বাসস
  ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:০৩
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:১৩

সাত বছর পর জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্ট হারল বাংলাদেশ

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস) : দীর্ঘ সাত বছর পর জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্ট হারল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন জিম্বাবুয়ের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছে টাইগাররা। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। 

দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৫ রানে অলআউট হয়ে জিম্বাবুয়েকে ১৭৪ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। জবাবে ৭ উইকেটে ১৭৪ রান তুলে জয়ী হয় জিম্বাবুয়ে। ৪ বছর পর টেস্টে জয়ের দেখা পেল জিম্বাবুয়ে। সর্বশেষ ২০২১ সালের মার্চে আবুধাবিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। এরপর চার বছরে ১০ টেস্টের আটটিতে হার ও দু’টিতে ড্র করে জিম্বাবুয়ে।

বৃষ্টির কারণে ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট দেরিতে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু হয়। তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ১৯৪ রান করেছিল বাংলাদেশ। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ১১২ রানে এগিয়ে ছিল টাইগাররা।  

চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় বলে আউট হন ৬০ রান নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। পেসার ব্লেসিং মুজারাবানির বলে পুল করতে গিয়ে ফাইন লেগে ভিক্টর নিয়ুচির হাতে ক্যাচ তুলে দেন টাইগার দলনেতা। ৭টি চারে ১০৫ বলে ৬০ রান করেন তিনি। জাকের আলির সাথে ৩৯ রান যোগ করেন শান্ত। 

নতুন ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে এসেই ১টি করে চার-ছক্কায় ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। মুজারাবানির বলে গালিতে ব্রায়ান বেনেটকে ক্যাচ দেন মিরাজ। 

১৬ বলে ১১ রান করা মিরাজকে শিকার করে ক্যারিয়ারের ১১তম টেস্টে তৃতীয়বারের মত ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেলেন মুজারাবানি। 

এরপর ক্রিজে এসে মাত্র ৩ বল খেলে ১ রানে সাজঘরে ফিরেন তাইজুল ইসলাম। রিচার্ড এনগারাভারের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ তুলে দেন তাইজুল। ২১৩ রানে সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

উইকেট পতন ঠেকিয়ে অষ্টম উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন জাকের ও হাসান মাহমুদ। দলের লিড দেড়শ পার করেন তারা। এসময় ১০৬ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্টে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান জাকের। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম চার টেস্টেই হাফ-সেঞ্চুরি করলেন জাকের। 

দলীয় রান আড়াইশ হবার আগে ভাঙ্গে জাকের-হাসান জুটি। স্পিনার ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন হাসান। ২ চারে ৫৮ বলে ১২ রান করেন তিনি। জাকের-হাসান ৩৫ রান যোগ করেন।

হাসানের বিদায়ে ক্রিজে এসে প্রথম বলেই আউট হন খালেদ আহমেদ। শেষ উইকেটে নাহিদ রানার সাথে ৭ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি জাকের। শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হবার আগে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১১ বলে ৫৮ রান করেন জাকের। ২৫৫ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। চতুর্থ দিন বাকী ৬ উইকেটে ৬১ রান যোগ করে টাইগাররা।

জিম্বাবুয়ের পেসার মুজারাবানি ৭২ রানে ৬ উইকেট নেন। ১১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে এই নিয়ে তৃতীয়বার ইনিংসে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিলেন মুজারাবানি।

জয়ের জন্য ১৭৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দারুণ সূচনা করেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার ব্রায়ান বেনেট ও বেন কারান। ১২৬ বলে ৯৫ রান যোগ করেন তারা। 

২১তম ওভারের শেষ বলে কারানকে শিকার করে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন মিরাজ। ৭টি চারে ৪৪ রান করেন কারান। 

কারানের বিদায়ে ম্যাচে ফেরার পথ পায় বাংলাদেশ। ১৬ রানের ব্যবধানে জিম্বাবুয়ের ৩ উইকেটের শিকার করে টাইগাররা। নিক ওয়েলচকে ১০ রানে তাইজুল, সিন উইলিয়ামসেেক ৯ ও বেনেটকে ৫৪ রানে শিকার করেন মিরাজ। ১২৮ রানে ৪ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। 

কিছুক্ষণ পর জিম্বাবুয়ের চাপ আরও বাড়িয়ে লড়াইয়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগান তাইজুল ও মিরাজ। অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে ১০ রানে তাইজুল এবং নিয়াশা মায়াভারোকে ১ রানে আউট করেন মিরাজ। ১৪৫ রানে জিম্বাবুয়ের ৬ উইকেট পতনে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। 

কিন্তু সপ্তম উইকেটে ওয়েলিংটন মাসাকাদজার সাথে ১৬ ও অষ্টম উইকেটে রিচার্ড এনগারাভাকে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ১৩ রান যোগ করে জিম্বাবুয়েকে দারুন জয় এনে দেন ওয়েসলি মাধভেরে। টেস্ট ক্রিকেটে ১৬২ রানের বেশি তাড়া করে প্রথম কোন টেস্ট জিতল জিম্বাবুয়ে। মাসাকাদজা ১২ রানে আউট হলেও মাধভেরে ৫৫ বলে ১৯ ও এনগারাভা ৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। 

মিরাজ ৫০ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৫২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে ৫২তম টেস্টে ২শ উইকেট পূর্ণ করলেন মিরাজ। দেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে ২শ উইকেট নিলেন তিনি। 

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ১৯১ ও জিম্বাবুয়ে ২৭৩ রান করেছিল। ১৯ টেস্টে মুখোমুখি হয়ে দু’দলের জয় এখন সমান ৮টি করে। 

১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে আগামী ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে জিম্বাবুয়ে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : 

বাংলাদেশ : ১৯১/১০, ৬১ ওভার (মোমিনুল ৫৬, শান্ত ৪০, মাসাকাদজা ৩/২১)।

জিম্বাবুয়ে : ২৭৩/১০, ৮০.২ ওভার (উইলিয়ামস ৫৯, বেনেট ৫৭, মিরাজ ৫/৫২)।

বাংলাদেশ : ২৫৫/১০, ৭৯.২ ওভার (শান্ত ৬০, জাকের ৫৮, মুজারাবানি ৬/৭২)।

জিম্বাবুয়ে : ১৭৪/৭, ৫০.১ ওভার (বেনেট ৫৪, কারান ৪৪, মিরাজ ৫/৫০)।

ফল : জিম্বাবুয়ে ৩ উইকেটে জয়ী।