শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ৫ জুলাই ২০২৩ (বাসস) : ব্যাটারদের ব্যর্থতায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে হার দিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বৃষ্টি আইনে আজ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের কাছে ১৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৪৩ ওভারে ৯ উইকেটে ১৬৯ রান করে স্বাগতিক বাংলাদেশ। হৃদয় সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন। দু’দফা বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকায় ম্যাচটির দৈর্ঘ্য ৪৩ ওভারে নামিয়ে আনা হয়। বৃষ্টি আইনে জয়ের জন্য আফগানিস্তান টার্গেট পায় ৪৩ ওভারে ১৬৪ রান। জবাবে ২১ দশমিক ৪ ওভারে ২ উইকেটে ৮৩ রান করে আফগানরা। এরপর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হলে, বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে এগিয়ে থেকে জয়ের স্বাদ পায় আফগানিস্তান। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল রশিদ-নবিরা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ। লিটন দাসকে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সবুজ উইকেটে সাবধানী শুরু করেন তামিম ও লিটন। প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ১টি বাউন্ডারি মারেন তারা। সপ্তম ওভারের পঞ্চম বলে আফগানিস্তান পেসার ফজলহক ফারুকির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ২টি চারে ২১ বলে ১৩ রান করা তামিম আউট হলে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাশে। । গত বছরের সিরিজেও ফারুকিকে সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তামিমকে।
দলীয় ৩০ রানে তামিম ফেরার পর ক্রিজে লিটনের সঙ্গী হন নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যক্তিগত ১০ রানে আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে জীবন পান শান্ত। ১১তম ওভারে লিটনের ১টি করে চার-ছক্কায় বাংলাদেশের রান ৫০ স্পর্শ করে।
পরের ওভারে মুজিবের শর্ট বলে টাইমিং গড়বড় হলে স্কয়ার লেগে রহমত শাহকে ক্যাচ দেন লিটন। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৫ বলে ২৬ রান করেন তিনি। শান্তর সাথে জুটিতে ২৯ বলে ৩৫ রান করেন লিটন।
লিটন ফেরার পরের ওভারে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ইনফর্ম শান্ত। স্পিনার মোহাম্মদ নবির করা প্রথম ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দেন ১২ রান করা শান্ত। এতে ৭২ রানে ৩ উইকেটে পরিনত হয় বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে সাকিব আল হাসান ও হৃদয় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। ১৬তম ওভারে বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা।
৪৫ মিনিট পর খেলা শুরু হলে সাবধানে খেলতে থাকেন সাকিব-হৃদয়। খেলার শুরুর পর ৪৬ ডেলিভারিতে বলকে সীমানা ছাড়া করতে পারেননি তারা। তবে এসময় বাংলাদেশের রান তিন অংকে পৌঁছায়। এসময় ব্যক্তিগত ১৬ রানে মুজিবের বলে উইকেটরক্ষক রহমানউল্লাহ গুরবাজের হাতে জীবনও পান হৃদয়।
২৩তম ওভারের শেষ বলে পেসার আজমতউল্লাহ ওমরজাইর বলে শর্ট কাভারে নবির দারুন ক্যাচে আউট হন সাকিব। বাউন্ডারিহীন ৩৫ বলের ইনিংসে ১৪ রান করেন সাকিব।
সাকিব ফেরার পর বাংলাদেশের মিডল-অর্ডারে জোড়া আঘাত হানেন স্পিনার রশিদ খান। গুগলিতে মুশফিকুর রহিমকে(১) বোল্ড করেন রশিদ। এরপর দলে ফেরা আফিফ হোসেনকে রিভিউ নিয়ে লেগ বিফোর আউট করেন রশিদ। ৪ রান করেন তিনি।
রশিদের জোড়া আঘাতের পর উইকেট শিকারে মাতেন ফারুকি। গত বছর সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আফিফকে নিয়ে বাংলাদেশকে দারুন জয় এনে দেয়া মেহেদি হাসান মিরাজকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলে দ্রুত বিদায় দেন ফারুকি। রিভিউ নিয়েও উইকেটে টিকতে পারেননি ২৩ বলে ৫ রান করা মিরাজ। ৩৩ ওভারে ১৩৯ রানে সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
৩৫তম ওভারে বৃষ্টিতে দ্বিতীয় দফায় বন্ধ হয় খেলা। ১ ঘন্টা ২০ মিনিট খেলা বন্ধ থাকায় ম্যাচটি ৪৩ ওভারে নির্ধারিত হয়। পরবর্তীতে খেলা শুরু হলে ৩৭তম ওভারে দেড়শ রান পায় বাংলাদেশ। ৩৮তম ওভারে তাসকিন আহমেদকে ৭ রানে লেগ বিফোর আউট করেন মুজিব।
৪১তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ফারুকির বলে আউট হন হৃদয়। ৬৯ বল খেলে ৩টি বাউন্ডারিতে ৫১ রান করে নবম ব্যাটার হিসেবে আউট হন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ৪৩ ওভারে ৯ উইকেটে ১৬৯ রান করে বাংলাদেশ। হাসান মাহমুদ ৮ ও মুস্তাফিজুর রহমান ৩ রানে অপরাজিত থাকেন। আফগানিস্তানের ফারুকি ৩টি, মুজিব-রশিদ ২টি করে উইকেট নেন।
বাংলাদেশ ১৬৯ রান করলেও বৃষ্টি আইনে ৪৩ ওভারে ১৬৪ রানের টার্গেট পায় আফগানিস্তান। জবাব দিতে নেমে দারুন শুরু করেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। ১৪তম ওভারেই দলের রান ৫০ পার করেন তারা। এসময় চার বোলার ব্যবহার করেও আফগানিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গা যায়নি।
অবশেষে দলীয় ৫৪ রানে আফগানদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন সাকিব। বড় শট খেলতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে শান্তকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন গুরবাজ। ৪৫ বলে ২২ রান করেন তিনি।
তিন নম্বরে নামা রহমত শাহকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি পেসার তাসকিন। তার পঞ্চম ওভারে স্লিপে লিটনকে ক্যাচ দিয়ে ৮ রানে থামেন রহমত।
এরপর জাদরান ও অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদি জুটি গড়ার পথে থাকলেও ম্যাচে তৃতীয়বারের মত বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। খেলা বন্ধ হওয়ার সময় আফগানিস্তানের সংগ্রহ ছিল ২১ দশমিক ৪ ওভারে ২ উইকেটে ৮৩ রান। বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে এগিয়ে ছিলো আফগানরা।
শেষ পর্যন্ত খেলা শুরু না হলে বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে জয় পায় আফগানিস্তান। বাংলাদেশের তাসকিন-সাকিব ১টি করে উইকেট নেন।
একই ভেন্যুতে আগামী ৮ জুুলাই অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল ক গুরবাজ ব ফারুকি ১৩
লিটন দাস ক রহমত ব মুজিব ২৬
নাজমুল হোসেন ক সেলিম ব নবি ১২
সাকিব ক নবি ব ওমারজাই ১৫
তাওহিদ হৃদয় ক গুরবাজ ব ফারুকি ৫১
মুশফিকুর রহিম বোল্ড ব রশিদ ১
আফিফ এলবিডব্লু ব রশিদ ৪
মেহেদি হাসান মিরাজ এলবিডব্লু ব ফারুকি ৫
তাসকিন আহমেদ এলবিডব্লু ব মুজিব ৭
হাসান মাহমুদ অপরাজিত ৮
মুস্তাফিজুর রহমান অপরাজিত ৩
অতিরিক্ত (লে বা-১, নো-২, ও-২১) ২৪
মোট (৯ উইকেট, ৪৩ ওভার) ১৬৯
উইকেট পতন : ১/৩০ (তামিম), ২/৬৫ (লিটন), ৩/৭২ (শান্ত), ৪/১০৯ (সাকিব), ৫/১১২ (মুশফিক), ৬/১২৮ (আফিফ), ৭/১৩৯ (মিরাজ), ৮/১৫৩ (তাসকিন), ৯/১৬৪ (হৃদয়)।
আফগানিস্তান বোলিং :
ফারুকি : ৮.৪-১-২৪-৩ (ও-৩, নো-১),
সেলিম : ৪.২-০-৩৬-০ (ও-৫, নো-১),
ওমারজাই : ৬-০-৩৯-১ (ও-১),
মুজিব : ৯-১-২৩-২ (ও-২),
নবি : ৬-০-২৫-১ (ও-১),
রশিদ : ৯-০-২১-২।
আফগানিস্তান ইনিংস :
গুরবাজ ক শান্ত ব সাকিব ২২
জাদরান অপরাজিত ৪১
রহমত ক লিটন ব তাসকিন ৮
শাহিদি অপরাজিত ৯
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-১) ৩
মোট (২ উইকেট, ২১.৪ ওভার) ৮৩
উইকেট পতন : ১/৫৪ (গুরবাজ), ২/৭০ (রহমত)।
বাংলাদেশ বোলিং :
হাসান : ৭-০-৩৬-০,
মুস্তাফিজ : ৪-০-১০-০ (ও-১),
তাসকিন : ৫.৪-০-২৬-১,
সাকিব : ৫-১-৯-১।
ফল : আফগানিস্তান বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল আফগানিস্তান।