ :
সাধারণ ভাবে রেঞ্জে এসে কোন ধরনের নিরাপত্তা কিট ব্যবহার না করে তুরষ্কের শুটার ইউসুফ ডিকেচ রৌপ্য পদক জয় করে হইচই ফেলে দেন। সাধারণ একটি চশমা, টিশার্ট পড়ে পকেটে এক হাত রেখে তার শুট করার দৃশ্য পুরো বিশ্বে ভাইরাল হয়েছে।