শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ (বাসস) : ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাঠের বাইরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় ধরনের সংস্কার হয়েছে। কিন্তু মাঠের পারফরমেন্স ছিলো হতাশাজনক। ব্যক্তিগত পারফরমেন্স আলো ছড়ালেও দলীয় প্রচেষ্টার অভাব থাকায় ম্যাচ জয়ের চেয়ে হারের পাল্লাটাই বেশি ভারী হয়েছে।
তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশের পারফরমেন্স পরিসংখ্যান :
এ বছর ওয়ানডেতে ৯টি ম্যাচ খেলে মাত্র তিনটিতে জিতেছে এবং ছয়টিতে হেরেছে বাংলাদেশ। এ সময়ে তিনটি সিরিজ খেলে একটিতে জয় ও দু’টিতে হেরেছে টাইগাররা। শ্রীলংকার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জিতলেও, আফগানিস্তানের কাছে ২-১ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ দল।
টেস্ট ফরম্যাটে ১০টি ম্যাচ খেলে তিনটি জিতেছে এবং সাতটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। এ বছর নিজেদের প্রথম টেস্ট সিরিজে শ্রীলংকার কাছে ২-০ ব্যবধানে হারের পর পাকিস্তানের মাটিতে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা। পাকিস্তানের মাটিতে পাওয়া সফল্য ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। এরপর ভারত সফরে ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুই ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় টাইগাররা। তবে এ বছর নিজেদের শেষ টেস্ট সিরিজে হারের লজ্জা এড়ায় বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই ম্যাচের সিরিজে পিছিয়ে পড়েও ১-১ সমতায় শেষ করে টাইগাররা।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ২৪টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে সমান ১২টিতে জয় এবং ১২টিতে হেরেছে টাইগাররা।
বড় অর্জন এবং হতাশা :
এ বছর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিলো টেস্ট ফরম্যাটে। পাকিস্তানের মাটিতে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জয়ী হয় টাইগাররা।
আর সবচেয়ে বড় হতাশা ছিলো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে টি-টোয়েন্টিতে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হারে বাংলাদেশ।
নারী ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আয়ারল্যান্ডের কাছে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ দল।
মিরাজের বছর :
টেস্ট র্যাংকিংয়ে অলরাউন্ডারদের তালিকায় দ্বিতীয়স্থানে থেকে বছর শেষ করতে যাচ্ছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। অথচ বছরের শুরুতে শীর্ষ ১০’এর মধ্যেও ছিলেন না তিনি। এমন উত্থানই বলে দিচ্ছে এই ফরম্যাটে কতটা ধারাবাহিক ছিলেন মিরাজ। টেস্ট ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে ব্যাটিং এবং বোলিং তালিকায় শীর্ষে ছিলেন মিরাজ।
পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে সাকিব আল হাসানের পথে মিরাজ হাঁটতে থাকবেন বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ে বড় অবদান রাখেন মিরাজ। ব্যাট ও বল হাতে সিরিজ সেরা পারফরমেন্স করে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয় করেন তিনি।
ব্যাট হাতে ৬১৪ রান এবং বল হাতে ৩১ উইকেট নিয়ে সাফল্যের সাথে বছর শেষ করতে যাচ্ছন মিরাজ।
সতীর্থ হাসান মাহমুদের সাথে বোলিং পারফরমেন্সে কঠিন লড়াই হয়েছে মিরাজের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০ উইকেট নিয়ে বছর শেষ করছেন পেসার হাসান। এক বর্ষপঞ্জিকায় বাংলাদেশ পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েছেন হাসান।
রান বিবেচনায় ব্যাটিংয়ে মিরাজের কাছাকাছি ছিলেন বাঁ-হাতি ব্যাটার মোমিনুল হক। ১৯ ইনিংসে ১টি সেঞ্চুরি ও ৫টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৫১৯ রান করেছেন তিনি।
অদম্য মাহমুদুল্লাহ :
এ বছর বাংলাদেশ খেলেছে মাত্র ৯টি ওয়ানডে। এই নয় ম্যাচে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশী ৩৩৭ রান করেছেন মাহমুদুল্লাহ। এরমধ্যে ২৯৪ রান এসেছে শেষ চার ম্যাচে।
শারজাহতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে ৯৮ রান করার পর, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজের তিন ইনিংসে যথাক্রমে- ৫০, ৬২ এবং অপরাজিত ৮৪ রান করেন। দূর্ভাগ্যবশত মাহমুদুল্লাহর দারুণ ব্যাটিং পারফরমেন্সের পরও ঐ চার ম্যাচই হেরেছে বাংলাদেশ।
বল হাতে ৭ ম্যাচে সর্বোচ্চ ১৪ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন।
রিশাদের রেকর্ড ভাঙা বছরে টি-টোয়েন্টিতে সেরা হৃদয় :
ইনজুরিতে বছরের শেষ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে পারেননি ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়। তারপরও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে বছর শেষ করবেন তিনি। ২০ ইনিংসে ৪৯৩ রান করেছেন এই ডান-হাতি ব্যাটার। এ বছর দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২১টি ছক্কায় জাকের আলির সাথে রেকর্ড ভাগাভাগি করেছেন হৃদয়।
এ বছর ২৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। সংক্ষিপ্ত ভার্সনে বাংলাদেশের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ২৪ ম্যাচের সবগুলোই খেলেছেন রিশাদ হোসেন। বল হাতে সর্বোচ্চ ৩৫ উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। এক বর্ষপঞ্জিকায় এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে আর কোনো বোলারই ৩০টির বেশি উইকেট নিতে পারেননি। এ বছর ৩০ উইকেট শিকার করেছেন তাসকিনও। ২০২১ সালে ২৮ উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজুর রহমানের রেকর্ড ভাঙ্গেন রিশাদ-তাসকিন।
তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সেরা পারফরমার মিরাজ-তাসকিন :
চলতি বছর তিন ফরম্যাট মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে হাজারের বেশি রান করেছেন একমাত্র মিরাজই। কিন্তু হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়ার কাজটা এখনও পাকাপোক্ত করতে পারেননি তিনি। এ বছর সাতটি অর্ধশতক করেছেন মিরাজ। কিন্তু ৩০ ইনিংসে একবারও সেঞ্চুরি করতে পারেননি তিনি।
বোলিংয়ে চোখে পড়ার মত পরিবর্তন এনেছেন তাসকিন। ১০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২৪০ উইকেট নেওয়া তাসকিন এ বছর শিকার করেছেন ৬৩ উইকেট। এই বর্ষপঞ্জিকায় দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড সাকিব আল হাসানের। ২০১০ সালে তিনটি সংস্করণে ৭৭ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব।
২০২৪ সালে টেস্টে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ ব্যাটার :
মেহেদী হাসান মিরাজ : ১৮ ম্যাচে ৬১৪ রান, সর্বোচ্চ ৯৭, গড় ৩৮.৩৭, হাফ সেঞ্চুরি-৪
মোমিনুল হক : ১৯ ম্যাচে ৫২৯ রান, সর্বোচ্চ ১০৭*, গড়- ৩১.১১, সেঞ্চুরি-১ এবং হাফ সেঞ্চুরি- ৫
লিটন দাস : ১৬ ম্যাচে ৩৯৪ রান, সর্বোচ্চ ১৩৮, গড়- ২৪.৬২, সেঞ্চুরি-১ এবং হাফ সেঞ্চুরি-১
সাদমান ইসলাম : ১৪ ম্যাচে ৩৬৪ রান, সর্বোচ্চ ৯৩, গড় ২৮, হাফ সেঞ্চুরি-৩
মুশফিকুর রহিম : ১১ ম্যাচে ৩৩১ রান, সর্বোচ্চ ১৯১, গড়- ৩৩.১০, সেঞ্চুরি-১
২০২৪ সালে টেস্টে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ বোলার :
মেহেদি হাসান মিরাজ : ৩১ উইকেট, সেরা- ৫-৬১, গড়- ৩৬.০৯, পাঁচ উইকেট- একবার
হাসান মাহমুদ : ৩০ উইকেট, সেরা- ৫-৪৩, গড়-২৮.৩০, পাঁচ উইকেট- দু’বার
তাইজুল ইসলাম : ২৫ উইকেট, সেরা- ৫-৫০, গড়- ৩৫.৫২, পাঁচ উইকেট- তিনবার
নাহিদ রানা: ২০ উইকেট, সেরা- ৫-৬১, গড়- ৩৬.৫৫, পাঁচ উইকেট- একবার
তাসকিন আহমেদ : ১৯ উইকেট, সেরা- ৬-৬৪, গড়- ১৯.৯৪, পাঁচ উইকেট- একবার।
২০২৪ সালে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ ব্যাটার :
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ : ৯ ম্যাচে ৩৩৭ রান, সর্বোচ্চ ৯৮, গড় ৪৮.১৪, হাফ সেঞ্চুরি- ৪
মেহেদি হাসান মিরাজ : ৮ ম্যাচে ৩০৫ রান, সর্বোচ্চ ৭৭, গড় ৩৮.১২, হাফ সেঞ্চুরি- ৩
নাজমুল হোসেন শান্ত : ৫ ম্যাচে ২৮৬ রান, সর্বোচ্চ ১২২*, গড়- ৭১.৫০, সেঞ্চুরি -১ এবং হাফ সেঞ্চুরি- ১
সৌম্য সরকার : ৮ ম্যাচে ২৫৭ রান, সর্বোচ্চ ৭৩, গড়- ৩২.১২, হাফ সেঞ্চুরি -২
তানজিদ হাসান তামিম : ৭ ম্যাচে ২৩৪ রান, সর্বোচ্চ ৮৪, গড়- ৩৩.৪২, হাফ সেঞ্চুরি- ২
২০২৪ সালে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ বোলার :
তাসকিন আহমেদ : ৬৩ ওভারে ১৪ উইকেট, সেরা ৪-৫৩, গড় ২৩.৯২, পাঁচ উইকেট- ১বার
মুস্তাফিজুর রহমান : ১০ উইকেট, সেরা ৪-৫৮, গড়- ১৮.৪০, পাঁচ উইকেট- ১বার
মেহেদি হাসান মিরাজ : ৮ উইকেট, সেরা ২-৩৭, গড়- ৫০.৬২, পাঁচ উইকেট- নেই
শরিফুল ইসলাম : ৭ উইকেট, সেরা ৩-৫১, গড়- ৪৯.৫৭, পাঁচ উইকেট- নেই
রিশাদ হোসেন : ৫ উইকেট, সেরা ২-৬৯, গড়- ৫৩.৬০, পাঁচ উইকেট- নেই
২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ ব্যাটার :
তাওহিদ হৃদয় : ২০ ম্যাচে ৪৯৩ রান, সর্বোচ্চ ৬৩*, স্ট্রাইক রেট- ১৩০.০৭, হাফ সেঞ্চুরি- ৩
নাজমুল হোসেন শান্ত : ২০ ম্যাচে ৩৫৮ রান, সর্বোচ্চ ৫৩*, স্ট্রাইক রেট- ১০২.৫৭, হাফ সেঞ্চুরি- ১টি
তানজিদ হাসান তামিম : ১৮ ম্যাচে ৩৪৫ রান, সর্বোচ্চ ৬৭*, স্ট্রাইক রেট- ১১৪.২৩, হাফ সেঞ্চুরি- ৩টি
জাকের আলী অনিক : ১৭ ম্যাচে ৩৩৬ রান, সর্বোচ্চ ৭২*, স্ট্রাইক রেট-১২৭.৭৫, হাফ সেঞ্চুরি- ২টি
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ: ১৭ ম্যাচে ৩২২ রান, সর্বোচ্চ ৫৪, স্ট্রাইক রেট ১১৭.৯৪, হাফ সেঞ্চুরি- ২টি
২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ বোলার :
রিশাদ হোসেন : ৩৫ উইকেট, সেরা ৩-২১, গড়-১৯, চার উইকেট- নেই
তাসকিন আহমেদ : ৩০ উইকেট, সেরা ৩-১৪, গড়-১৬.৬০, চার উইকেট- নেই
মুস্তাফিজুর রহমান: ২৭ উইকেট, সেরা ৬-১০, গড় ১৯.১১, পাঁচ উইকেট- ১বার
তানজিম হাসান সাকিব: ২২ উইকেট, সেরা ৪-৭, গড়-২২.১৮, চার উইকেট- ১বার
মাহেদি হাসান: ১২ উইকেট, সেরা ৪-১৩, গড়- ২৭, চার উইকেট- ১বার