বাসস
  ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:২১

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম লতিফ অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন হাসপাতালে

ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার পতনের পর একটি আনন্দ মিছিলে যোগ দেয়ায় লক্ষ্মীপুর জেলার বাসিন্দা দোকানদার আব্দুল লতিফ (৪৮)কে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। 
চিকিৎসকরা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কবে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবেন। তাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম লতিফ এখন তার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর গত ৬ আগস্ট বিকেল সাড়ে তিনটা-চারটার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর রমিজ ইউনিয়নের ভূঁইয়া হাটে আনন্দ মিছিলে যোগ দেন। সে কারণে ছাত্রলীগ-যুবলীগের লোকজন মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ওপর হামলা চালায়। লতিফ এ হামলার শিকার হন। 
তিনি মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একদল লোক তার ওপর বর্বর হামলা চালায়। কুপিয়ে গুরুতর আহত করে তাকে।
কিছু বোঝার আগেই নিরীহ লতিফ নিষ্ঠুর আক্রমণের শিকার হন। তারা তাকে ছুরি, লাঠি ও রড দিয়ে কুপিয়ে পেটে মারাত্মক জখম করে।
উপর্যুপরি আঘাতের কারণে তার পেটের ভেতরের অন্ত্র বেরিয়ে আসে। খবর পেয়ে লতিফের স্বজনরা তড়িগড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তার ক্ষতস্থান কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখেন। যাতে তার শরীর থেকে পেটের ভেতরের অন্ত্র পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে না পারে।
রক্তাক্ত লতিফকে পরবর্তীতে নিকটস্থ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তার ক্ষত দেখে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠান। 
ওই দিনে রাত ১১টায় তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লতিফের স্ত্রী বিবি আছিয়া জানান, হাসপাতালে আনার পর রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৫টা (৭ আগস্ট) পর্যন্ত অপারেশন হয় লতিফের।
তাকে একদিনের জন্য পোস্ট অপারেটিভ রুমে রাখা হয়। এর পর তাকে হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয় বলে জানান তিনি।
স্বামীর কষ্টের কথা বলতে বলতে অশ্রুসিক্ত চোখে বিবি আছিয়া চোখে-মুখে হতাশা নিয়ে বলেন, আমার স্বামীর আয় দিয়ে সংসার চলত। এখন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমরা কীভাবে বাঁচব?’
স্ত্রী, ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে লতিফের পরিবার। তার ছেলে একাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং বড় মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। দুই মেয়ের মধ্যে একজন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। আর আরেকজনের বয়স মাত্র তিন বছর।
লতিফ এখনো ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না। কবে পুরোপুরি সুস্থ হবেন তা নিশ্চিত নয়। বিকল্প আয়ের উৎস না থাকায় চরম কষ্টে দিন কাটছে পরিবারটির।
লতিফের স্ত্রী বলেন, আমরা বর্তমানে আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে কোনো রকমে চলছি। এদিকে এবারের ভয়াবহ বন্যার পানিতে আমাদের লক্ষ্মীপুরের বাড়িও তলিয়ে গেছে।
লতিফের স্ত্রী আছিয়া বর্তমান আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের পথে না গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আন্দোলন ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করায়। 
আন্দোলন দমাতে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। গুলির সামনে বুক চিতিয়ে দিয়ে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন তিনি। তার এই আত্মদান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। ওইদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো পাঁচজন শহিদ হন।
আন্দোলন পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার এক দফা আন্দোলনে পরিণত হয়। দেশব্যাপী আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ক্যাডার ও সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। জনরোষে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ কয়েক হাজার মানুষ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ছাত্র, গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ ও সাধারণ মানুষের ‘রেড মুভমেন্ট’ ও ‘বাংলা বসস্ত’- এর মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এর কিছুদিন পর সর্বশেষ সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। পরে ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের অন্তর্র্বর্তী সরকার শপথ নেয়।