শিরোনাম
॥ দেলোয়ার হোসেন ॥
মাগুরা, ০২ অক্টোবর ২০২৪ (বাসস): ‘যাচ্ছি মিছিলে যদি বেঁচে থাকি তাহলে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ’- বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়ার আগে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই কথাই বলেছিলেন সুমন। তিনি নিজেও জানতেন না, আর কোনোদিনই তার ফেরা হবে না। জানতেন না এটিই হবে তার ফেসবুকে শেষ স্ট্যাটাস।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিতে গত ৪ আগস্ট সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান মাগুরার মহম্মদপুর আদর্শ টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র সুমন(১৯)। আন্দোলনের সময় মহম্মদপুর থানার সামনে সুমনের বুকে, হাতে ও পায়ে গুলি লাগে। তিনি শহিদ হন ।
মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা কানুর রহমান ও মোছা: খাদিজা দম্পতির পুত্র সুমন। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সুমন সবার বড়। সুমনের বাবা একজন বর্গাচাষী ও দিনমজুর। হতদরিদ্র পরিবারে অভাব অনটনের সংসারে থেকেও সুমনের স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া করে চাকরি করবে। সংসারের অভাব দূর করবে। ভাইবোনদের পড়ালেখা করাবে। দেশে চাকরি না পেলে পরিবারের জন্য বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিলো সুমনের। কিন্তু ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে কুঁড়িতেই ঝরে গেলো তাজা প্রাণ। ভেঙ্গে গেলো পরিবারের স্বচ্ছলতার স্বপ্ন। ভাই-বোনদের লেখাপড়ার আশা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৪ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে মহম্মদপুর আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করে। এতে সুমন যোগ দেন। সেখানে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েকজন ছাত্রকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনতে গেলে থানার সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষে সুমনের বুকে, হাতে ও পায়ে গুলি লাগে। সুমনের বন্ধু আসাদ সুমনের পরিবারকে ফোন করে তার আহত হওয়ার খবর জানায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পথে সুমনের মৃত্যু হয়। পরে তারাই সুমনকে নিয়ে তার বাড়িতে এসে পরিবারের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করে। সেদিনই স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
শহিদ সুমনের বাবা কানুর রহমান বাসসকে বলেন, বালিদিয়া সরকারি উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পড়া শেষ করে বালিদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে সুমন। পরে মহম্মদপুর আদর্শ টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ছিল। সুমন আমাদের বলেছিল সে আন্দোলনে যাবে। কিন্তু আমরা পরিবারের সবাই তাকে আন্দোলনে যেতে বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম আমরা গরিব মানুষ, আমরা আন্দোলন বুঝি না। তোমার কোন সরকারি চাকরি হবে না। আমাদের পরের জমি বর্গা চাষ ও দিনমজুরি করেই খেতে হবে। কিন্তু বাবা-মার কথা না শুনে দেশের প্রয়োজনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে মিছিলে যোগ দেয় সুমন।
সুমনের দাদি ফুলজান নেছা আদরের নাতির শোকে মূহ্যমান। বড় নাতিকে নিয়ে তার অনেক আশা ছিলো। তিনি বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, সুমন সব সময় বলতো তার পড়ালেখা শেষ হলে আমাদের সংসারে আর কোন অভাব থাকবে না। পরিবারের সকলকে বলতো, আমরা একদিন স্বচ্ছল হবোই।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যেন পরপারে সুমনকে সুখে রাখে। সে যেন জান্নাতবাসী হয়। যারা সুমনকে হত্যা করেছে তাদের বিচার আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিলাম।’
এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় শাখার পক্ষ থেকে শহিদ সুমনের পরিবারকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।
কিন্তু এ সহায়তা অপ্রতুল। তাই সুমনের পরিবার আর্থিক দুরাবস্থা ঘুচাতে সরকারের প্রতি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে।