শিরোনাম
॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা, ২ অক্টোবর ২০২৪ (বাসস): দিনমজুর ইয়াকুব। গত ৫ আগস্ট আর সবার সাথেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়ের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। বিজয়ের আনন্দে যোগ দিতে গিয়ে এখন তার জীবনের আনন্দই মাটি হয়ে গেলো।
কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বরৈয়া গ্রামের জাফর আহমেদ ও কোহিনূর বেগম এর পুত্র ইয়াকুব হোসেন (২০)। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। বাবা মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান হওয়ায় কৃষক বাবার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পড়ালেখা ছেড়ে খুব অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হন। স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রির সাথে সামান্য বেতনে দিনমজুরি করতেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট বিকেলে এলাকার অন্যদের সাথে ছাত্র -জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের বিজয় মিছিলে অংশ নিতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদরে যান। ঐদিন বিকেলে আনন্দ মিছিলকারী ছাত্র জনতা ও সাধারণ মানুষ থানায় হামলা করলে পুলিশও পাল্টা হামলা করে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আহত ইয়াকুব হোসেন বাসসকে বলেন, সে সময় আমি থানার দক্ষিণ পাশে ছিলাম। পুলিশ ও ছাত্র-জনতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে হঠাৎ দু’টি গুলি এসে আমার দুই পায়ে লাগে । একটি গুলি বামপায়ের হাঁটুর নিচে একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। আরেকটি গুলি ডান পায়ের একপাশ ঘেঁষে হাঁটুর নিচের চামড়া ছিঁড়ে নিয়ে চলে যায়। আমি অচেতন হয়ে পড়ি। এ অবস্থায় উপস্থিত লোকজন আমাকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা শহরের কুমিল্লা পিপলস হাসপাতালে নেওয়া হয়।
দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সেখানে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও শারীরিক অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি বলে জানান আহত ইয়াকুব।
এর প্রায় তিন সপ্তাহ পর সেনাবাহিনীর একটি মেডিকেল টিম তার বাড়ি এসে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কুমিল্লা সিএমএইচ হাসপাতালে এক সপ্তাহ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা সেবা এখনো চলমান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে আরো অনেক দিন। এক্ষেত্রে স্থানীয়রা বিভিন্ন ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে সহযোগিতা করলেও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার জন্য তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছে ইয়াকুবের পরিবার।
এদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বিছানায় পড়ে থাকায় মা-বাবার পক্ষে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। অভাবের সংসারে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে প্রতিদিন ইয়াকুবের চিকিৎসায় খরচ হচ্ছে অনেক টাকা। এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা। তারপরও পরিবারের লোকজন ধৈর্য হারা হচ্ছেন না। একদিন সুস্থ হয়ে ইয়াকুব স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে এই আশায় বুক বেধে আছেন ইয়াকুবের পরিবার।
ইয়াকুব আফসোস করে বলেন, উৎসুক জনতার সাথে আনন্দ মিছিল দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আজ মরণ যন্ত্রণায় বিছানায় কাতরাচ্ছি। প্রচন্ড ব্যাথায় রাতে ঘুমাতে পারি না। আমার কারণে পরিবারের সকলের রাতের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ফলে চিকিৎসা খরচের পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য খরচ মেটাতে পরিবারকে অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
তিনি জানান, চিকিৎসা ব্যয়ে গ্রামের বিত্তবান ও যুবসমাজ এগিয়ে আসলেও তা তার পারিবারিক সমস্যা মেটাতে যথেষ্ট নয়। আমরা আজ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি। তিনি তার সুস্থতার জন্য সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।
ইয়াকুব হোসেনের পিতা জাফর আহমেদ বাসসকে বলেন, ছেলের এই অবস্থায় কোনো কূল পাচ্ছি না। সমাজের লোকেরা এগিয়ে আসায় কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে। কিন্তু সমস্যা মিটছে না।
ইয়াকুবের বড় বোন সাবরিনা বলেন, একমাত্র ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে আজ এক মাসের বেশি সময় বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। চোখের সামনে কলিজার টুকরো ভাইয়ের এমন অসহায়ত্বে বোন হিসেবে সেবা ছাড়া কিছুই করতে পারছি না।
ভাইয়ের সুস্থতার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।