শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ (বাসস) : ইংল্যান্ডের ম্যারাথন রান-স্কোরিং জুটি হ্যারি ব্রুক ও জো রুট, অস্ট্রেলিয়ার বাঁ-হাতি হার্ড হিটার ট্রাভিস হেড ও ভারতীয় পেস বোলিং আইকন জাসপ্রিত বুমরাহ আইসিসি বর্ষসেরার পুরস্কার স্যার গারফিল্ড সোবার্স ট্রফির সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন।
এদের মধ্যে রুট ও হেড এর আগেও সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পেলেও বর্ষসেরা হতে পারেননি। বুমরাহ ও ব্রুক স্যার গারফিল্ড সোবার্স ট্রফির সংক্ষিপ্ত তালিকায় এবারই প্রথম জায়গা পেলেন।
একনজড়ে এই চারজনের এ বছরের অর্জনের দিকে আলোকপাত করা যাক :
হ্যারি ব্রুক (ইংল্যান্ড) :
১২ টেস্টে ১১০০ রান, গড় ৫৫.০০, সর্বোচ্চ রান ৩১৭
হ্যারি ব্রুক এ বছর টেস্ট ফরম্যাটে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পারফর্মার ছিলেন। ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটার শুধুমাত্র রান করার দিক থেকেই এগিয়ে ছিলেন না বরং ইংল্যান্ডের দ্রুততম ব্র্যান্ড অব ক্রিকেটের একজন পতাকাবাহকও ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলংকার বিপক্ষে হোম সিরিজ জয়ে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এমনকি বিদেশের মাটিতেও তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়।
ডান-হাতি এই ব্যাটার নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরপর দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন। এর মাধ্যমে ২০০৮ সালের পর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ড প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করে। ধারাবাহিক পারফরমেন্সে জো রুটকে টপকে আইসিসি টেস্ট ব্যাটিং র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানও দখল করেছিলেন ব্রুক।
তবে তার সেরা ইনিংসটি এসেছে উপমহাদেশের মাটিতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ে যা দলের জন্য অবদান রেখেছে।
স্মরণীয় পারফরমেন্স :
মুলতানে ব্রুক ক্যারিয়ারের প্রথম ত্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকান। ৩২২ বলে তার করা ৩১৭ রানের ইনিংসটি অনেকদিন সকলের মনে গেঁথে থাকবে। জো রুটকে সাথে নিয়ে ৪৫৩ রানে জুটি গড়ে তুলেছিলেন।
এই জুটির উপর ভর করে ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান সংগ্রহ করে। ইনিংস ও ৪৭ রানে ইংল্যান্ড জয়ী হয়। দুর্দান্ত ইনিংসের কারনে ব্রুক হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা।
জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত) :
১৩ টেস্টে ৭১ উইকেট, গড় ১৪.৯২, সেরা বোলিং ৬/৪৫
৮ টি২০তে ১৫ উইকেট, গড় ৮.২৬, ইকোনোমি ৪.১৭
ভারতীয় এই পেসার সব ফরম্যাটেই নিজেকে প্রমাণের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিলেন। তার দূরন্ত পারফরমেন্সে টি২০ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলে ভারত।
আট ম্যাচে বুমরাহ নিয়েছেন ১৫ উইকেট, এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফাইনালে দখল করেছেন ২ উইকেট। অপরাজিত থেকে ভারত ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে।
ডান-হাতি এই পেসার এ বছর টেস্টেও সমানভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৩ টেস্টে নিয়েছেন ৭১ উইকেট। হোম ও এ্যাওয়ে উভয় সিরিজেই ছিলেন সমান উজ্জ্বল। বিশেষ করে চলমান অস্ট্রেলিয়া সফরে দারুন পারফরমেন্স দেখিয়ে চলেছেন।
স্মরণীয় পারফরমেন্স :
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পার্থ টেস্টে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পড়ে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বুমরাহ। সফরকারী ভারত যখন ১৫০ রানে গুটিয়ে যায় ভারতীয় অধিনায়ক অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ উইকেট দখল করে দলকে সহযোগিতা করেছেন। এর ফলে প্রথম ইনিংসে ভারত এগিয়ে ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় মনোনীত হয়েছেন। ভারতও প্রথম ম্যাচ জয় করে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ শুরু করে।
জো রুট (ইংল্যান্ড) :
১৭ টেস্টে ১৫৫৬ রান, গড় ৫৫.৬৭, সর্বোচ্চ রান ২৬২
টেস্ট ব্যাটার হিসেবে নিজেকে দারুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করা জো রুট ২০২৪ সালে নতুন উচ্চতায় আসীন হয়েছেন। ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞ এই ব্যাটার এক ক্যালেন্ডার বছরে ক্যারিয়ারে পঞ্চমবারের মত এক হাজার রানের বেশী সংগ্রহ করেছে।
ইংল্যান্ডের সাবেক এই অধিনায়ক ভারতীয় রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে সমান ৩৬ সেঞ্চুরি করে টেস্টে পঞ্চম সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক হয়েছেন। একইসাথে আইসিসি টেস্ট ব্যাটিং র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করেছেন। তার নামের পাশে এ বছর যোগ হয়েছে ছয়টি সেঞ্চুরি ও পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি।
স্মরণীয় পারফরমেন্স :
মুলতানে পাকিস্তানী বোলিং আক্রমনকে পাত্তা না দিয়ে ষষ্ঠ টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেন। এর মাধ্যমে রিকি পন্টিং ও শচীন টেন্ডুলকারের সমান ২০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ব্রুকের সাথে জুটির কল্যাণে ঘরের বাইওে ইংল্যান্ডের স্মরণীয় এক জয় নিশ্চিত হয়।
ট্রাভিস হেড (অস্ট্রেলিয়া) :
৯ টেস্টে ৬০৮ রান, গড় ৪০.৫৩, সর্বোচ্চ স্কোর ১৫২
১৫টি টি২০তে ৫৩৯ রান, স্ট্রাইক রেট ১৭৮.৪৭
ব্যাট হাতে অস্ট্রেলিয়ার ট্রাম্প কার্ড ও ২০২৩ সালের বিগ ম্যাচ পারফর্মার হিসেবে পরিচিত হেড এ বছরও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে তিনি মিডল অর্ডারে ভিন্ন এক ব্র্যান্ডিং স্থাপন করেছেন। ছোট ফর্মেটেও নিজেকে প্রমান করেছেন। টি২০ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। টেস্ট অঙ্গনে আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা ধরে রাখার মিশনে হেড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
বাঁ-হাতি এই ব্যাটার ভারতের বিপক্ষে চলমান পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে বছর শেষ করতে যাচ্ছেন।
স্মরণীয় পারফরমেন্স :
বর্ডার-গাভাস্কার সিরিজে ১-০তে পিছিয়ে থাকার পর দ্বিতীয় টেস্টে এডিলেডে কাউন্টার এ্যাটাক নক খেলেন হেড। ১৪১ বলে ১৪০ রানে হেড ভারতীয় বোলারদের উপর গোলাপী বলের টেস্টে দাপট দেখিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ১৫৭ রানে এগিয়ে ছিল। ১৭টি চার ও চারটি বাউন্ডারির সহায়তায় হেড যে ইনিংস খেলেছেন তাতে স্বাগতিকরা সমতায় ফিরে। শেষ পর্যন্ত হেডই হয়েছেন ম্যাচ সেরা খেলোয়াড়।