বাসস
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:৩২

চলছে না নিহত লিটনের অসুস্থ পিতার চিকিৎসা

বরগুনা, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস): বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঢাকায় গুলিতে নিহত  হয়েছেন লিটন। বরগুনার মো. লিটন মাতুব্বর গত ২০ বছর ধরে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় বসবাস করতেন। নিজ ও পরিবারের জীবিকা নির্বাহের জন্যে টাইলস মিস্ত্রীর পেশাকেই বেছে নিয়েছিলেন।
উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত মেহেরগাজী-করুণা গ্রামের তৈয়ব আলী মাতুব্বরের ছেলে লিটন (৩৫)।  
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা এখন অকূল সাগরে পড়েছে।
গত ১৮ জুলাই দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিলো। এ সময় লিটন কাজের জন্যে বাড্ডা এলাকায় সড়ক পার হয়ে একটি বাসায় যাচ্ছিলেন। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন লিটন মাতুব্বর। তাকে হারিয়ে এই দুঃসসয়ে ছয় সদস্যের পরিবারটির সঙ্গী এখন কেবলই কান্না।
স্থানীয়রা জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন লিটন মাতুব্বর। তার আয়েই সংসার চলত, চলত প্রতিবন্ধী বাবার চিকিৎসা। এখন লিটন নেই, তাই বন্ধ তার বাবার চিকিৎসা। যেখানে পরিবারেরই খরচ চলছে না, সেখানে চিকিৎসার ব্যয় বহন করাতো দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন, ভবিষ্যত দিনগুলো তাদের কেমন করে কাটবে।
বাবার অসুস্থতা, পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে নিজের বয়স ৩৫ হয়ে গেলেও বিয়ে করেননি লিটন। অবশেষে পিছুটান না রেখেই বাবাকে না জানিয়ে হঠাৎ চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
নিহত লিটন মাতুব্বরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এখনও শোকে মুহ্যমান পরিবারের লোকজন। কথা বলতে গেলেই বিলাপ করে চলেন প্রতিবন্ধী অসুস্থ বাবা তৈয়ব আলী। তাকে হারিয়ে তিনি পাগল প্রায়।
লিটন মাতুব্বরের বাবা তৈয়ব আলী বিলাপ করতে করতে বলেন, “মোরে এ্যাহন কেডা ওষুধ কিইনন্যা দেবে, মোরে না কইয়া মোর পোলাডা এই রহম মরবে তা কোন সোমায়ই ভাবি নাই।” এ সময়ে লিটনের মা কেবলই বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলেন।
লিটনের বড় ভাই বশির মাতুব্বর। কিছুতেই তিনি যেন ভাইকে ভুলতে পারছেন না।  পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা এখন অকূল সাগরে পড়েছেন। চারদিকে অন্ধকার দেখছেন।
বশির মাতুব্বর জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর লিটনকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি চিৎিসাধীন অবস্থায় মারা যান।
পরে পুলিশ তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরদিন পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করলে বাড়ি নিয়ে এসে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
বেতাগী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান খান জানান, তিনি লিটনের বাড়িতে গিয়েছিলেন। পরিবারটি খুবই অসহায়। লিটনের অসুস্থ পিতা তৈয়ব আলীর চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় মানুষদের সহযোগিতা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো।
বেতাগী উপজেলার নির্বাহি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বলেন, সরকারিভাবে সম্ভাব্য সব রকম সাহায্য করা হবে নিহত লিটনের পরিবারকে।
বরগুনায় সম্প্রতি যোগদানকারী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শফিউল আলম বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) লিটন মাতুব্বরের বাড়ি গিয়ে তার কবর জিয়ারত এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক লিটনের পরিবারের হাতে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা তুলে দেন, পাশাপাশি যে কোনো প্রয়োজনে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন।