শিরোনাম
দ্য ওভাল, ২৬ জুলাই ২০২৩ (বাসস/এএফপি) : সর্বশেষ ২০০১ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ সিরিজ জিতেছিলো অস্ট্রেলিয়া। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে ইংলিশ মাটিতে সিরিজ জিততে না পারার বন্ধ্যাত্ব এবার ঘোচানোর সুযোগ পেয়েছে অসিরা। আগামীকাল থেকে ওভালে শুরু হতে যাওয়া পঞ্চম ও শেষ টেস্টে ড্র বা জয় পেলেই দীর্ঘ ২২ বছর পর ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জয়ের স্বাদ পাবে অস্ট্রেলিয়া। অন্য দিকে সিরিজ হার এড়াতে এ ম্যাচে জয় ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই ইংল্যান্ডের। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় শুরু হবে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট।
বার্মিংহামের এজবাস্টনে সিরিজের প্রথম টেস্টে ২ উইকেটের রোমঞ্চকর জয় দিয়ে এবারের অ্যাশেজ শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৪৩ রানে হারিয়ে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় অসিরা।
সিরিজ জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখতে বাকী তিন টেস্টে জয় ছাড়া কোন উপায় নেই এমন সমীকরণ মাথায় নিয়ে লিডসে তৃতীয় টেস্টে ৩ উইকেটে দারুন জয়ে সিরিজে ব্যবধান ২-১এ নামিয়ে আনে ইংলিশরা।
তৃতীয় টেস্ট জয়ের আত্মবিশ^াসী হয়ে উঠে ইংল্যান্ড। ম্যানচেষ্টারে চতুর্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার উপর প্রথান্য বিস্তার করে খেলে ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৩১৭ রানের জবাবে ‘বাজবল’ স্টাইলে রানের পাহাড় গড়ে ইংল্যান্ড। জ্যাক ক্রলির ১৮২ বলে ১৮৯ এবং জনি বেয়ারস্টোর অপরাজিত ৯৯ রানের সুবাদে ৫৯২ রান করে ইংলিশরা।
২৭৫ রানে পিছিয়ে থেকে চতুর্থ দিন শেষে ৫ উইকেটে ২১৪ রান করে অস্ট্রেলিয়া। তখনও ৬১ রানে পিছিয়ে ছিলো অসিরা। বৃষ্টির কারনে ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিন ভেস্তে গেলে টেস্টটি ড্র হয়। সিরিজ জয়ের আশা সেখানেই শেষ হয়ে যায় ইংল্যান্ডের।
ম্যানচেষ্টারে ড্র’তে অ্যাশেজ সিরিজ নিজেদের দখলেই রাখা নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া। কারন ২০২১-২২ মৌসুমে সর্বশেষ অ্যাশেজ সিরিজ জিতেছিলো অসিরাই।
২০১৯ সালের মত একই চিত্র এবারের অ্যাশেজে। সেবারও প্রথম চার টেস্ট শেষে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ছিলো অস্ট্রেলিয়া। ওভালে ছিলো সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট। ওভালের ঐ টেস্ট ১৩৫ রানের ব্যবধানে সিরিজ ড্র করে ইংল্যান্ড।
ঐ সিরিজে খেলা অনেকেই এবারের অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়া দলে রয়েছে। ২২ বছর ধরে ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জিততে না পারার অবসান ঘটাতে বদ্ধপরিকর এই দলটি।
ওভাল টেস্টের আগে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটার ট্রাভিস হেড বলেন, ‘আমরা এখানে অ্যাশেজ সিরিজ জিততে এসেছি এবং এটি করতেআমরা অনেক বড় পথ অতিক্রম করছি।’
শেষ টেস্টে স্পিনার টড মারফিকে দলে ফেরাতে পারে অস্ট্রেলিয়ার। লিডসে খেললেও, ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্ট থেকে বাদ পড়েন তিনি।
দুই মাসেরও কম সময় আগে ওভালের ভেন্যুতেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিলো অস্ট্রেলিয়া। দলের জয়ে অবদান রাখে ইনজুরির কারনে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টের পর ইনজুরিতে মাঠের বাইরে ছিটকে পড়েন অভিজ্ঞ স্পিনার নাথান লিঁও। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
চার বছর পর টেস্ট দলে ফিরে হেডিংলিতে তৃতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকান মিচেল মার্শ। তার সেঞ্চুরির পরও ঐ ম্যাচে জয় পেয়েছিলো ইংল্যান্ড। শেষে টেস্টের আগে মার্শ মাংস পেশিতে ব্যাথা ও পেসার মিচেল স্টার্ক কাঁধের চোটে ভুগছেন। এতে, সিরিজে প্রথমবারের মত খেলার সুযোগ পেতে পারেন ইংলিশ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে গ্লামারগনের হয়ে ছন্দে থাকা মাইকেল নেসার।
এদিকে বিশ^ ক্রিকেটের অভিজ্ঞ পেসার জেমস এন্ডারসনের ফর্ম নিয়ে চিন্তিত ইংল্যান্ড। ৭৬ দশমিক ৭৫ গড়ে এ পর্যন্ত মাত্র ৪ উইকেট নিয়েছেন এন্ডারসন । টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬৮৯ উইকেট শিকারী এন্ডারসনকে নিয়ে সিদ্বান্ত নিতে হবে ইংলিশদের। টেস্টে সর্বোচ্চ ৮০০ শিকার নিয়ে সবার উপরে স্পিনার শ্রীলংকার মুত্তিয়া মুরালিধরন। ৭০৮ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন প্রয়াত স্পিনার অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন।
এন্ডারসনের খেলা হুমকির মুখে পড়ায় ইংল্যান্ডের পেস আক্রমনে স্টুয়ার্ট ব্রড, ক্রিস ওকস ও মার্ক উডের সঙ্গী হবার অপেক্ষায় আছেন সুস্থ হয়ে উঠা ওলি রবিনসন ও জশ টাং। এবারের অ্যাশেজে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়ে শীর্ষে আছেন ব্রড।
আগের টেস্টের একাদশে কোন পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ইংল্যান্ডের ব্যাটার হ্যারি ব্রুক। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা এই সপ্তাহে জিততে পারি তাহলে এটি হবে নৈতিকতার জয়।’
গত বছর কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম-অধিনায়ক বেন স্টোকস জুটি গড়ার পর আক্রমনাত্মক ‘বাজবল’ স্টাইলে ১৭ টেস্টের মধ্যে ১২টিতে জয়, ৪টি হার ও ১টিতে ড্র করে ইংল্যান্ড। তার আগে জো রুটের অধীনে ১৭ টেন্টে মাত্র ১টিতে জিতেছিলো ইংলিশরা।
সিরিজের শুরু থেকে সাহসী মনোভাব দেখিয়ে চলেছেন স্টোকস। এজবাস্টনে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনই ৪শ রান হবার আগেই ইনিংস ঘোষণা করেন তিনি। ঐ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলো ইংল্যান্ডের বাজবল-তত্ত্ব। কিন্তু ওল্ড ট্রাফোর্ডে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকা সত্বেও ইনিংস ঘোষনা করেননি তিনি।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে ড্র’র পর খুব বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন না স্টোকস। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘অ্যাশেজ জয়ী অধিনায়ক হতে আমি যতটা পছন্দ করি, তার চেয়ে বড় হলো আমি চাই এটি একটি উত্তরাধিকারী দল হোক। সিরিজ যেভাবেই শেষ হোক না কেন, আমাদের নিয়ে মানুষ সবসময় কথা বলবে।’
ইংল্যান্ড দল : বেন স্টোকস (অধিনায়ক), বেন ডাকেট, জ্যাক ক্রলি, মঈন আলি, জো রুট, হ্যারি ব্রুক, জনি বেয়ারস্টো (উইকেটরক্ষক), ক্রিস ওকস, মার্ক উড, স্টুয়ার্ট ব্রড, ড্যান লরেন্স, ওলি রবিনসন, জশ টাং ও জেমস এন্ডারসন।
অস্ট্রেলিয়া দল : প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), স্কট বোল্যান্ড, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটরক্ষক), ক্যামেরন গ্রিন, মার্কাস হ্যারিস, জশ হ্যাজেলউড, ট্র্যাভিস হেড, জশ ইংলিশ, উসমান খাজা, মার্নাস লাবুশেন, টড মারফি, মাইকেল নেসার, ম্যাথিউ রেনশ, স্টিভ স্মিথ, মিচেল স্টার্ক ও ডেভিড ওয়ার্নার।