বাসস
  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:২৯

শহিদ ইয়ামিনের নিথর দেহ পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে ফেলার দৃশ্য ভাইরাল

ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস): জোহরের নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার সময় পুলিশের গুলিতে শহিদ হন ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কম্পিউটার সাইন্স বিষয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী শাইখ আস-হা-বুল ইয়ামিন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন দমনে তখন নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছিল পুলিশ। জোহরের নামাজ পড়ে বের হয়ে বাসায় ফিরছিলেন ইয়ামিন। ঠিক তখনই গুলিবিদ্ধ হন ইয়ামিন। গুলিবিদ্ধ ইয়ামিনকে পুলিশ তাদের সাঁজোয়া যান এপিসিতে উঠায়। একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ ইয়ামিনের নিথর দেহ পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয়। আর এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই বর্বরোচিত ঘটনা দেখে দেশের মানুষ বিস্মিত ও হতবাক হয়ে যায়। 
পুলিশের বর্বর নির্মমতার শিকার গুলিবিদ্ধ ইয়ামিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
ইয়ামিনের বাবা-মা বর্তমানে সাভার ব্যাংক টাউনে বসবাস করলেও তাদের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী। 
মহিউদ্দিন ও নাসরিন সুলতানা দম্পতির একমাত্র পুত্র ইয়ামিন। অত্যন্ত মেধাবী শান্তশিষ্ট ছিল ইয়ামিন। এমআইএসটির হলে থেকেই পড়াশোনা করতো ইয়ামিন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৭ জুলাই তার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ ঘোষণা করা হয় আবাসিক হলও। ১৭ জুলাই সাভার নিজ বাসায় চলে যান ইয়ামিন। পরদিন স্থানীয় মসজিদে জোহরের নামাজ পড়তে গিয়ে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে শহিদ হন ইয়ামিন।
ইয়ামিনের মামা মো. আব্দুল্লাহ আল মুন কাদির বাসসকে বলেন, অত্যন্ত মেধাবী ও বিনয়ী ছিল ইয়ামিন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই জোহরের নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার সময় সাভার ব্যাংক টাউন এলাকায় পুলিশের নির্বিচার গুলিতে শহিদ হয় ইয়ামিন। ইয়ামিনের গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ পুলিশ তাদের সাঁজোয়া যান এপিসিতে তুলে নেওয়ার পর নির্মম ও বর্বরোচিত কায়দায় নিচে ফেলে দেয়। ইয়ামিনকে ফেলে দেয়ার সেই ভয়াবহ দৃশ্য গণমাধ্যমে দেশবাসী দেখেছে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নির্মূলে এমন নিষ্ঠুরতম আচরণে দেশের ছাত্র-জনতা তখন প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে।
তিনি বলেন, এই বর্বরোচিত ঘটনা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। নির্মম এই ঘটনার বিচার চেয়ে ২২ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বরাবর  অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।   
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহিদ শাইখ আস-হা-বুল ইয়ামিনকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বাঁধায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা যায়নি। মরদেহ নিয়ে গ্রামেও যেতে দেয়নি পুলিশ।
পুলিশের সাঁজোয়া যান এপিসি থেকে ইয়ামিনের গুলিবিদ্ধ দেহ রাস্তায় ফেলে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পুলিশ। আবার মৃত্যুর কোন সনদ না দিয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইয়ামিনের মরদেহ হস্তান্তর করে। ঢাকা ও সাভার রেঞ্জের পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ইয়ামিনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের না করতে ভয়-ভীতি দেখান। সাভার তালবাগ পারিবারিক কবরস্থানে ইয়ামিনের মরদেহ দাফন করতে চাইলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজান বাঁধা দেয়। পরে শহিদ ইয়ামিনকে সাভার ব্যাংক টাউন কবরস্থানে দাফন করা হয়।