বাসস
  ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২০:২৯

অবসরের ঘোষণা দিয়েই দিলেন নাদাল

প্যারিস, ১০ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : শেষ পর্যন্ত টেনিসকে বিদায় বললেন রাফায়েল নাদাল। আগামী মাসে ডেভিস কাপ খেলে ক্লে কোর্টের রাজা র‌্যাকেট তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মাধ্যমে ২২ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক স্প্যানিশ মহাতারকার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের পরিসমাপ্তি হতে যাচ্ছে। বিদায় বেলায় সতীর্থ, বন্ধু, প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রংশসাও কুড়িয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় এ সম্পর্কে নাদাল বলেছেন, ‘পেশাদার টেনিস থেকে অবসরের ঘোষণা দিচ্ছি। বাস্তবতা হচ্ছে এই মুহূর্তে আমি কিছু কঠিন সময় কাটিয়েছি, বিশেষ করে গত দুই বছর। অবশ্যই এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত যা চূড়ান্ত করতে আমার বেশ কিছু সময় লেগেছে। কিন্তু জীবনে সবকিছুরই শুরু ও শেষ আছে।’
৩৮ বছর বয়সী নাদাল তার দুই দশকেরও বেশী সময়ের পেশাদার ক্যারিয়ারে ৯২টি শিরোপা সহ এককভাবে ১৩৫ মিলিয়ন ডলারের প্রাইজমানি জয় করেছেন। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক টেনিস সার্কিটে সর্বকালের অন্যতম সেরা এক তারকা হিসেবেই তিনি বিদায় নিচ্ছেন।  
২০ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী নাদালের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী রজার ফেদেরার বলেছেন, ‘কি অসাধারণ ক্যারিয়ান, রাফা! আমি সবসময়ই আশা করেছি এই দিনটি যেন না আসে। অবিস্মরণীয় কিছু মুহূর্ত উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ। টেনিসে তোমার অসাধারণ অর্জণগুলোকে আমরা ভালবাসি। এটা সত্যিই সৌভাগ্যের।’
নারী বিভাগে বর্তমান নাম্বার ওয়ান ইয়ানিক সিনার বলেছেন নাদালের বিদায় টেনিস বিশে^র জন্য একটি দু:সংবাদ।
আগামী মাসে মালাগায় অনুষ্ঠিত ডেভিস কাপে নাদাল কার্লোস আলকারাজের সাথে জুটি বেঁধে অংশ নিবেন। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ডেভিস কাপ শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে নাদাল কোর্টে নামবেন।
নাদাল বলেন, ‘আমি মনে করি ক্যারিয়ারকে বিদায় জানানোর এটাই সঠিক সময়। কল্পনাও করিনি এতটা লম্বা সময় খেলা চালিয়ে যেতে পারবো এবং এতটা সাফল্য অর্জণ করবো। ডেভিস কাপ আমার শেষ টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে, এতে আমি খুবই খুশী। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার মধ্যে আলাদা একটি ভাললাগা আছে।’
২০০৪ সালে টিনএজার হিসেবে প্রথম ডেভিস কাপের শিরোপা জিতেছিলেন নাদাল।
ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় ফ্রেঞ্চ ওপেনের লাল কোর্টে দাপট দেখিয়েছেন নাদাল। এই কোর্টেই জিতেছেন ১৪টি স্ল্যাম শিরোপা। ২০০৫ সালে ১৯ বছর বয়সে ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রথম শিরোপা পাওয়া নাদাল সর্বশেষটি জিতেছেন ২০২২ সালে। এর মাধ্যমে ফ্রেঞ্চ ওপেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে তিনি শিরোপা জেতার রেকর্ড গড়েছেন। রোলা গ্যাঁরোতে ১১৮ ম্যাচে মাত্র পাঁচটি ম্যাচে তিনি পরাজিত হয়েছেন।
এছাড়া চারবার ইউএস ওপেন, দুইবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপাও জয় করেছেন। ২০০৯ সালে প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ায় শিরোপা জেতার ১৩ বছর পর দ্বিতীয় শিরোপাটি জয় করেছেন ২০২২ সালে।
২০০৮ ও ২০১০ সালে জিতেছেন দুটি উইম্বলডন শিরোপা। যদিও ক্যারিয়ারে ঘাসের কোর্টে কখনই খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেননি নাদাল। ২০০৮’র ফাইনালে রজার ফেদেরারের বিপক্ষে পাঁচ সেটের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। অল ইংল্যান্ড ক্লাবে এখনো সেই ফাইনাল ম্যাচটি ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাইনাল হিসেবে বিবেচিত হয়।
২০০৮ সালে অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ারে গোল্ডেন স্ল্যাম জয় করেছিলেন নাদাল।
পাঁচবার বছর শেষ করেছেন বিশ^ র‌্যাঙ্কিংয়ের নাম্বান ওয়ান খেলোয়াড় হিসেবে। ২০০৫ সালের পর থেকে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত কখনই শীর্ষ ১০ থেকে ছিটকে পড়েননি। সব মিলিয়ে টানা ২০৯ সপ্তাহ র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিলেন। ২০০৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রতি বছর অন্তত একটি শিরোপা জয় করেছেন।
দুই বছর আগে অবসরে যাওয়া নাদালের চির প্রতিদ্বন্দ্বী ফেদেরারের ২০ গ্র্যান্ড স্ল্যামের রেকর্ড ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের মাধ্যমে ছাড়িয়ে যান নাদাল। এছাড়া সর্বকালের সর্বোচ্চ স্ল্যাম বিজয়ী জকোভিচের সাথে ৬০ বার মুখোমুখি হয়েছেন নাদাল। যেখানে সার্বিয়ান জকোভিচ মাত্র দুইবার জয়ী হয়েছেন। সর্বশেষ এ বছরের প্যারিস অলিম্পিকে নাদালকে সরাসরি সেটে পরাজিত করেছিলেন জকোভিচ।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ইনজুরির কারনে প্রায়ই কোর্টের বাইরে থাকতে হয়েছে নাদালকে। গত দুই বছর যাবত এই ইনজুরি তাকে খেলতে দেয়নি। যে কারনে অবসরের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন নাদাল। গোঁড়ালি, কব্জি, হাঁটু, কনুই ও পেশীর সমস্যায় ১৮টি গ্র্যান্ড স্ল্যামে খেলতে পারেননি, পাঁচটি বড় টুর্নামেন্টের মাঝপথে তাকে কোর্ট ছেড়ে আসতে হয়েছে। ২০২২ ফ্রেঞ্চ ওপেনে পায়ে ব্যাথানাশক ইঞ্জেকশন দিয়ে প্রতিদিন কোর্টে নেমেছেন। এরপরপরই চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে দীর্ঘদিন বিশ্রামে থাকতে হয়েছে, তখনই কার্যত ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ে।