শিরোনাম
বার্সেলোনা, ২০ মার্চ ২০২৩ (বাসস/এএফপি) : মৌসুমের শেষ এল ক্লাসিকোতে রোববার রিয়াল মাদ্রিদকে ২-১ গোলে পরাজিত করে লা লিগা টেবিলে ১২ পয়েন্টের ব্যবধানে শীর্ষস্থান শক্তিশালী করেছে বার্সেলোনা। ফ্রাংক কেসির শেষ মুহূর্তের গোলে বার্সেলোনা জয় নিশ্চিত হয়।
এই পরাজয়ে রিয়ালের শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন অনেকটাই শেষ হয়ে গেছে। একইসাথে ২০১৯ সালের পর প্রথমারের মত লিগ শিরোপা জয়ের পথ অনেকটাই প্রশস্ত হয়েছে কাতালান জায়ান্টদের।
কার্লো আনচেলত্তির মাদ্রিদ রোনাল্ড আরাউজোর আত্মঘাতি গোলে ক্যাম্প ন্যুতে ৯ মিনিটেই এগিয়ে গিয়েছিল। বিরতির ঠিক আগে সার্জি রবার্তো বার্সাকে সমতায় ফেরান। দুই দলেরই জয়ের সম্ভাবনা ছিল। মার্কো আসেনসিও মাদ্রিদকে আবারো এগিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু অফসাইডর কারনে ভিএআর তা বাতিল করে দেয়। ৯২ মিনিটে আলোহান্দ্রো বাল্ডের এ্যাসিস্টে কেসি বার্সেলোনার জয় নিশ্চিত করেন।
ম্যাচ শেষে সার্জি রবার্তো বলেছেন, ‘মার্কো আসেনসিওর গোলের পর থেকে আমরা ঘুড়ে দাঁড়াই। যদিও আমরা জানতাম না গোলটি অফসাইড ছিল। শেষ মিনিটে জয় পাওয়াটা স্বস্তির ছিল। এই ধরনের ম্যাচে খেলাটা সবসময়ই কঠিন। এখনো হাতে বেশ কিছু ম্যাচ বাকি আছে। বলা যায়না মাদ্রিদও উপরে উঠে আসতে পারে। ১২ পয়েন্ট স্পর্শ করা তাদের পক্ষে সম্ভব। কিন্তু সবকিছুই এখন আমাদের ওপর নির্ভর করছে। নিজেদের ম্যাচের দিকে আমাদের বেশী মনোযোগী হতে হবে।’
মাঠ এবং মাঠের বাইরে এল ক্লাসিকো নিয়ে সবসময়ই উত্তেজনা বিরাজ করে। কালও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। বার্সেলোনার কোচ হিসেবে এটি জাভির ষষ্ঠ ক্লাসিকো ছিল, যদি ক্যাম্প ন্যুতে এটাই তার প্রথম ক্লাসিকোর অভিজ্ঞতা। ম্যাচের শুরুতে জাভি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন পুরো স্টেডিয়ামটিকে প্রেসার কুকার বানিয়ে ফেলতে, বার্সা সমর্থকরা তাই করে দেখিয়েছে। মাদ্রিদ যখনই বল পেয়েছে চিৎকার করে তার বিরোধীতা করেছে। বলা যায় মৌসুমে এ পর্যন্ত সেরা একটি ম্যাচের আবহ কাল তৈরী করেছিল বার্সা ভক্তরা।
মার্চের শুরুতে কোপা ডেল রে’র সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বার্সেলোনার বিরুদ্ধে পরাজয়ের ম্যাচটিতে মাদ্রিদ একটি শটও টার্গেটে করতে পারেনি। কিন্তু কাল প্রথম মিনিটেই মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগানকে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন করিম বেনজেমা। অন্যদিকে থিবো কোর্তোয়াকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেন রবার্ট লিওয়ানদোস্কি। ৯ মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের ক্রসে আরাউজোর ডিফ্লেকটেড বল ধরার সাধ্য ছিলনা টার স্টেগানের। রাইট-ব্যাক পজিশনে ব্রাজিলিয়ান ভিনিকে আটকানোর দায়িত্ব ছিল আরাউজোর। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গারের ক্রসটি ঠিকমত ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন আরাউজো। লা লিগায় এবারের মৌসুমে ক্যাম্প ন্যুতে এই প্রথম বার্সেলোনা পেনাল্টি ছাড়া কোন গোল হজম করলো। সব মিলিয়ে এটি নবম গোল।
১৮ মিনিটে হলুদ কার্ড পাওয়া মাদ্রিদ ডিফেন্ডার নাচোর বিপক্ষে রাফিনহার শট হাতে লাগানোর দায়ে বার্সেলোনা লাল কার্ডের আবেদন করেছিল। কিন্তু স্বাগতিকদের সেই আবেদন আমলে নেয়নি রেফারি রিকার্ডো ডি বারগোস। ইনজুরিতে থাকা মিডফিল্ডার পেড্রির স্থানে মূল দলে খেলতে নামা সার্জি রবার্তো সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে থেকে কোর্তোয়াকে পরাস্ত করলে বিরতির আগেই সমতায় ফিরে বার্সা।
এরপর বার্সেলোনা শেষ পর্যন্ত মাদ্রিদের থেকে অনেক বেশী সুযোগ তৈরী করেছে। যে কারনে বিরতির পর কার্লো আনচেলত্তি দুই তারকা রডরিগো ও ফারলান্ড মেন্ডিকে মাঠে নামাতে বাধ্য হন। মাঠে নেমেই রডরিগোর শট অল্পের জন্য বারের উপর দিয়ে চলে যায়। বদলী খেলোয়াড় আসেননিও মাদ্রিদকে গোলও উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু অফসাইডের কারনে ভিএআর তা বাতিল করে দেয়। ম্যাচটি যখন নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই কেসির গোলে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্প ন্যু।
এই পরাজয়ে মাদ্রিদের শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্য শেষ হয়ে গেল কিনা এমন প্রশ্নের উত্তওের আনচেলত্তি বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে। শেষ পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব ঠিকই। কিন্তু ১২ পয়েন্টের ব্যবধানটা একটু বেশী। এখন বার্সেলোনাকে চার ম্যাচ পরাজিত হতে হবে, বিপরীতে আমাদের সব জিততে হবে। কোন কিছুই অসম্ভব না, কিন্তু পরিস্থিতি খুবই কঠিন।’