শিরোনাম
চাঁদপুর, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস): চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার উজানি গ্রামের দেওয়ান বাড়ির মাওলানা আব্দুর রহমানের ছেলে মো.খোবাইব (২১)। বাবার সাথেই থাকতেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর পাশে কাদলার পাড় এলাকায় নিজেদের মাদ্রাসায়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকেলে যাত্রাবাড়ী ওভার ব্রীজের উত্তর পাশে হেঁটে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন খোয়াইব। ‘আন্দোলন চলাকালীন সময়ে মায়ের সাথে গল্প করে বলতেন আমার নাম কেন খোবাইব রেখেছো। এই নামতো একজন শহিদ সাহাবীর নাম। তাহলেও আমিও শহিদ হব।’ শেষ পর্যন্ত তিনি শহিদ হলেন।
সম্প্রতি খোবাইব এর পৈত্রিক বাড়িতে গেলে তার পরিবারের সদস্যদের না পেয়ে তার বাবা মাওলানা আব্দুর রহমানের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি এসব তথ্য জানান। ছেলের বিষয়ে জানতে চাইলে ৭৩ বছর বয়সী এই বাবা বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ছেলে আমার এই বছরেই দাওরাহ সম্পন্ন করেছে। আমাদের নিজস্ব মাদ্রাসাই শিক্ষার্থীদের পড়াতে শুরু করেন। আমার ৫ ছেলের মধ্যেই খোবাইব হচ্ছে সবার ছোট। পরিবারের সবাই তাকে খুবই আদর করতো। তার সকল আবদার ও নিজের মনের কথা মায়ের সাথেই বলতো।
শহিদ খোবাইব এর বাবা মাওলানা আব্দুর রহমান একজন ইসলামি চিন্তাবিদ ও বক্তা। তিনি দেশের ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুরের কচুয়া উজানি মাদ্রাসার শিক্ষা কর্মকর্তা। একই সাথে যাত্রাবাড়ী এলাকার কাদলার পাড় জামেয়া ইসলামিয়া ইব্রাহিমিয়া ইছহাকিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা এবং মোহতামিম। খোবাইবের ৬ বোন এবং ৫ভাই। ভাইদের মধ্যে সবার ছোট খোবাইব। বোনদের বিয়ে হয়েছে। ভাইরাও সকলে আলেম। বিভিন্ন স্থানে দ্বিনের খেদমতে নিয়োজিত।
খোবাইবের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে প্রধান ফটকে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। খুবই নিরিবিল বাড়ি। বাড়িতে লোকজন না থাকায় গাছের পাতা পড়ে স্তুপ হয়ে জমে আছে বিভিন্ন স্থানে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দেওয়ান বাড়ির এই পরিবারের লোকজন খুবই ধার্মিক। এই বাড়ির নারীরা কারো সাথে দেখা করেন না। পর্দা করে চলেন। তাদের বংশের সকলেই খুবই ধার্মিক। তবে এলাকার সব শ্রেণি পেশার লোকদের সাথে তাদের রয়েছে সু-সম্পর্ক। লোকজনও তাদেরকে অনেক শ্রদ্ধা করে।
খোবাইবের বাবা মাওলানা আব্দুর রহমান বাড়িতে এলে অধিকাংশ সময় স্থানীয় বাসিন্দা মো.শাহ জালালের সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চলাফেরা করেন। যে কারণে তার সাথে খোবাইব পরিবারের সম্পর্ক খুবই ভাল। অটোরিকশা চালক শাহ জালাল বলেন, খোবাইব ছোট বেলায় উজানি মাদ্রাসায় পড়েছে। আমাদের সামনেই সে বড় হয়েছে। পরে তার বাবার সাথে কাদলার পাড় মাদ্রাসায় চলে যায়। তার শহিদ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
খোবাইবের বাবা মাওলানা আব্দুর রহমান বলেন, ছেলে সম্পর্কে আমি কি বলবো। আল্লাহ তা’য়ালার ইচ্ছায় তার ডাকে সাড়া দিয়েছে। তবে তার শহিদি তামান্নার কথা মায়ের কাছে বলতো। মায়ের কাছে সব কথা বলতো আমার ছেলে।
তার শহিদ হওয়া সম্পর্কে বাসস’কে বলেন, সারাদেশে যখন ছাত্রদের আন্দোলন তখন আমরা আমাদের মাদ্রাসার গেট আটকে রাখলে শিক্ষকরা আমাকে এসে অনুরোধ করে গেট খুলে দেওয়ার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে সব শিক্ষার্থীরাই বিজয় মিছিলে যোগ দেয়। সবার অনুরোধে আমরা শিক্ষার্থীদের বিজয় মিছিলে যাওয়ার জন্য সুযোগ করে দেই। তবে সবাই যেন একসঙ্গে না যায়, আলাদা করে যায় সে জন্য শিক্ষকদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর শিক্ষর্থীরা মিছিলে যোগ দেয়। তবে খোবাইব কখন গিয়েছে আমি জানতে পারিনি। কিছু সময় পরে জানতে পেরেছি।
মাওলানা আব্দুর রহমান বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে জানতে পারলাম খোবাইব যাত্রাবাড়ী ওভার ব্রিজের উত্তর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় শরীরে গুলিবিদ্ধ হয়। তার তলপেটে গুলি লাগে। সেখানেই লুটিয়ে পড়ে। সেখান থেকে লোকজন তাকে নিয়ে যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই খোবাইব আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে শহিদ হন। আমরা সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে মাদ্রাসায় নিয়ে আসি। মাদ্রাসায় নামাজে জানাযা শেষে সেখানেই দাফন করা হয়।