শিরোনাম
পীরগঞ্জ, রংপুর, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস): ছবি এমনিতেই কথা বলে, ব্যাখ্যার দরকার হয় না। একটি ছবি হাজার শব্দের গাঁথুনির চেয়েও শক্তিশালী ও মূর্তমান, ছবি যত সহজে বিষয়বস্তুকে জীবন্ত করে তুলতে পারে, ভাষা তেমনভাবে পারে না। একটি ছবি অনেক কথা বলে, তেমনি অনেক ছবি একত্রিত হয়ে বহু কথা বলতে পারে। জানাতে পারে নানা ধরনের সমসাময়িক ঘটনা।
তেমনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদের সাহসী আত্মত্যাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পায় ভিন্ন মাত্রা। আর সেই আত্মত্যাগের জন্য আবু সাঈদ হয়ে ওঠেন গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক। অমরত্ব পাওয়া আবু সাঈদের জীবনের সেরা সময়কে ছবির অবয়বে ধরে রেখে আরেক ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন ফটো সাংবাদিক আদর রহমানও।
আন্দোলকালে আবু সাঈদকে নিয়ে তোলা ছবি নিয়ে আরও একটি প্রদর্শনী হলো রংপুরের পীরগঞ্জে শহিদ আবু সাঈদ স্মৃতি সংঘের তত্ত্বাবধানে জাফরপাড়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। শহিদ আবু সাঈদ ম্মৃতি সংঘের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর শেষ দিনে আজ ছিল দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়।
সকাল থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করেন আবু সাঈদের নিজ বিদ্যালয় জাফরপাড়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে । দুই দিনের এই আয়োজনে কয়েক হাজার শ্রেণী পেশার মানুষ ও শিক্ষার্থী প্রদর্শনী দেখতে আসেন।
গতকাল শনিবার বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয়ে প্রদর্শনী চলে আজ রোববার রাত পর্যন্ত। প্রদর্শনীটি ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন শহীদ আবু সাঈদের পিতা মকবুল হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন।
শিক্ষার্থী থেকে রিকশাচালক, শিশু-কিশোর থেকে বিভিন্ন পেশাজীবীরাও আগ্রহের সঙ্গে প্রদর্শনীতে আসেন। প্রদর্শণী দেখতে আসা কলেজের ছাত্রী লাভলী বেগম বলেন, বলতে চাইলে তো অনেক কিছু বলা যায়, সংক্ষেপে একটু বলতে চাই। আমাদের দেশের ক্ষমতাচ্যূত হাসিনা সরকার মানুষের প্রতি যে নির্যাতন করেছে আয়না ঘরের মাধ্যমে এরূপ চিত্র যেন আমাদের আর দেখতে না হয়। আমরা একটা সুন্দর দেশ চাই।
প্রদর্শণী দেখতে আসা ছাত্র লেমন বাবু বলেন, আবু সাঈদকে গুলি করার দৃশ্য টিভিতে দেখেছি। প্রদর্শণীতে এসে নিজের চোখে দেখলাম। তবে এ ধরনের প্রদর্শণী বাংলাদেশের সব জেলা ও উপজেলায় করা দরকার ।
প্রদর্শনী উদ্বোধনকালে শহিদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের বিচার যেনো হয়।
আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন বলেন, এই ছবিগুলো অপরাধীদের শনাক্ত করতে সহায়তা করবে এবং যারা আমার ভাইকে যেভাবে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই।
ফটো সাংবাদিক আদর রহমান বলেন, আমি ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৩’শ ছবি তুলেছি। এর মধ্যে বাছাইকৃত ৫০ টি ছবি নিয়ে প্রদর্শণী করছি। সেদিন অনেক ঝুঁকি নিয়ে ছবি গুলো তুলেছি ।
তিনি বলেন, আমরা শুধু আবু সাঈদের বুক চিতিয়ে থাকার সময় তার বুকে গুলি চালানোর ভাইরাল ছবিটি দেখেছি। কিন্তু আবু সাঈদকে গুলি করা করার আগে পুলিশ কিভাবে তাকে বেধড়ক লাঠি পেটা করেছিল, সে ছবি গুলো কেউ দেখেনি।
তিনি আরো বলেন, মুলত এই প্রদর্শনীতে আবু সাঈদের গুলি করার আগে ও পরের ছবি প্রদর্শন করা হয়েছে। যদি আবু সাঈদকে নিয়ে এক’শ বছর পরেও গবেষণা করা হয়, তাহলে হয়তো এই ছবি গুলোই যথেষ্ট হবে।