বাসস
  ১৩ জুন ২০২৩, ১৭:২২

একমাত্র টেস্টে আফগানিস্তানকে হারাতে আশাবাদী বাংলাদেশ

ঢাকা, ১৩ জুন ২০২৩ (বাসস) : জয়ের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। 
সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও টি স্পোর্টস। এছাড়াও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম Rabbithole app I web এ ম্যাচটি উপভোগ করতে পারবেন ক্রিকেট প্রেমিরা।
নিজেদের সর্বশেষ টেস্টে আয়ারল্যান্ডন্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে জয় পেলে ২০১৮ সালের পর আবারও টানা দুই টেস্ট জয়ের স্বাদ নিবে টাইগাররা। ঘরের মাঠে ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ। 
লক্ষ্য পূরণের কাজটা বাংলাদেশের জন্য সহজই হওয়া উচিত। কারন ইনজুরির কারনে আফগানিস্তানের বোলিং আক্রমনে নেই দলের সেরা স্পিনার রশিদ খান। অনভিজ্ঞদের নিয়ে দল সাজিয়েছে তারা। তারপরও বেশ কিছু প্রতিভাবান স্পিনার নিয়ে প্রস্তুত সফরকারীরা। যারা ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে।
কিন্তু বড় ফরম্যাটের ম্যাচের আবহ একেবারেই ভিন্ন। এছাড়া ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলো আফগানিস্তান। দুই বছর পর আবারও টেস্ট খেলতে নামবে তারা।
সব কিছু বিবেচনায়, টেস্ট জয়ের ক্ষেত্রে ফেভারিট বাংলাদেশ। কিন্তু অতীত টাইগারদের জন্য সুখকর নয়। এই ফরম্যাটে একবারের দেখায় আফগানিস্তানের কাছে ২২৪ রানে বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। বৃষ্টিতে খেলার বেশিরভাগ সময় ভেস্তে গেলেও, রশিদের দুর্দান্ত বোলিয়ে নাটকীয় জয় পায় আফগানিস্তান। ঐ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে টাইগারদের ইনিংস ধসিয়ে দেন রশিদ খান। ঐ ম্যাচটি আফগানিস্তানের ইতিহাসে দ্বিতীয় টেস্ট ছিলো।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের জন্য স্পোর্টিং উইকেট তৈরি করেছে বাংলাদেশ। এমন উইকেটে নিয়মিত খেলে টেস্ট জয়ের সুযোগ তৈরি করতে ও দক্ষতা বাড়াতে চায় তারা। 
টাইগারদের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে জানান গরমের কারণে শেষের দিকে উইকেট খারাপ হলে স্পিনাররা সুবিধা পাবে। তার মতে স্পোর্টিং উইকেট সবাইকে সহায়তা করবে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে যে ধরনের উইকেট ব্যবহার করা হয়েছিলো এটিও একই ধরনের। হাথুরু বলেন, ‘গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে ঘাস সবুজ হয়ে গেছে। আগেও এখানে সবুজ উইকেট দেখেছি আমি। আমরা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও সবুজ উইকেটে খেলেছি। আমাদের পেস বোলার আছে। তাদের এমন একটি কন্ডিশন আমাদের দিতে হবে যা তাদের সামর্থ্যের মধ্যে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভালো স্পিনারও আছে। এই ম্যাচটি সবুজ উইকেটে শুরু হচ্ছে। সবাই জানে এই গরমে এটি খুব দ্রুত খারাপ হবে এবং খেলার শেষদিকে এটি স্পিনারদের সহায়তা করবে। আমি মনে করি ব্যাটার, পেস বোলার এবং স্পিনার সবার জন্য এটি একটি ভালো স্পোর্টিং উইকেট। আমি একটি ভাল লড়াই দেখতে চাই।’
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে যে ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ, সেটিই অব্যাহত রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন প্রধান কোচ। তিনি বলেন, ‘আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগে আমরা যেমন আলোচনা করেছি, ফলাফল যাই হোক না কেন আমরা নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলাম। তবে আমরা বুঝতে চেয়েছিলাম বিভিন্ন কন্ডিশনে আমাদের দক্ষতা কিভাবে পাঁচ দিন স্থায়ী হয়। নির্দিষ্ট উপায়ে খেলাটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিলো।’
সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিবেন ব্যাটার লিটন দাস। তিনি জানান, সবুজ উইকেটে নিজেদের সামর্থ্যের পরীক্ষা করতে চান।
লিটন বলেন, ‘এমন দলের বিপক্ষে সাধারণত এই উইকেটে খেলাটা খুবই স্বাভাবিক। যখন আমরা খেলতাম তখন মিরপুরে উইকেট সবসময় টার্নিং ছিল। আমাদের চ্যালেঞ্জ হবে কিভাবে ঘাসের উইকেটে আরও ভাল খেলা যায় এবং কিভাবে ইনিংস বড় করা যায়।’
সাকিবের অভাব অনুভব করবে বাংলাদেশ। অলরাউন্ডার হবার কারনে অতিরিক্ত বোলার এবং অতিরিক্ত ব্যাটার হিসেবে খেলে দলকে বাড়তি সুবিধা দেন সাকিব। 
ওপেনার তামিম ইকবাল ও পেসার তাসকিন আহমেদের ফিটনেস নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তামিম-তাসকিনকে নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান হাথুরুসিংহে। 
টেস্ট নিয়ে ইতিবাচক আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদি। ২০১৯ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় অনুপ্রাণিত করছে আফগানদের। 
দলের সেরা স্পিনার রশিদ না থাকায় কোন চাপ অনুভব করছেন না শাহিদি। তিনি বলেন, ‘এটি চ্যালেঞ্জিং, আমরা সবাই জানি রশিদ আমাদের দলের অন্যতম প্রধান বোলার। অতীতের টেস্ট ম্যাচগুলোতে খুব ভালো করেছে সে। রিস্ট স্পিনারদের মতো বিকল্প এখন আছে আমাদের এবং আমি বিশ^াস করি তারা ভালো পারফর্ম করবে।’
২০১৮ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাবার পর থেকে ছয় টেস্ট খেলে ৩টিতে জিতেছে আফগানিস্তান। আয়ারল্যান্ড, বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনটি জয়ের স্বাদ পায় আফগানরা। 
অন্যদিকে বাংলাদেশের টেস্ট পরিসংখ্যান হতাশাজনক। এখন পর্যন্ত ১৩৭ টেস্টে ১৭টিতে জিতেছে তারা। হেরেছে ১০২টি, ড্র হয়েছে ১৮টিতে। 
বাংলাদেশ দল : লিটন দাস (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মোমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, এবাদত হোসেন চৌধুরী, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, শাহাদাত হোসেন দিপু ও মুশফিক হাসান।
আফগানিস্তান দল : হাশমতউল্লাহ শাহিদি (অধিনায়ক), রহমত শাহ (সহ-অধিনায়ক), আফসার জাজাই (উইকেটরক্ষক), ইকরাম আলিখিল (উইকেটরক্ষক), ইব্রাহিম জাদরান, আব্দুল মালিক, বাহির শাহ, নাসির জামাল, করিম জানাত, জহির খান, ইজহারুলহক নাভিদ, হামজা হোতাক, ইব্রাহিম আব্দুলরাহিমজাই, ইয়ামিন আহমাদজাই ও নিজাত মাসৌদ।