বাসস
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৩৪

প্রতি ক্ষণে মনে হয়, ফরহাদ বাড়ি এসে ‘বাবা’ বলে ডাক দেবে : চট্টগ্রামে শহীদ ফরহাদের পিতা

চট্টগ্রাম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ (বাসস) : ‘আমার এখনো বিশ্বাস হয় না ফরহাদ নেই। প্রতি ক্ষণে মনে হয়, সে ছাত্রবাসে না হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। যে কোন সময় বাড়ি ফিরে আমাকে বাবা বলে ডাক দেবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেনের পিতা গোলাম মোস্তফা কাঁদতে কাঁদতে সন্তান হারানোর কষ্ট এভাবেই ব্যক্ত করেন।
ফরহাদ হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের (২১-২২) সেশনের  ছাত্র ছিলেন। নগরীর একটি মেসে থেকে লেখাপড়া করতেন। কোটা সংস্কার দাবিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচিতে শুরু থেকেই নিয়মিত অংশ নিতেন। আন্দোলন যখন তুঙ্গে, ৪ আগস্ট বিকালে ছাত্র-জনতার একটি মিছিলের সাথে চট্টগ্রাম ওয়াসা এলাকায় অবস্থান করেছিলেন। হঠাৎ মিছিলের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা শুরু হয়। এ সময় মাথার পিছনে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন ফরহাদ। 
ফরহাদের সহপাঠী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র তৈাফিক বলেন, ফরহাদ ছিল অসাধারণ মেধাবী। সে ছিল একটু শান্ত ও চুপচাপ স্বভাবের। পরীক্ষায় সবসময় ভাল রেজাল্ট করতো। তার বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলায়। 
ছেলে বিস্তারিত  জানতে ফোন করা হলে বাবা গোলাম মোস্তফা বাসস’কে বলেন, ‘আমার দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে ফরহাদ ছিল তৃতীয়। তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সে একজন মানবিক মানুষ হবে। স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে তার পরিবারের, হাল ধরবে সংসারের। কিন্তু তার সে স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে যায় ঘাতক পুলিশের একটি বুলেটে।’ 
তিনি বলেন, ‘আমি একজন কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হলেও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর ব্যাপারে আমি খুব আন্তরিক ছিলাম। বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।’ 
ফরহাদের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাউন্টিং বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।
ভাই-এর স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, ফরহাদের ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে একজন বড় অফিসার হবে। আমার ভাই বলতো, লেখাপড়া শেষ হলে চাকুরি করে আমাদের সংসারের সব দুঃখ-দুর্দশা দূর করবে। কিন্তু সে স্বপ্নগুলো পুলিশের একটি বুলেটে নিমিষেই ধূলোয়  মিলিয়ে গেল। 
তবে ফরহাদের  আত্মত্যাগ এবং সাহসিকতার জন্য গর্ববোধ করেন বাবা গোলাম মোস্তফা ও ভাই আনোয়ার হোসেন। পরিবারের একজনকে হারানো অনেক বেশি কষ্টের হলেও ফরহাদের জন্য তারা গর্বিত। ফরহাদের মৃত্যুর জন্য তারা স্বৈরচারী সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা এবং ছাত্রদের লক্ষ্য করে টার্গেট কিলিংকে দায়ী করেন। 
তাদের প্রত্যাশা , এই আন্দোলনে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন এবং যাদের ত্যাগ ও জীবনের বিনিময়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন নিশ্চিত হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেন তাদের পরিবারের প্রতি সদয় দৃষ্টি রাখে। যাদের ত্যাগ এবং আত্মদানের বিনিময়ে আজকের এই নতুন বাংলাদেশ, সেটি যেন বৈষম্যহীন হয়, সকলের সুষম অধিকার বাস্তবায়িত হয়।  
একইসাথে তারা নির্বিচারে গণহত্যা চালাননোর খলনায়কদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ বিচার দাবি করেন, যাতে কেউ আর এমন জঘণ্য হত্যাকাণ্ডের ঔদ্ধত্য না দেখায়।
উল্লেখ্য, ৪ আগস্ট চট্টগ্রামে নিহত হওয়ার পর  ওই রাতেই ফরহাদের  মরদেহ গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলায় নেয়া হয়। সেখানেই ৫ আগস্ট সকাল ১১ টায় তার দাফন হয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাজারো ছাত্র-জনতার ঘাতক শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।