শিরোনাম
ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতে,অতীতের তুলনায় সদ্য শেষ হওয়া বিপিএল অনেক বেশি প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে।
বিপিএলের সাফল্যের কারিগর হিসেবে টিকিট ব্যবস্থা এবং উইকেটকে তুলে ধরেছেন ফাহিম।
আজ বাসসকে ফাহিম বলেন, ‘এবারের টিকিট ব্যবস্থা ছিল সুশৃঙ্খল। অনলাইন টিকিট ব্যবস্থায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বেশিরভাগ টিকিটই সাধারণ মানুষ পাবে- অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা এটা নিশ্চিত করেছে । যা আগেরবারের মতো নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত বিপিএল সবসময়ই জনসাধারণকে আকর্ষণ করে। কিন্তু এবার অবিশ্বাস্য সাড়া ছিলো, যা আমাদের জন্য সত্যিই সন্তুস্টির। প্রতিটি ম্যাচেই স্টেডিয়াম জমজমাট ছিলো। মাঠে প্রচুর দর্শক এসেছিলো এবং নিজ নিজ দলকে সমর্থন করেছে। আপনি যদি ফাইনাল খেলা দেখেন, টিকিটের প্রচুর চাহিদা ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা সেভাবে দিতে পারিনি। কারণ বিক্রির জন্য দেওয়ার সাথেই সাথেই টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।’
টিকিট ব্যবস্থা বিপ্লব ঘটিয়েছে অতীতের মত ঝামেলা ছাড়াই ভালোভাবে টিকিট ক্রয়ের সুযোগ পেয়েছে দর্শকরা। আরেক সাফল্য উইকেট। এবার স্পোর্টিং উইকেট প্রস্তুতের জন্য কিউরেটরদের কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছিল বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। এর ফলে বেশিরভাগই ম্যাচই হাই-স্কোরিং হয়েছে।
ফাহিম জানান, পাওয়ার-হিটিং দক্ষতা বাড়াতে না পারার কারণ হিসেবে প্রায়ই উইকেটকে কাঠগড়ায় তোলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা।
তিনি বলেন, ‘উইকেটকে দোষারোপ করা যে ঠিক ছিল, সেটি প্রমাণ করেছে তারা। এই বিপিএলে আমরা দেখেছি বাংলাদেশি ব্যাটাররা ভালো উইকেট পেলে বড় ছক্কা মারতে পারে। ব্যাটার ও বোলারদের জন্য ভালো উইকেট করার পরামর্শ ছিল। আমরা দেখেছি ব্যাটাররা রান উপভোগ করেছে, হাই-স্কোরিং উইকেটেও বোলাররা তাদের দক্ষতা দেখিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে, আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সে আমি সন্তুষ্ট। তারা নিজেদের সেরাটা দিয়েছে,এই ফরম্যাটের জন্য অপরিহার্য স্ট্রাইক রেট ধরে খেলেছে । সত্যিই খুব ভালো ছিল। আমি এই মুহুর্তে সব খেলোয়াড়ের নাম বলতে পারছি না তবে নাইম শেখ, পারভেজ হোসেন ইমন, তানজিদ হাসান তামিম, ইয়াসির আলী চৌধুরী, ন্রুুল হাসান সোহানের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটার পাওয়ার-হিটিং দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। যা সত্যিই ভাল ছিল।’
বিশেষ করে খেলার প্রতি খেলোয়াড়ের মনোভাব দেখে সন্তুষ্ট ফাহিম। শেষ ওভারে ১৫ বা ২০ রানের প্রয়োজনেওহাল ছাড়েননি তারা।
এই দক্ষতা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন ফাহিম, ‘আমরা দেখেছি, শেষ ওভারে যখন কোন দলের ১৫ বা ২০ রান প্রয়োজন পড়ে, তখন স্থানীয় খেলোয়াড়রা জয় নিয়ে ম্যাচ শেষ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অতীতের বিপিএলে আমরা দেখতাম এই ভূমিকা পালন করতো বিদেশি খেলোয়াগড়রা। প্রতিটি দলই পাওয়ার হিটার হিসেবে বিদেশী খেলোয়াড়দের বেছে নিতো। কিন্তু এই মৌসুমে আমরা দেখেছি, পাওয়ার হিটের জন্য স্থানীয় খেলোয়াড়দের উপর নির্ভর করেছে দলগুলো।’
তিনি বলেন, ‘বিপিএল আয়োজনের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে- টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের গতির সাথে খেলোয়াড়দের অভ্যস্ত করা। যেহেতু এটি ক্রিকেটের একটি সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট, তাই খেলায় অনেক বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত থাকায় খেলোয়াড়রা সেটা বুঝতে সময় পায়নি। তাই বুঝতে হবে কখন আক্রমণ করতে এবং কখন সাবধানী হতে হবে। এই বিপিএলে দেখেছি আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়রা এই ফরম্যাটকে ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করেছে। নিজের মতো করে খেলা শেষ করে আসার দক্ষতা ছিল তাদের। এটা আমাদের বিপিএলের ইতিবাচক দিক।’
এই বিপিএলে আধিপত্য বিস্তার করেছে স্থানীয় খেলোয়াড়রা। বোলিং এবং ব্যাটিং তালিকায় শীর্ষে আছে তারা। এবারের আসরে সর্বোচ্চ ৫১১ রান সংগ্রাহক নাইম শেখ। শীর্ষ দশের মধ্যে স্থানীয় ব্যাটারই ছিলেন নয়জন। যা বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম নজির।
বোলিংয়ে সর্বোচ্চ ২৫ উইকেট নিয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। বিপিএলের ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার। শীর্ষ ১০ বোলারের মধ্যে, মাত্র তিনজন বিদেশী খেলোয়াড় আছেন।
সর্বোচ্চ ৩৬ ছক্কা হাকিয়ে সবার ওপড়ে আছেন ছক্কা মারার ক্ষেত্রে সবার উপরে তানজিদ। বিপিএল ইতিহাসে তার অবস্থান দ্বিতীয়। ৪৭ ছক্কা নিয়ে সবার উপরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। এই মৌসুমের সর্বোচ্চ রানের মালিক নাইমের ব্যাট থেকে এসেছে ৩০টি ছক্কা।
সব মিলিয়ে এবারের আসরে ৭১৫টি ছক্কা হয়েছে। যা বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ছক্কা।
রান-উৎসবের বিপিএলে ইকোনমি রেট সাতের নিচে রাখতে পেরেছেন তাসকিন এবং স্পিনার আলিস আল ইসলাম। আটের নীচে ছিলো হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান মিরাজের ইকোনমি রেট।
ফাহিম বলেন, ‘এটা বোলারদের দক্ষতার প্রমাণ। উইকেট যেমনই হোক না কেন ভালো বোলার যেকোন যেকোন সমীকরণে মেলাতে পারে এবং স্পোর্টিং উইকেট সেই সুযোগ করে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব মিলিয়ে বিপিএল ভালো হয়েছে এবং আমরা যা চেয়েছিলাম ঠিক তেমনই হয়েছে। আশা করি, যা অনিয়ম হয়েছে আমরা ঠিক করতে পারবো এবং ভবিষ্যতে মান বজায় রাখতে পারবো।’