শিরোনাম
॥ দেলোয়ার হোসেন ॥
মাগুরা, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সোহানের বাবা-মা পুত্র হত্যার বিচার দাবি করেছেন। জেলার শ্রীপুর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের চন্ডীখালি গ্রামের শাহ সেকেন্দারের ছেলে মোঃ সোহান শাহ (২৬) আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার রামপুরায় গুলিবিদ্ধ হন। পরে গত ২৭ আগস্ট সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
সোহানের বাবা শাহ সেকেন্দার ও মা সুফিয়া বেগম পুত্র হত্যার বিচার চেয়ে বলেন, “ছেলেকে তো আর ফিরে পাবো না। তবে মৃত্যুর আগে এই হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার দেখে যেতে চাই।”
সোহানের ছোট মামা মিজানুর রহমান বাসসকে বলেন, ঘটনার দিন ১৯ জুলাই শুক্রবার দুপুরে আমার রামপুরার অফিসে এসেছিল সোহান। আমার বড় ভাই ফোন দিয়ে বলেন ঢাকার অবস্থা ভালো না। অফিসের তোমরা সবাই অফিস থেকে চলে যাও। সোহান আমার অফিস থেকে নেমে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলি বুকের বাম পাশ দিয়ে ঢুকে রক্তনালী ও হাটের্র মধ্যে আটকে গিয়েছিল । গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সোহান বন্ধুদের সহায়তায় ঢাকা মেডিকেলে যায়। সেখানে ভর্তি হতে না পেরে আমাদেরকে ফোন দেয়। এরপর আমরা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকে চেষ্টা করে তাকে ভর্তি করাতে পারিনি। সর্বশেষ পরদিন ভোর ছয়টার দিকে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইডিসিএইচ) এ ভর্তি করা হয়। এরপর সেখানে দীর্ঘ ১৯ দিন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরে আসে। পুনরায় ব্যথা শুরু হলে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার চেষ্টা চলছিলো। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি সেনাবাহিনী পরিচালিত সিএমএইচ-এ অপারেশন করা সম্ভব। ২৩ আগস্ট অপারেশনের জন্য সোহানকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। সেখানে অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর প্রায় ১৮ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। কিন্ত অনেক চেষ্টার পরও সোহানকে বাঁচানো যায়নি। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ আগস্ট সন্ধ্যা ৭ টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন
সোহানের স্ত্রী শম্পা বলেন, “অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে ওযু করে দরুদ শরীফ পড়ে সোহান। এরপর আমার মাথায় হাত রেখে বলে, ‘তুমি কান্না করো না আমি ফিরে আসবো।’ সেই মাথায় হাত বুলানোই ছিল শেষ সান্তনা। এরপর সোহান ফিরে এসেছে প্রাণহীন নিথর দেহ নিয়ে। এখন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দেয়ার মানুষটিও আর থাকলো না”- আকুল কান্নায় ভেঙে পড়েন সোহানের স্ত্রী।
সোহানের ঘনিষ্ঠজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাবার দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই মামার বাড়ি শ্রীপুর সদরেই বড় হয়েছে সোহান। ঢাকার রামপুরার হাজি পাড়ায় ভারগো গার্মেন্টস কোম্পানির এক্সিকিউটিভ মেইনটেইন ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সেখানে একটি ব্যাচেলর বাসায় ভাড়া থাকতেন। ঘটনার দিন তার মামার রামপুরার অফিস থেকে ফেরার সময় গুলিবিদ্ধ হন।
এদিকে সোহানের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ। পরদিন ২৮ আগস্ট সকাল ১১টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথম জানাজা শেষে তার লাশ শ্রীপুরে মামার বাড়িতে নেয়া হয়। সেদিনই বিকাল ৫টায় শ্রীপুর সদরের পূর্বপাড়া ঈদগাহ ময়দানে দুই দফা জানাযা নামাজ শেষে শ্রীপুর পূর্বপাড়া সম্মিলিত কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।