বাসস
  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:৩৪

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন:স্বৈরাচারের পতন না হলে আমার স্বামীর লাশ গুম করে ফেলতো

॥ মো. মঞ্জুর মোর্শেদ ॥
মুন্সিগঞ্জ, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস): বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বামী হারিয়ে দিশেহারা রিয়াজুল ফারাজির হৃদরোগী স্ত্রী রুমা বেগম। তিনি বলেছেন, পুলিশ লাশ দিতে চায়নি,ওরা আমার স্বামীর লাশ গুম করে ফেলতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনা সরকারের পতন না হলে লাশ গুম করে ফেলতো।
জেলার সদর উপজেলার উত্তর ইসলামপুর নিবাসী কাজীমউদ্দিন ফরাজির ছেলে রিয়াজুল ফরাজি পেশায় অটোরিক্সা চালক। ৪ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে নিজ বাড়ি থেকে মাত্র ২শ’ মিটার দূরে পিটিআই রাস্তায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।  
সারাদেশের মতই ৪ আগস্ট মুন্সিগঞ্জের ছাত্র-জনতা সকাল থেকে শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় বিক্ষোভ করে। উত্তাল হয়ে উঠে পুরো জেলা শহর। আওয়ামী লীগ আর পুলিশের সাথে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। আন্দোলন দমাতে পুলিশ,আওয়ামী লীগ, যুবলীগ আর ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। শুরু হয় সুপার মার্কেট এলাকায় ত্রিপক্ষের ব্যাপক সংঘর্ষ।
রুমা বেগম বাসস’কে বলেন,এলাকাবাসী খবর দেয় রিয়াজুল গুলি খেয়েছে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। দিশেহারা হয়ে অসুস্থ শরীর নিয়েই সংঘর্ষের মধ্যে হাসপাতালে ছুটে যাই। সুপার মার্কেট এলাকায় দেখি আওয়ামী লীগের লোকজন অস্ত্র লাঠি সোটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করলে পরিচয় গোপন রাখি। জানলে আমাকেও মেরে ফেলতো। হাসপাতালে গিয়ে এক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করে মর্গে গিয়ে দেখি স্বামীর লাশ পরে আছে। সেদিন সারাদিন থানা-পুলিশ দৌড়াদৌড়ি করেও হাসপাতাল থেকে স্বামীর লাশ আনতে পারিনি। আমার দুই সন্তানকে তাদের বাবার লাশ দেখাতে অনেক কান্নাকাটি করেছি। লাশ দেয়নি। শহরে গোলাগুলি চলছে, মেয়ে দু’টিও বাবার লাশ দেখতে হাসপাতালে আসতে পারছে না। সারাদিন রাত লাশের জন্য হাসপাতালে অপেক্ষা করি।  সন্তান দু’টি বাবার মুখও দেখতে পারতো না। সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট স্বামীর লাশ পাই।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উত্তর ইসলামপুরের সাইফুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পিটিআই গলির রাস্তায় রিয়াজুলকে পিটিয়ে মারাতœকভাবে আহত করে। পরে সন্ত্রাসীরা কাছ থেকে রিয়াজুলের মাথায় এবং বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।
এদিকে দুই সন্তান নিয়ে অভাবের সংসারে টানাটানিতে দিশেহারা রিয়াজুল ফরাজির স্ত্রী রুমা বেগম। দীর্ঘ দিন যাবৎ হৃদরোগে ভুগছেন তিনি। চিকিৎসক অপারেশন করার কথা বলেছেন। বড় মেয়ে রিয়া মনির বিয়ে হয়েছিলো। সংসার টিকে নাই। এখন বাপের বাড়িতেই থাকে। ছোট মেয়ে খুকু মনি পঞ্চসার মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়ে। পড়াশুনায় ভালো। স্কুলে অনেক পুরস্কারও পেয়েছে। খুকু মনির বাবার ইচ্ছা ছিল মেয়েকে অনেক পড়াশুনা করাবে।
বিভিন্ন সংগঠন ও প্রশাসন থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেলেও ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত রুমা বেগম। তিনি বলেন, ‘পরিবারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম ব্যাক্তির মৃত্যুতে এখন সংসার কিভাবে চালাবো। আর্থিক সাহায্য যা পেয়েছি, তাতে নিজের চিকিৎসা করাবো, না সন্তানের মুখে ভাত দিবো, না-কি মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালাবো?’
তিনি জানান, ঢাকা থেকে ছাত্র নেতারা এসে আর্থিক সাহায্য দিয়ে গেছে। বিএনপি, জামায়াত এবং জেলা প্রশাসক আর্থিক সাহায্য করেছে। রুমা বেগম তার পরিবারের ব্যয় নির্বাহের জন্য মেয়ের একটি চাকুরির ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।