শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ অক্টোবর ২০২৪ (বাসস) : তিন ব্যাটার টনি ডি জর্জি, ট্রিস্টান স্টাবস ও ওয়াইন মুল্ডারের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪৪.২ ওভারে ৬ উইকেটে ৫৭৫ রানের বড় স্কোরের পর ইনিংস ঘোষণা করেছে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে দ্বিতীয় দিন শেষে ৩৮ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। এখনও ৫৩৭ রানে পিছিয়ে টাইগাররা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিনের প্রথম ঘন্টায় উইকেটের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। এসময় ১৫ ওভারে ৫৯ রান যোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাটার টনি ডি জর্জি ১৫০ ও ডেভিড বেডিংহাম তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে উইকেটে পুরোপুরিভাবে সেট হয়ে যান।
দিনের ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন আগের দিন ২ উইকেট নেওয়া স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭৮ বলে ৫৯ রান করা বেডিংহামকে বোল্ড করেন তাইজুল। তৃতীয় উইকেটে ১৪৮ বলে ১১৬ রানের জুটি গড়েন জর্জি ও বেডিংহাম।
বেডিংহাম ফেরার পর সাজঘরের পথ ধরেন জর্জিও। তাইজুলের বলে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। রিভিউ নিয়েও নিজের উইকেট বাঁচাতে পারেননি এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। ১২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ২৬৯ বলে ১৭৭ রান করেন জর্জি।
জর্জির পর ক্রিজে আসেন মিরপুর টেস্টের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক কাইল ভেরেনি। এবার মাত্র ৩ বল খেলে তাইজুলের বলে লেগ বিফোর হয়ে খালি হাতে বিদায় নেন ভেরেনি। এর মাধ্যমে ইনিংসে পঞ্চম উইকেট পূর্ণ করেন তাইজুল। ৪৯ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে এই নিয়ে ১৪তমবার পাঁচ উইকেট পূর্ণ করলেন তাইজুল। সাকিব আল হাসানের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে চট্টগ্রামে ৫০ উইকেট পূর্ণ করেন তাইজুল।
তাইজুলের ঘূর্ণিতে ৩৮৬ থেকে ৩৯১ রানে পৌঁছাতে ৩ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এ অবস্থায় ষষ্ঠ উইকেটে ৩২ রানের জুটিতে প্রোটিয়াদের উইকেট পতন ঠেকান রায়ান রিকেলটন ও ওয়াইন মুল্ডার। রিকেলটনকে ১২ রানে শিকার করে জুটি ভাঙ্গেন বাংলাদেশের পেসার নাহিদ রানা। ৪২৩ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এতে প্রোটিয়াদের বাকী ৪ উইকেট দ্রুত তুলে নেওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের স্বপ্ন গুড়িয়ে দেন মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে সপ্তম উইকেটে ভেরেনির সাথে ১১৯ রানের জুটি গড়া ওয়াইন মুল্ডার।
এবার সেনুরান মুতুসামিকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে ১৮৬ বলে ১৫২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন মুল্ডার। ১৪৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাইজুলের বলে ছক্কা মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৬তম ম্যাচে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান মুল্ডার। তার সেঞ্চুরির পরই ইনিংস ঘোষনা করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
মুল্ডারের সাথে ১৫০ রানের জুটি গড়া মুতুসামি ৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ৭৫ বল খেলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন মুতুসামি। ৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৫০ বলে অপরাজিত ১০৩ রান করেন মুল্ডার।
এই ইনিংসে ১৭টি ছক্কা হাঁকিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এক ইনিংসে এটিই সর্বোচ্চ ছক্কা প্রোটিয়াদের। এশিয়ার মাটিতে এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার তিন ব্যাটার এক ইনিংসে সেঞ্চুরি করলো। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ব্লুমফন্টেইনে বাংলাদেশের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার চার ব্যাটার সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন।
তাইজুল ১৯৮ রানে ৫টি এবং রানা ৮৩ রানে ১ উইকেট নেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শেষে ব্যাট করতে নেমে মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে পেসার কাগিসো রাবাদার বলে উইকেটরক্ষক ভেরেনিকে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে সাজঘরে ফিরেন ওপোনর সাদমান ইসলাম।
তিন নম্বরে ২ রানের বেশি করতে পারেননি জাকির হাসান। রাবাদার বলে ভেরেনিকে ক্যাচ দেন তিনি।
সাদমান-জাকির না পারলেও দুই অংকের কোটা পার করে সাজঘরে ফিরেন আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। পেসার ডেন প্যাটারসনের বলে ড্রাইভ খেলে ব্যক্তিগত ১০ রানে আইডেন মার্করামকে ক্যাচ দেন জয়।
২৯ রানে টপ অর্ডারের ব্যাটাররা ফেরার পর নাইটওয়াচম্যান হিসেবে খেলতে নেমে ৩ রানে স্পিনার কেশব মহারাজার বলে বোল্ড হন হাসান মাহমুদ। এরপর দিনের বাকী ১২ বল আর কোন বিপদ হতে দেননি মোমিনুল হক ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। মোমিনুল ৬ ও শান্ত ৪ রানে অপরাজিত আছেন।
রাবাদা ২টি, প্যাটারসন ও মহারাজ ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৫৭৫/৬ ডি, ১৪৪.২ ওভার (জর্জি ১৭৭, স্টাবস ১০৬, মুল্ডার ১০৫*, তাইজুল ৫/১৯৮)।
বাংলাদেশ : ৩৮/৪, ৯ ওভার (জয় ১০, মোমিনুল ৬*, রাবাদা ২/৮)।