বাসস
  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:৪৭

শহিদ মুত্তাকিমের মায়ের আকুতি:ছেলেকে ছাড়া কি নিয়ে বাঁচবো

মাগুরা, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস):মৃত্যুর দুই দিন আগে (১৮ জুলাই)বিকেলে মা রহিমা বেগমের সাথে মুঠো ফোনে শেষ বারের মত কথা হয়েছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ মুত্তাকিম বিল্লাহ’র। মা রহিমা বেগম ফোনে ছেলের খোঁজ খবর নিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসা করেন ঢাকার খরব কি? এ সময় মুত্তাকিম জানায়, ঢাকায় গোলাগুলি হচ্ছে, মা। আমার বুকে রাবার বুলেট লেগেছে। বুকের পাশে একটু লালচে দাগ হয়েছে। তুমি চিন্তা করো না, এতে আমার কিছু হবে না। তখন মা বলে তুমি এসব কি বলছো! রাবার বুলেট লেগেছে মানে কি? ভালো করে চিকিৎসা করাও। সাবধানে থেকো। কিন্তু পরের দিন (১৯ জুলাই) বুকে রাবার বুলেটের ক্ষত নিয়ে আমার ছেলে আবার ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে ২০ জুলাই ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় পুলিশের ছোঁড়া গুলি মুত্তাকিন বিল্লাহর মাথায় লাগলে আহত হয় সে। গুলি তার মাথায় লাগলে নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। ছেলেকে বাচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলেও সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে আমার বুক খালি করে আমার সন্তান পরপারে চলে যায়। আমার ছেলে কোরআনে হাফেজ ছিল। আমার কত সুন্দর বাবা। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো। এই বাবা ছাড়া আমি কিভাবে বাঁচবো। কথাগুলো বলেতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে শহিদ হওয়া মুক্তাকিমের মা।
সরেজমিনে মুত্তাকিমের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার বড় ভাই শিহাবুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, মুত্তাকিম অন্যায় সহ্য করতে পারতো না। এ কারনে বিবেকের তাড়নায় সে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়। মুত্তাকিম ঢাকার মিরপুর ১৪ নম্বর এলকায় ইনোভা ডায়াগস্টিক সেন্টারে চাকরি করতো। তার ডিউটি ছিল সকালের শিফটে। সকালের ডিউটি শেষ করে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিয়মিত অংশ নিত তার ভাই। আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই তার বুকে রাবার বুলেট লাগে। এ খবর পেয়ে আমি মুত্তাকিমকে ফোন দিয়ে বলি এখন আর আন্দোলনে না যেয়ে বাসায় বিশ্রাম নিতে। কিন্তু মুত্তাকিম উত্তরে বলে, জন্মেছি যখন, মৃত্যু একদিন হবেই। আন্দোলনে কত লোক গুলি খাচ্ছে। কতজন মারা যাচ্ছে। এ অন্যায় দেখে তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না। পর দিন ১৯ জুলাই মুত্তাকিম আন্দোলনে যোগ দিয়ে ছাত্রদের মিছিলে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় যায়। সেখান থেকে পুলিশের ছোড়া একটি গুলি মুত্তাকিমের মাথায় লাগে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সেখান থেকে ছাত্ররা তাকে স্থানীয় আল হেলাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তার মাথা থেকে গুলি বের করে চিকিৎসকরা। পরে অবস্থার আরো অবনতি হলে মাজার রোডের গ্লোবাল হাসপাতালে আইসিইউ’তে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২০ জুলাই ভোর রাতে মারা যায় তার ভাই হন মুত্তাকিন বিল্লাহ। ভাই হত্যার বিচার চেয়ে গত ৩১ জুলাই ঢাকা দায়রা জজ আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্বৈরাচার সরকারের অন্যায়, নির্যাতন মেনে নিতে পারেনি মুত্তাকিম। যে কারনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা সত্ত্বেও বিবেকের তাড়নায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। গত ২০ জুলাই ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্তর এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহিদ হন মুত্তাকিম। মুক্তাকিমের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরইচরা গ্রামে। তার বাবার নাম আক্কাস আলী মোল্যা। মায়ের নাম রহিমা বেগম। তিন ভাই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। মুত্তাকিমের স্ত্রীর নাম নাইমা বেগম। এই দম্পতির ৪ বছর বয়সি একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। মিরপুর টোলারবাগ এলাকায় বাসা ভাড়া করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতো মুত্তাকিম।
মোত্তাকিমের প্রতিবেশি সিরাজুল ইসলাম, পিকুল জোয়ার্দার, ইদ্রিস আলী মোল্যা, আব্দুর রহমানসহ অনেকে জানিয়েছেন, ভালো ছেলে হিসেবে এলাকায় মুত্তাকিমের সুনাম রয়েছে। সে কোরআনে হাফেজ ছিল। নিয়মিত নামাজ কালাম পড়তো। গত ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ২০ জুলাই সে শহিদ হয়। রাতেই তার লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। পুলিশ জানাজা সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত লাশ দাফন করতে বলে। পরে বাদ জোহর জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।