শিরোনাম
ঢাকা, ৬ জুলাই ২০২৩ (বাসস) : আজ ১৬ বছরের বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা তামিম ইকবাল। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তামিম। এরপর একই বছরের সেপ্টেম্বরে নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অভিষেক হয় তার। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ডুনেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নামেন তামিম।
এরপর দেশের হয়ে ৭০ টেস্টে ১০টি সেঞ্চুরি ও ৩১টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৫১৩৪ রান করেন তামিম। যা টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তামিমের। ১৪টি সেঞ্চুরি ও ৫৬টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ২৪১ ওয়ানডেতে ৮৩১৩ রান করেন তিনি। যা বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান। ৭৮টি টি-টোয়েন্টিতে ১টি সেঞ্চুরি ও ৭টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৭৫৮ রান করেছেন তামিম। বাংলাদেশের পক্ষে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ রান। অধিনায়ক হিসেবে ১টি টেস্ট, ৩৭টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তামিম। তার অধীনে একমাত্র টেস্টে হার এবং ওয়ানডেতে ২১টিতে জয়, ১৪টিতে হার ও ২টি পরিত্যক্ত হয়।
এমন পরিসংখ্যান নিয়ে ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন তামিম। বিদায় বেলায় কান্না জড়িত কন্ঠে সংবাদমাধ্যমকে তামিম বলেন, ‘বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য ক্রিকেট খেলেছি আমি। এই ১৬ বছরে আন্তজার্তিক ক্রিকেটে তাকে গর্বিত করতে পেরেছি কি না, আমি নিশ্চিত নই।’
অবসর ঘোষনাকালে তামিম আরও বলেন, ‘সাধারণত এরকম পরিস্থিতিতে বক্তব্য লিখে আনে মানুষজন। আমি আসলে ওরকমভাবে ওতটা প্রস্তুত নই। সারা জীবনই যখনই কোথাও আমি বক্তব্য দিয়েছি বা কিছু বলি কোন কিছু লিখে নিয়ে যাই না।’
‘আমি খুব বেশি বড় করবো না। ছোট রাখার চেষ্টা করবো। গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিই আমার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এই মুহূর্তেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি।’
‘এটার পেছনে হঠাৎ করে কোন সিদ্ধান্ত ছিল না। এটা নিয়ে ভাবছিলাম আমি। এটার ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে। যেটা আমার মনে হয় না এখানে বলার দরকার আছে। এমন না যে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা নিয়ে আমি বেশ কয়েক দিন ধরে কথা বলছিলাম। এমনকি পরিবারের সাথেও কথা বলছি। আমার মনে হয়, সরে দাঁড়ানো ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের এটাই উপযুক্ত সময়।’
‘আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে হবে, আমার মনে হয় এটা আপনাদের প্রাপ্য। আমি সবসময় একটা কথা বলেছি, আমি ক্রিকেট খেলেছি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। আমি নিশ্চিত নই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই ১৬ বছর আমি তাকে গর্বিত করতে পেরেছি কি না।’
‘আরও অনেককে ধন্যবাদ জানাতে হবে আমার। সবচেয়ে ছোট চাচা যিনি ইন্তেকাল করেছেন, তার নাম আকবর খান। তার হাত ধরেই আমার প্রথম ক্রিকেট বলে টুর্নামেন্ট খেলা। তার পরিবারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে তপন দা নামে একজন কোচ আছেন, যার কাছে আমি ছোট বেলা থেকে অনুশীলন করেছি। তাকে ধন্যবাদ জানাই।’
‘সব খেলোয়াড়, যাদের সাথে আমি অনূর্ধ্ব-১৩, ১৫, ১৭, ১৮, ১৯ প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ, জাতীয় দল, সব জায়গায় যাদের সঙ্গে খেলেছি, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে, জাতীয় দলে যারা সতীর্থ ছিল তাদেরকে। ক্রিকেট বোর্ড অবশ্যই, যারা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে এত লম্বা সময় ধরে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার, নেতৃত্বও দিয়েছি, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’
‘আমার আসলে বেশি কিছু বলার নেই। আমি চেষ্টা করেছি, সত্যিই নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি। হয়তো আমি যথেষ্ট ভালো ছিলাম না, জানি না। তবে যখনই মাঠে নেমেছি নিজের শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করেছি।’
‘আরও অনেক কিছু আছে, আসলে অনেক কিছু বলতে চাই। তবে আপনারা যেমন দেখছেন, কথা বলতে পারছি না। আশা করি, আপনারা এই পরিস্থিতিকে সম্মান করবেন। কথা বলার জন্য পরিস্থিতিটা সহজ নয়। বিশেষ করে, এত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর যখন ছেড়ে দিচ্ছি কাজটা সহজ নয়। আশা করি, আপনারা বুঝবেন। আমি দুঃখিত, এত শর্ট নোটিশে আপনাদেরকে ডাকা হয়েছে। সব সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানাই।’
‘একটি ব্যাপার আমি অনুরোধ করবো, যারা সামনে ক্রিকেট খেলবে তাদের ব্যাপারে আপনারা ভালো লিখবেন খারাপ লিখবেন কিন্তু তা যেন ক্রিকেটেই থাকে। ক্রিকেটের সীমানার বাইরে যাবেন না। কেউ ভালো খেললে ভালো বলবেন খারাপ করলে সমালোচনা করবেন। কিন্তু আশা করি আপনারা বুঝতে পারবেন কখনও কখনও আমরা সীমা ছাড়িয়ে যাই। আমি তাই অনুরোধ করবো যারা ক্রিকেট খেলছে এখন বিশ্বকাপের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বছর। আশা করি আপনারা দলের সাথে থাকবেন দলের সদস্যের মতো হয়েই। এটা অনুরোধ করবো, দলের পাশে থাকুন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
‘আমার দিক থেকে আবারও একটি কথা বলছি, নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, সবটুকু দিয়েছি। আবারও একটি কথা পুনরাবৃত্তি করি, আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। জানি না কতটা পেরেছি তবে, চেষ্টা করেছি নিজের সেরাটা দিয়ে।’
‘যাদের ধন্যবাদ জানানো উচিত, এমন কেউ বাদ পড়লে দুঃখিত। ক্রিকেটার ও মানুষ হিসেবে আমাকে গড়ে তুলতে যারাই সহায়তা করেছেন, সবাইকে হৃদয়ের গভীর থেকে ধন্যবাদ জানাই। আমার মা’র কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, আমার ভাই, স্ত্রী, আমার দুই সন্তান আমার এই পথচলায় তাদেরকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। পাশাপাশি তারা মনে রাখার মতোও অনেক কিছু পেয়েছে। তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’
‘এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই। এটাই অনুরোধ করবো, আমার টপিক এখানেই শেষ করে দিন। অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য। এটাকে নিয়ে আর বেশি গুতোগুতি করবেন না। কেন বা কি, কি হতে পারতো, না হতে পারতো। এটার সমাপ্তি টেনে দিন। সবসময়ই বলেছি, যে কোন ব্যক্তির চেয়ে দল সবসময়ই বড়। দলের দিকে মনোযোগ দিন। এই সিরিজে আরও দু’টি ম্যাচ আছে, সিরিজ আমাদের জেতা উচিত বলেই বিশ্বাস আমার। এরপর বড় দু’টি ট্রফি আছে।’
‘সবাইকে আবার ধন্যবাদ জানাই। আর কিছু বলার নেই। আশা করি অন্য কোথাও আপনাদের সাথে দেখা হবে। ধন্যবাদ।’