শিরোনাম
সাও পাওলো, ৬ জুলাই ২০২৩ (বাসস/এএফপি) : আগামী বছর গ্রীষ্ম মৌসুম থেকে ব্রাজিল জাতীয় দলের নতুন কোচ হিসেবে ডাগ আউটে দেখা যাবে কার্লো আনচেলত্তিকে। ২০০২ সালের পর প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের শিরোপা স্বপ্ন পূরণে এবার আনচেলত্তির উপর আস্থা রাখতে চায় ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ)।
গত বছর কাতার বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে পরাজিত হয়ে ব্রাজিলের বিদায়ে পর জাতীয় দল থেকে সড়ে দাঁড়ান তৎকালীন কোচ তিতে। আগামী বছর কোপা আমেরিকাকে সামনে রেখে আনচেলত্তির আগমনের আগ পর্যন্ত ফার্নান্দো ডিনিজকে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সেলেসাওরা।
পাঁচবারের বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিল দলকে আবারো সাফল্য এনে দিতে আনচেলত্তিকে কেন বেছে নেয়া হলো, তার পিছনে তিনটি কারন দেখা চেষ্টা করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। সেই কারনগুলো এখানে তুলে ধরা হলো :
শান্ত চরিত্র :
শান্ত এবং কঠিন চরিত্রের জন্য পরিচিত আনচেলত্তি ‘কোয়াইট লিডারশিপ’ নামে একটি বই লিখেছেন। তার এই বিশেষ গুন ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাজের চাপের মধ্যেও নিজেকে একজন আদর্শ প্রার্থী হিসেবে প্রমান করেছে।
ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় বেশ কিছু ক্লাব যেমন রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসি, বায়ার্ন মিউনিখ ও পিএসজিতে প্রায় একই ধরনের পরিবেশে তিনি দলকে সাফল্য এনে দিতে সহযোগিতা করেছেন। এই ক্ষমতা তিনি মাঠে থেকেই প্রমান করেছেন।
ব্রাজিলের চির প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা বর্তমানের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আর তাই ২০২৬ সালে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ব্রাজিলের ওপর যে মানসিক চাপ রয়েছে তা অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় বেশী। আনচেলত্তি প্রথম বিদেশী কোচ হিসেবে বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে পরিচালনা করতে যাচ্ছেন। ভক্ত এবং গণমাধ্যমের ভারী যাচাই বাছাই সত্বেও অপ্রতিরোধ্য আনচেলত্তির উপরই ভরসা রাখতে যাচ্ছে ব্রাজিল।
ফেব্রুয়ারিতে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী জিকো বলেছিলেন, ‘আনচেলত্তি এই মুহূর্তে আদর্শ হতে পারেন। কারন প্রতিপক্ষ দলগুলোও তাকে শ্রদ্ধা করে। সে ফুটবল সম্পর্কে জানে। কৌশলের চেয়েও খেলোয়াড়রা যে বেশী গুরুত্বপূর্ণ তা একমাত্র আনচেলত্তি উপলব্ধি করতে পেরেছেন।’
শক্তিশালী সম্পর্ক :
২০২৬ সালের বিশ্বকাপে নেইমারের বয়স হবে ৩৪ বছর। সে কারনে আগামী বিশ্বকাপে নেইমার ও তার প্রজন্মের অনেকেরই হয়তোবা না খেলার একটি জোড়ালো সম্ভাবনা তৈরী হবে। পিএসজির এই ফরোয়ার্ড কাতার বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার কাছে পরাজয়ের পর আন্তর্জাতিক অবসরের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। সে কারনে তার পরিবর্তে ব্রাজিলের মূল খেলোয়াড় হিসেবে ঐ সময় দেখা যেতে পারে তরুন ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে। রিয়াল মাদ্রিদে আনচেলত্তির অধীনে যে নিজেকে পরিনত করে তুলেছে। ইতালিয়ান আনচেলত্তি ২২ বছর বয়সী ভিনিকে সবদিক থেকে সহযোগিতা করেছেন। নিজেকে ধারাবাহিকতায় ফিরিয়ে এনে ভিনি এখন স্প্যানিশ লিগে অন্যতম বড় তারকা।
ভিনিসিয়াস ছাড়াও মাদ্রিদের আরেক খেলোয়াড় রডরিগোও আনচেলত্তির ছায়ায় নিজেকে আরো উন্নত করে তুলেছেন। তাদের সাথে আরো আছেন এডার মিলিটাও।
মার্চে রডরিগো বলেছিলেন, ‘আনচেলত্তিকে বলেছি আমরা তার জন্য অপেক্ষায় আছি।’
এদিকে ম্যানচেস্টার সিটি গোলরক্ষক এডারসনও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় করার পর বলেছিলেন যত দ্রুত সম্ভব তিনি আনচেলত্তিকে ব্রাজিলে দেখতে চান।
ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ :
একমাত্র কোচ হিসেবে আনচেলত্তি ইউরোপপে সবগুলো বড় লিগে শিরোপা জেতার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এখন আন্তর্জাতিক ফুটবলে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পথ খুঁজছেন। বর্ণাঢ্য কোচিং ক্যারিয়ারে এখন বিশ্বকাপের শিরোপা জয় বাকি রয়েছে।
এসি মিলানের খেলোয়াড় হিসেবে দুইবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয় করেছেন আনচেলত্তি। কোচ হিসেবে এই ক্লাব ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দুটি করে শিরোপা জিতেছেন। চারবারের এই শিরোপা তাকে অন্য যেকোন কোচের তুলনায় এগিয়ে রেখেছে। ২০১৯ সালে যখন এভারটনের দায়িত্ব নেন তখন মনে করা হয়েছিল ৬৪ বছর বয়সী এই কোচ হয়তোবা তার এলিট মর্যাদাটি হারিয়ে ফেলছেন। কিন্তু ২০২১ সালে আবারো বিস্ময়করভাবে মাদ্রিদে যোগ দিয়ে নিজেকে সাফল্যের ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এখন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর অধ্যায় শেষ করে ব্রাজিলের দায়িত্ব নিয়ে ব্যক্তিগত সাফল্যের মুকুটে আরো একটি পালক যোগ করার অপেক্ষায় রয়েছে ক্লাব ফুটবলের অন্যতম সফল এই কোচ।