শিরোনাম
ঢাকা, ২১ নভেম্বর ২০২৪ (বাসস) : সর্বশেষ দুই সফরেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছে ভারত। টানা তৃতীয়বারের মত সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া। ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে দশ বছর টেস্ট সিরিজ জিততে না পারার বন্ধ্যাত্ব এবার ঘোচাতে চায় অস্ট্রেলিয়া।
সিরিজ জয়ের লক্ষ্যের পাশাপাশি তৃতীয় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার পথে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জও রয়েছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের টিকেটের জন্য বর্ডার-গাভাস্কার এবারের সিরিজটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে দু’দলের কাছে।
পার্থের ওয়াকা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টটি আগামীকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শুরু হবে।
২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল ভারত। সেবারই প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়া মাটিতে টেস্ট জয়ের রেকর্ড গড়ে বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়া।
এরপর ২০২০ সালে পরের সফরেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ের নজির গড়ে ভারত। ঐ সিরিজের প্রথম টেস্টে বিরাট কোহলি ও শেষ তিন সিরিজে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আজিঙ্কা রাহানে।
নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে ছাড়াই হ্যাটট্রিক সিরিজে জয়ের মিশন শুরু করবে ভারত। দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হবার কারণে প্রথম টেস্টে খেলছেন না রোহিত। দ্বিতীয় টেস্টের আগে দলে যোগ দিবেন তিনি। রোহিতের অনুপস্থিতিতে প্রথম টেস্টে নেতৃত্ব দিবেন দলের সেরা পেসার জসপ্রিত বুমরাহ।
দল যখন মহাচাপে ঠিক সেই সময় নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন বুমরাহ। এ মাসে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ, দলে চোট-আঘাত জনিত একাধিক সমস্যা, দলের সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলির ব্যাটে রানখড়ার চিন্তাও রয়েছে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টের। তাই অতীত নিয়ে না ভেবে পার্থ টেস্ট থেকে নতুন করে শুরু করতে চান ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক বুমরাহ।
প্রথম টেস্টের আগে সাংবাদিক সম্মেলনে বুমরাহ বলেন, ‘ক্রিকেটের সৌন্দর্যটাই এমন। আপনি সবসময় শূন্য থেকে শুরু করতে পারেন। নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। অবশ্যই নিউজিল্যান্ড সিরিজ নিয়ে আমরা হতাশ। কিন্তু আমরা অতীতের কোন বোঝা বইতে চাই না। আমরা এখানে নতুন মানসিকতা নিয়ে এসেছি। ঘরের মাঠে পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল, এখানের পরিস্থিতি অন্যরকম।’
রোহিত না থাকায় যশ্বসী জয়সওয়ালের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করবেন লোকেশ রাহুল। আঙুলের ইনজুরিতে প্রথম টেস্টে অনিশ্চিত শুভমান গিল। তার জায়গায় খেলতে পারেন দেবদূত পাড্ডিকাল। এসবের মাঝে ভারতের বড় চিন্তার কারণ কোহলির ফর্ম।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ টেস্টের ৬ ইনিংসে ১৫.৫০ গড়ে ৯৩ রান করেছিলেন কোহলি। তবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দুর্দান্ত রেকর্ড আছে তার। ১৩ ম্যাচের ২৫ ইনিংসে ৫৪.০৮ গড়ে ৬টি সেঞ্চুরি ও ৪টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৩৫২ রান করেছেন কোহলি।
কোহলিকে নিয়ে বুমরাহ বলেন, ‘সে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। আমাদের দলে কোহলি সবচেয়ে পেশাদার। তার অনেক সাফল্য আছে। একটা-দু’টো সিরিজ খারাপ যেতেই পারে। কোহলিকে কোনও পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে মরিয়া সে।’
এবার ভারতকে কোন প্রকার ছাড় দিতে রাজি নয় অস্ট্রেলিয়া। সিরিেেজর প্রথম দিন থেকেই আক্রমনাত্মক ক্রিকেট খেলার ইঙ্গিত অসি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের। সর্বশেষ দুই সিরিজ স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়ে কামিন্স বলেন, ‘আগের দুই সফরে ভালো ক্রিকেট খেলেছে ভারত। তবে আমাদেরও অনেক ভুল ছিলো। কিন্তু এবার ভারতকে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। সিরিজের প্রথম দিন থেকেই ভারতের বিপক্ষে আধিপত্য বিস্তার করে খেলবো আমরা।’
ডেভিড ওয়ার্নার অবসর নেওয়ার পর থেকে ওপেনিং পজিশন নিয়ে বেশি বিপাকে আছে অস্ট্রেলিয়া। একপ্রান্তে উসমান খাজা নিজের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারলেও, অন্যপ্রান্তে কেউ থিতু হতে পারছেন না। ওয়ার্নারের অবসরের পর চার নম্বর থেকে ওপেনিংয়ে ব্যাট করেছিলেন স্টিভেন স্মিথ। চার টেস্টের ৮ ইনিংসে সুবিধা করতে পারেননি স্মিথ। মাত্র ১টি হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন তিনি।
সিরিজের প্রথম টেস্টের জন্য ব্যাটিং অলরাউন্ডার নাথান ম্যাকসুয়েনে প্রথমবারের মত দলে ভিড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম টেস্টে ওপেনিংয়ে উসমান খাজার সঙ্গী হবেন ২৫ বছর বয়সী ম্যাকসুয়েনে।
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৩৪ ম্যাচে ৩৮.১৬ গড়ে ৬টি সেঞ্চুরি ও ১২টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ২২৫২ রান করেছেন ম্যাকসুয়েনে। গত দুই বছরে ব্যাট হাতে সেরা ছন্দে ছিলেন তিনি। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতে ১৮ উইকেট শিকার করেছেন ম্যাকসুয়েনে।
অভিষেক টেস্টের আগে ম্যাকসুয়েনে বলেন, ‘আমাকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে তা ভাল ভাবেই করতে পারবো। নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করবো। যে কোনও নতুন ক্রিকেটার দলে আসলেই বড় ধরণের চাপ থাকে। দেশের হয়ে খেলতে নামলে এ সব থাকবেই। তবে ঘাবড়ে গেলে চলবে না। যারা এ ধরনের চাপ সামলে নিতে পারবে তারাই সফল হবে। আমার পাশে অনেকে রয়েছে। তাদের গর্বিত করতে চাই।’
তবে পার্থ টেস্টে ঝামেলা করতে পারে বৃষ্টি। গত কিছু দিন ধরেই পার্থে বৃষ্টি হচ্ছে। ম্যাচের সময়েও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে টেস্টের প্রথম দিন সকালে বৃষ্টি হতে পারে। তাই উইকেট তৈরিতে সমস্যা হয়েছে কিউরেটরের।
পার্থ স্টেডিয়ামের পিচ কিউরেটর আইজ্যাক ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘পার্থে যে ভাবে পিচ তৈরি করা হয়, এবারে সে ভাবে করা যায়নি। মঙ্গলবার সারা দিন পিচ ঢেকে রাখতে হয়েছিল। বুধবার কিছু সময় কাজ করতে পেরেছি। আবহাওয়ার কারণে মনে হচ্ছে পিচ ভাঙবে না। প্রথম দিনের থেকে পিচ কিছুটা খারাপ হবে। কিন্তু সেটা খুব প্রভাব ফেলবে না। পিচে ঘাস থাকবে। সেই সাথে বাউন্সও থাকবে। তবে ওয়াকায় যেমন পিচে ফাটল দেখা যেত, তেমনটা হবে না। আবহাওয়া সেটা হতে দিবে না। ঘাস কতক্ষণ মাথা তুলে থাকতে পারবে, তার উপর নির্ভর করবে পিচ কেমন আচরণ করবে।’
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দৌড়ে আছে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, শ্রীলংকা নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ১২ ম্যাচে ৬২.৫০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া। টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে আছে ভারত। ১৪ ম্যাচে ৫৮.৩৩ শতাংশ পয়েন্ট আছে টিম ইন্ডিয়ার।
ফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকতে হলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অন্তত ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জিততে হবে ভারতকে। তারপর অপেক্ষা করতে হবে অন্যান্য দলের ফলাফলের উপর। কারণ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই চক্রে এটিই শেষ সিরিজ ভারতের। ভারতের পর শ্রীলংকার বিপক্ষে দুই টেস্ট খেলবে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের কাছে হারলেও, ফাইনালের ভালো সুযোগ থাকবে অসিদের।
এখন পর্যন্ত ১০৭টি টেস্ট খেলেছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। এরমধ্যে ভারত ৩২ ও অস্ট্রেলিয়া ৪৫ ম্যাচে জিতেছে। ১টি টাই ও ২৯টি ম্যাচ ড্র হয়।
অস্ট্রেলিয়া দল : প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), স্কট বোলান্ড, অ্যালেক্স ক্যারি, জশ হ্যাজলউড, ট্রাভিস হেড, জশ ইংলিশ, উসমান খাজা, মার্নাস লাবুশেন, নাথান লিঁও, মিচেল মার্শ, নাথান ম্যাকসুয়েনে, স্টিভেন স্মিথ, মিচেল স্টার্ক।
ভারত দল : জসপ্রিত বুমরাহ (অধিনায়ক), যশ্বসী জয়সওয়াল, অভিমান্য ইশ্বরণ, শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, ঋসভ পান্থ, সরফরাজ খান, ধ্রুব জুরেল, রবীচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা, মোহাম্মদ সিরাজ, প্রষিদ্ধ কৃষ্ণা, আকাশ দীপ, হর্ষিত রানা, নিতিশ কুমার রেড্ডি ও ওয়াশিংটন সুন্দর।