শিরোনাম
লন্ডন, ৩ জুলাই ২০২৩ (বাসস) : অ্যাশেজে বির্তকিত দ্বিতীয় টেস্টের হারকে দলের সতীর্থরা শক্তিতে পরিণত করবে বলে প্রত্যাশা করছেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস।
গতকাল লর্ডসে ১৫৫ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলেও অস্ট্রেলিয়া কাছে ৪৩ রানের হার থেকে দলকে রক্ষা করতে পারেননি স্টোকস। এই টেস্ট হেরে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়লো ইংল্যান্ড।
অ্যাশেজ টেস্ট অনুসারে ম্যাচের পঞ্চম দিন ছিলো রোমাঞ্চকর। ইংল্যান্ডের জনি বেয়ারস্টোর বিতর্কিত আউট আরও উত্তাপ ছড়িয়েছে।
জয়ের জন্য লর্ডসে রেকর্ড ৩৭১ রানের টার্গেট পেয়েছিলো ইংল্যান্ড। টার্গেট স্পর্শ করার পথেই ছিলো ইংলিশরা। কিন্তু বেয়ারস্টোর বির্তকিত আউটের পর লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ক্যামেরুন গ্রিনের বাউন্সার ছেড়ে দিয়েই উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে যান জনি বেয়ারস্টো। তিনি ভেবেছিলেন, বল ডড হয়ে গেছে। তখনই বল ছুঁড়ে বেয়ারস্টোর স্টাম্প ভাঙ্গেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি। অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের আউটের আবেদনে দ্বিধায় পড়েন অন ফিল্ড আম্পায়াররা। বাধ্য হয়ে থার্ড আম্পায়ারের শরনাপন্ন হন অন ফিল্ড আম্পায়াররা। মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিনে বেয়ারস্টোকে স্টাম্প আউট ঘোষনা করেন থার্ড আম্পায়ার।
ক্রিকেটের নিয়মনুসারে, বেয়ারস্টোর আউটের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। কিন্তু যুক্তি অনুযায়ী এটি ক্রিকেটীয় চেতনার বিপক্ষেই গিয়েছে।
লর্ডস লং রুমের চারপাশে এই নিয়ে বির্তক ছড়িয়েছে। সেখানকার দর্শকরা বলেছে, অসিরা সবসময় প্রতারণার সাথে জড়িত থাকে। দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুন্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের হতাশায় ফেলেন স্টোকস। কিন্তু দারুন ব্যাটিং নৈপুন্যের পরও ইংল্যান্ডকে জয়ের স্বাদ দিতে পারেননি তিনি।
১৪৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে অ্যাশেজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েও মাত্র একটি দল পাঁচ ম্যাচের সিরিজ জিতেছিলো। ১৯৩৬/৩৭ মৌসুমের ব্যাটিং গ্রেট ডন ব্র্যাডম্যানের দুর্দান্ত নৈপুন্যে সিরিজ জিতেছিলো অস্ট্রেলিয়া। ঘরের মাঠে ঐ সিরিজের প্রথম দুই টেস্ট হারের পর ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিলো অসিরা।
৮৬ বছর আগের সেই স্মৃতিকে সতীর্থরা এবারের অ্যাশেজে ফিরিয়ে আনতে পারবে বলে আশা করেন স্টোকস।
তিনি বলেন, ‘গত বছর আমরা পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছি। আমরা এখন ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের কথাই ভাবছি।’
স্টোকস আরও বলেন, ‘হেরে যাওয়া মানে হেরে যাওয়াই। আবেগ সবসময় একই রকম থাকবে কিন্তু আপনি ঘুড়ে দাঁড়াবেন এবং বুঝতে পারবেন আমরা কোথায় আছি, এটা আসলে খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। যে পরিস্থিতির মধ্যে আমরা যেভাবে আমাদের ক্রিকেট খেলছি, এরচেয়ে বেশি নিখুঁত আর হতে পারে না। অ্যাশেজের ট্রফি পুনরুদ্ধার করার জন্য আমাদের বাকী তিনটি ম্যাচ জিততে হবে। আমরা এমন একটি দল যারা নিজেদের সেরাটা দিতে এবং জিততে বদ্ধপরিকর।’
বৃহস্পতিবার থেকে হেডিংলিতে শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় টেস্টে ভক্তরা আরও বেশি তেতে উঠবে বলে মনে করেন স্টোকস। লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার বিতর্কিত জয় লিডসের স্ট্যান্ডকে আরও বেশি তাতিয়ে তুলবে এটি নিশ্চিত।
স্টোকস বলেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছিলাম র্যাম্পিং ও কিছু কথা কাটাকাটি হচ্ছে। আমি লর্ডসে এর আগে কখনও এমনটা শুনিনি। অবস্থা বেশ গরম ছিল, তাই না? লর্ডসে আগে এত গোলমাল না হবার খ্যাতি আছে শুনে ভালো লাগলো।’
২০১৯ সালে হেডিংলিতে অপরাজিত ১৩৫ রানের ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইল্যান্ডকে ১ উইকেটের দুর্দান্ত জয় এনে দিয়েছিলেন স্টোকস। স্টোকস জানান, এটি অনুপ্রেরণা দেয়ার মত ফ্যাক্টর হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা দল হিসেবে হেডিংলিতে খেলতে পছন্দ করি। কিন্তু আমি মনে করি না, যে মাঠে আমরা পরবর্তীতে খেলবো সেটি প্রভাব ফেলবে। আমরা জানি, অ্যাশেজ ফিরে পেতে হলে আমাদের পরের তিন ম্যাচই জিততে হবে।’
বেয়ারস্টোর আউটের ঘটনায় ক্যারি এবং অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন ইংল্যান্ডের পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড। যা স্টাম্পের মাইক্রোফোনে শুনতে পাওয়া যায়। স্টোকস জানান, এসব নিয়ে দু’দলের মধ্যে কোন ঝামেলা থাকবে না।
স্টোকস বলেন, ‘আমি খুব বেশি ক্ষোভ ধরে রাখার মতো নই। এখন আবেগ অনেক বেশি। সিরিজ এগিয়ে যাবার সাথে সাথে অনুভূতিও বদলে যাবে। বিয়ার না খাওয়া এবং ‘ভাল হয়েছে’ এমন বলাটা লজ্জাজনক হবে।’
স্টোকসের মত কামিন্সও মনে করেন, দু’দলের মধ্যে কোন সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, ‘আমি যখন বেনের সাথে কথা বলেছিলাম তখন কোন শত্রুতা ছিল না। আমি মনে করি না, এটি সমাধান করার মতো কিছু আছে। এটি কি কোন পরিবর্তন করতে যাচ্ছে? আমাদের জন্য আমি তা মনে করি না। আমরা দেখবো এটার পরিনতি কি হয়।’
বেয়ারস্টোর বির্তকিত আউটের ঘটনায় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার সুনাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে কামিন্স বলেন, ‘আমি এটি বিশ্বাস করি না, না। ক্রিকেটের চেতনা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক বছরে যেভাবে আমরা এটা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, তা অসাধারণ। আমাদের সত্যিই গর্বিত হওয়া উচিত।’